২৮ মার্চ ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৪:১২:১৮ অপরাহ্ন


প্রক্লামেশন পেলেন শাহ-দেলোয়ার-বাবুসহ পাঁচজন
গ্রেসি ম্যানশনে বাংলাদেশিদের নতুন ইতিহাস
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২৩
গ্রেসি ম্যানশনে বাংলাদেশিদের নতুন ইতিহাস বক্তব্য রাখছেন মেয়র এরিক অ্যাডামস


এটা যেন অনেকটা স্বপ্নের মতো। একসময় বাংলাদেশিদের মধ্যে হয়তো কেউ কেউ আমন্ত্রণ পেতেন। এই আমন্ত্রণের জন্য হয়তো অন্য কারো দিকে তীর্থে কাকের মতো অপেক্ষা করতে হতো। কোনোভাবে অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করতেন। বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র তার বাসভবনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতেন। সেই অনুষ্ঠানেই বাংলাদেশিদের খুঁজে বের করতে দূরবীণ লাগতো। এই চিত্র খুব একটা আগের চিত্র নয়। একসময় মূলধারার রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশিদের বলতেন নিজেদের অধিকার আদায় করতে হলে মিছিল-মিটিংয়ে নয় আলোচনার টেবিলে থাকতে হবে। এখন বাংলাদেশিরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারেন, আমরা শুধু আলোচনার টেবিলে নেই। আমরা এখন নেতৃত্বে। নেতৃত্বে আসতে বাংলাদেশিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। বিশেষ করে গত নির্বাচনেই বাংলাদেশিরা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। প্রথম বারের মতো বাংলাদেশি কাউন্সিলম্যান এবং বিচারক নির্বাচিত হয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছেন। বাংলাদেশিদের শক্তি সম্পর্কে নিউইয়র্কের মেয়র থেকে শুরু করে সব রাজনীতিবিদই এখন জ্ঞাত। যে কারণে তারা বাংলাদেশিদের তাদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। এই প্রথমবারের মতো নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস তার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছেন বর্তমান সময়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির জনপ্রিয় এবং ডায়নামিক নেতা ফাহাদ সোলায়মানকে। ফাহাদ সোলায়মান শুধু একজন ব্যবসায়ীই নন, তিনি জেবিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং মূলধারার রাজনীতিবিদ। তার


কারিসমেটিক নেতৃত্বেই তিনি সমুজ্জ্বল। নেতৃত্বের গুণে প্রমাণ করেছেন তিনি পারেন। তার নেতৃত্বে তিনি উদ্ভাসিত। করেছেন বাংলাদেশিদের গর্বিত। প্রমাণ করেছেন বাঙালির পক্ষে সব কিছু করা সম্ভব। নতুন ইতিহাস তৈরি করা সম্ভব। তার নেতৃত্বেই প্রথমবারের মতো মেয়রের বাসভবন গ্রেসি ম্যানশনে বাংলাদেশি হেরিটেজ এবং মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রতিবন্ধকতা ছিল। সব চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে বাংলাদেশের জয়গান ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাথা উঁচু করে বলার শক্তি সাহস জুগিয়ে বলিয়েছেন, আমরাও পারি। তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন বাংলাদেশি কমিউনিটির সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। সেই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জয়গান হয়েছে, বাংলাদেশের সংস্কৃতির জয়গান হয়েছে, বীর বাঙালির লাল সবুজের পতাকা উড়েছে, গর্বে বুক ভরে গেছে। কবির ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়- তোর সব জয়ধ্বনি কর, তোরা সব জয়ধ্বনি কর। পুরিপূর্ণ অডিটোরিয়ামে কমিউনিটি সেবায় অবদান রাখার জন্য পাঁচ জন বাঙালিতে প্রক্লামেশন দেয়া হয়েছে।



অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডমস। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, সিটির উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদান অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। কমিউনিটির সেবায় আরো বেশি করে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান মেয়র। গত ২১ মার্চ মেয়রের বাসভবন ‘প্রেসি ম্যানশনে’ বাংলাদেশিদের জন্য আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে এরিক অ্যাডামস নানা ধর্ম, বর্ণ ও ভাষাভাষী মানুষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা নিউইয়র্ক সিটিকে আরো সমৃদ্ধ করতে সবকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র বলেন, আজকে এই দিনটিতে আপনাদের আমন্ত্রণ জানাতে পেরে আমি আনন্দিত। এই অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়ার জন্য মেয়র তার এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মানকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানান।



ফাহাদ সোলায়মানের নেতৃত্বাধীন অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম, নিউয়র্কের অ্যাসেম্বলিওমেন জেনিফার রাজকুমার, মেয়রের স্পেশাল অ্যাডভাইজার উইনি গ্রেকো, মেয়রের চিফ অ্যাডভাইজার ইনগ্রিন্ট লুইস, মেয়রের চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মীর বাশার, মেয়র অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তা উমায়ের হাসান বক্তব্য রাখেন।

ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, আজকে সব বাংলাদেশিদের একটি গর্বের দিন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি আজ সেটি আরো বেশি মহিমান্বিত হলো। এমন একটি অনুষ্ঠান নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটির জন্য ইতিহাস হয়ে রইলো।

মেয়রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মান বলেন, আজকের দিনটি একটি বিশেষ দিন। মেয়র এরিক এডামস বাংলাদেশিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাদেশিদের উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশিবান্ধব মেয়র আমাদের নিউইয়র্ক সিটিকে নতুন করে সাজাতে অত্যন্ত আন্তরিক।

নিউয়র্কের অ্যাসেম্বলিওমেন জেনিফার রাজকুমার বাংলাদেশিদের আনন্দঘন এই দিনে থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করে বলেন, একমাত্র বাঙালিরাই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাদের দেশ স্বাধীন করেছে।

মেয়র অফিসের সহকারী পরিচালক উমায়ের হাসান হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে বলেন, এবারই প্রথম গ্রেসি ম্যানশনে মেয়র বাংলাদেশিদের জন্য বিশেষ এই আয়োজন করলেন। অনুষ্ঠানে কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য পাঁচ জন বাংলাদেশিকে প্রক্লামেশন দিয়ে সম্মানিত করেন মেয়র এডামস। তারা হলেন শাহ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট এবং রূপসী বাংলার চেয়ারম্যান শাহ জে চৌধুরী, জ্যামাইকার বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি এবং মূলধারার রাজনীতিবিদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, প্রিমিয়াম সুপার মার্কেট এবং প্রিমিয়াম রেস্টুরেন্টের প্রেসিডেন্ট বাবু খান, রুতবা তাবাসুম, রিমা বেগম।

এই উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন। তার মধ্যে অন্যতম শাহ মাহবুব, কামরুজ্জামান বকুল, মনিকা রায় এবং সবিতা দাসের গ্রুপ। নৃত্য পরিবেশন করে প্রিয়া ডায়াস।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালন উপলক্ষে নিউইয়র্কের মেয়রের আয়োজনে এ ধরনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানএই প্রথম। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।

শেয়ার করুন