২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৭:৪৭:৩৪ পূর্বাহ্ন


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৪-২০২২
কথার কথকতা


বিকেলের দিকে যখন বেরোনোর জন্য প্রস্তুত হয়েছি তখনি ফোন করলেন টাইম টিভি থেকে সালাহউদ্দিন সাহেব। উনি যখনই ফোন করেন তখনই কথা শুরু করেন ‘গুড মর্নিং’ বলে। দিবারাত্রি চব্বিশ ঘণ্টা যে সময়েই তিনি ফোন করুন না কেন শুরু হবে একই সম্ভাষণে। আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের আগে সাংবাদিক কিরন সাহেব আমাকে এ বিষয়ে বলেছিলেন- এটা সালাহউদ্দিন সাহেবের আন্তরিকতাপূর্ণ রসিকতার একটা স্টাইল। ওনার ফোন পেয়েই আমি বুঝতে পেরেছি, তিনি যথারীতি সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সংবাদ বিশ্লেষণের জন্য অনলাইনে বসার আহ্বান জানাবেন। আসলেই তাই। আমি বিনয়ের সাথে জানালাম, এক জায়গায় ইফতারের দাওয়াত নিয়েছি, তাই অংশগ্রহণ করতে পারছি না। ‘দি আদার ডে’ আর স্যরি বলে সারলাম।

দাওয়াত ছিলো, কুষ্টিয়া সমিতির ইফতার মাহফিলে, স্থান হচ্ছে জ্যাকসন হাইটে নবান্ন রেস্টুরেন্টের কনফারেন্স রুম। পরে জেনেছি এটা হচ্ছে এ নামের একাধিক সমিতির একটি। যা-ই হোক, হাতে সময় আছে দেখে ‘ড্রিম লাইটার’ অফিসে গিয়ে বসলাম। বসেই ফোন পেলাম ‘দেশ’ পত্রিকার প্রকাশক, আমাদের প্রিয় মঞ্জুর ভাইয়ের কাছ থেকে। বললেন, আমার লেখা ওনার দফতরে পৌঁছেনি। বললাম, আমি তো ভেবেছি আজ রোববার, আপনি বলছেন সোমবার, তাহলে আশা করছি রাতে ই-মেইলে পৌঁছে দেবো। কিন্তু ওদিক থেকে ফিরতে ফিরতে হয়ে গেলো অনেক রাত। বাসায় এসে হাত-মুখ ধুয়ে বসে ভাবতে থাকলাম কি নিয়ে লিখবো, বিষয় তো ঠিক করিনি!

কি নিয়ে লেখা যায়? পাঠক এখন সব কিছুতেই বিরক্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গণতন্ত্র, মানবতা, দ্রব্যমূল্য, তেলের দাম, ধর্মীয় দ্ব›দ্ব, অভিবাসী সংকট সব কিছুই এতো বেশি আলোচিত হয়েছে যে, এখন এসব বিষয়ে কেউ কিছু শুনতেই চায় না, পড়া তো দূরের কথা। প্রেমের কথা লিখলেও মানুষ বিরক্ত হয়, বলে- তোমরা কী সব প্রেমের কথা লেখো, মনে হয় একশো বছরের পুরোনো পচা প্রেম, সুবাস নাই, দুর্গন্ধ, এসব বন্ধ করো! কী মুশকিল, তাহলে কি নিয়ে লিখবো!

আসলে এসব কারণেই আমি সব সময় সাদামাটা বিষয়ের ওপর লেখার চেষ্টা করি, যাতে মানুষ হালকাভাবে নিতে পারে, মাথা ভারী না করেও একটুখানি মজা পেতে পারে। সব কিছু নিয়ে ভাববার পর ঠিক করলাম আজ ছাতা নিয়ে লিখবো, মাথার ছাতা। এক বন্ধু বললো- দেখিস, ছাতার বাড়ি খাসনে যেন!

পাঠক মহল অবশ্যই স্বীকার করবেন, ছাতার ঐতিহ্য অনেক পুরোনো অর্থাৎ ছাতা একটি ঐতিহ্যবাহী জিনিস। শরীফের ছাতা থেকে শুরু করে শংকরের ছাতা পর্যন্ত ইতিহাস একশো বছরের কম নয়। শরীফ আমলের শুধু একটা ঘটনা মনে আছে, সেটা বলবো, আরগুলো সব এ সময়ের অর্থাৎ শংকর আমলের।

আমি তখন সেভেন অথবা এইটের ছাত্র। ছেলেবেলা থেকে আমি সোজা ছেলেটা জীবন কাটাবো ক্যামনে এই চিন্তা নিয়ে আমার মাতা-পিতা খুবই ভারাক্রান্ত থাকতেন। একদিন আমাদের ব্যবহৃত একটি ছাতার এক শিক থেকে কাপড় খুলে গেলে আম্মা আমাকে ওটা সেলাই করে লাগাতে বললেন। আমি খুব সাবধানে অনেক মজবুত করে এটা লাগালাম। আম্মা দেখে বললেন, ওতো অনেক ভালোই সেলাই করছে! আব্বা রসিকতা করে বললেন, আর কিছু না পারলেও বাজারে ছাতা মেরামতের দোকান খুলতে পারবে। আম্মা হাসলেন। আব্বা তখনি আবার বললেন, কিন্তু এতো শক্ত করে লাগালে এই কাস্টমার তো আর দ্বিতীয়বার আসবে না! ব্যবসা একবারেই শেষ। ওনারা দু’জনই বোকা ছেলেটিকে ছেড়ে ওপারে চলে গেছেন। ওনাদের জন্য কিছু করার যোগ্যতা আমি কখনোই অর্জন করতে পারিনি। ওনাদের কথা আরেক দিন বলবো।

এ যুগে এসে, বাসা থেকে ছাতা নিয়ে বেরিয়ে খালি হাতে ফিরে যাবার েেত্র আমি অনন্য। এই তো সেদিন, তৌকীর সাহেবের সিনেমা নিউইয়র্কে রিলিজ করার প্রেস কনফারেন্সে জ্যামাইকা গিয়ে একটা ছাতা রেখে চলে এলাম। ব্রুকলিনে বাসার কাছাকাছি এসে মনে হলো। বাসায় এসে সারেন্ডার করলাম, জানিয়ে দিলাম, ছাতা ফেলে এসেছি, দুঃখিত! আবার ঘটলো একই ঘটনা, এ মাসের ১ তারিখে। বৃষ্টি হচ্ছিলো পিটির পিটির, ছাতা নিয়ে বেরোলাম, জ্যাকসন হাইট গেলাম। বৃষ্টি থেমে গেলো কোথায় কোথায় বসলাম? ‘দেশ’ পত্রিকায়, মুক্তধারার লাইব্রেরিতে, গ্রাফিক্স ওয়ার্ল্ডে, ড্রিম লাইটারে আর একটা রেস্টুরেন্টে। আমার হাত খালি, ছাতা কোথায় রেখে এসেছি, কিছুতেই মনে করতে পারলাম না! অনেক ভাবলাম, মনে এলোই না। অবশেষে ড্রিম লাইটার অফিসে বসে ভাবতে থাকলাম। সবুজ সাহেব গভীর ভাবনার বিষয়টি জানতে চাইলেন, বললাম। তিনি অভয় দিলেন, এতো টেনশনের কিছু নাই, একটা কিছু সমাধান তো হবেই। অবশেষে ‘বিজি ফর নাথিং’ সময়গুলো কাটিয়ে অনেক রাতে বাসায় ফিরলাম। আমার ছেলেমেয়েদের নানার মেয়ে বিলম্বের জন্য বকাঝকা করার পর জিজ্ঞেস করলেন- নিয়ে গেলে ছোট ছাতা, এটা এতো বড় হলো কি করে? আমি ভাবলাম, একটু রসিকতা করে একটা বানানো গল্প বলি। বললাম, বিধাতার দফতরে ছাতা ব্যবহারকারীদের জন্য একটা নতুন অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আপন জন্মদিনে কেউ যদি ছাতা মাথায় বাইরে যান এবং ছাতা ব্যবহারকারী একজন পুণ্যবান লোক হন, তাহলে ওই ছাতাটি বৃষ্টির পানি পড়ার সাথে সাথে বড় আকৃতি লাভ করবে।

কিন্তু লণীয় বিষয় হলো, এই কথাটি যাকে বললাম- তিনি একটুও প্রভাবিত না হয়ে প্রশ্ন করলেন- বিধাতা আপনার ছাতার জন্য একটি অধিদফতর খুলে বসেছেন, তার কি আপনাকে আয়-রোজগারের পথ দেখাবার জন্য কোনো মন্ত্রণালয় খোলার সম্ভাবনা আছে?

আপনাদের কানে কানে বলে রাখি, আমি ঠিক করেছি, আর কখনো বাসা থেকে ছাতা নিয়ে বেরোবো না। এই প্রতিজ্ঞা কতটুকু রা করা যাবে, আপনারা কি বলতে পারবেন?


শেয়ার করুন