২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০২:০৯:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


দেশ গড়ার প্রত্যয়ে প্রবাসে মহান বিজয় দিবস পালন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-১২-২০২২
দেশ গড়ার প্রত্যয়ে প্রবাসে মহান বিজয় দিবস পালন প্রবাসে বিজয় দিবস পালন


দেশের ন্যায় প্রবাসেও যথাযোগ্য মর্যদায় মহান বিজয় দিবস পালন করা হয়েছে। বিজয়ের ৫১তম দিবসে প্রবাসের বিভিন্ন সংগঠন কর্মসূচি পালন করেছে। বিশেষ করে প্রবাসের অন্যতম মাদার সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি, ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশন, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এবং বিএনপির অঙ্গ সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি পালন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিলো আলোচনা সভা, প্রবাসে জন্ম নেয়া এবং বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। এই কর্মসূচির আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবংং নতুন প্রত্যয়ে তারা দেশ গড়ার আহ্বান জানান। অন্যদিকে কেউ কেউ বলেছেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। বিজয়ের শপথ হোক গণতন্ত্র উদ্ধার, দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ। 

ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাস

বাঙালি জাতির দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার জন্য যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা লড়াই এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছিলেন তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে গত ১৬ ডিসেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় ৫২তম বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়।

গৌরবময় বিজয় দিবস স্মরণে দূতাবাস দিনব্যাপী এক কর্মসূচির আয়োজন করে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান কর্তৃক সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের প্রথম পর্বের কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে রাষ্ট্রদূত দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্নারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন, এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের বাণী পাঠ করে শোনান ডেপুটি চিফ অব মিশন ফেরদৌসী শাহরিয়ার, মিনিস্টার (কর্মাস) মো. সেলিম রেজা, কাউন্সেলর (পাবলিক ডিপ্লোমেসি) আরিফা রহমান রুমা এবং কাউন্সেলর (পলিটিক্যাল-১) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

পরে জাতির অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও উন্নয়নের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে সকল শহিদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্বে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান এবং আফরিন আক্তার, ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরো, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

রাষ্ট্রদূত ইমরান তার স্বাগত বক্তব্যে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। রাষ্ট্রদূত ৩০ লাখ শহিদ এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত দুই লাখ নারীর সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

মহান বিজয় দিবসকে বাঙালি জাতির জন্য একটি গৌরবময় দিন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন ১৯৭১ সালের এইদিনে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। রাষ্ট্রদূত ইমরান জাতির পিতা ও ৩০ লাখ শহিদের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানান। 

আফরিন আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি সত্যিকার গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখে এবং আশা করে আগামী ৫০ বছরে দুদেশের মধ্যে আরো শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে দুদেশের জনগণ, সরকার ও অর্থনীতির মধ্যে, অসাধারণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। আফরিন আক্তার দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর বলেও উল্লেখ করেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বলেন, মাত্র কয়েক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে অর্থনৈতিক শক্তিতে সম্প্রসারিত হয়েছে। তিনি বলেন, এটি সত্যিই গর্ব করার মতো গল্প যে বাংলাদেশ লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে বের করে এনেছে এবং প্রজন্মের মধ্যে মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জন করবে, যা সত্যিই অসাধারণ।

অর্থনৈতিক সহযোগিতার বাইরেও আফরিন আক্তার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বিপুল সংখ্যক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিনের কর্মসূচি। অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তা ও তাদের সহধর্মিণীরা দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঔধসবং ইৎবহহধহ ঋষধহরমধহ প্রখ্যাত কবি শামসুর রাহমানের একটি কবিতা বাংলায় আবৃত্তি করেন। বাংলাদেশি-আমেরিকান সাংস্কৃতিক সংগঠন ধ্রুপদীর শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গানের সাথে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন। 

দিনব্যাপী কর্মসূচির দুই পর্বের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কাউন্সেলর শামীমা ইয়াসমিন স্মৃতি ও ফার্স্ট সেক্রেটারি মো. আতাউর রহমান। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দূতাবাসে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও ঊর্ধ্বতন কূটনৈতিকবৃন্দ, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন 

গত ১৬ ডিসেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন নিউইয়র্কে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় সম্পৃক্ত তরুণ বাংলাদেশি-আমেরিকানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রবাসী বাংলাদেশি নেতৃবৃন্দ। 

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।  আলোচনা পর্ব শুরুর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। এর পর  উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি-আমেরিকান নেতৃবৃন্দ। তারা তাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্পসমূহের বাস্তবায়নে স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

আগত অতিথিদের আলোচনা শেষে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতাসহ ১৫ আগস্টের শাহাদৎবরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সকল সদস্য, জাতীয় চারনেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহিদ ও দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ ও ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ২০২১ সালে স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য আমরা জাতিসংঘের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছি, যা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মর্যাদা ও সক্ষমতার স্বাক্ষর।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, আমরা এখন শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, বিশ্বশান্তি রক্ষা, শান্তি-বিনির্মাণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ বিষয়ক আলোচনা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ অসংখ্য বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশ নেতৃত্বশীল ভূমিকা রেখে চলেছে মর্মে উল্লেখ করেন তিনি। স্থায়ী প্রতিনিধি আরো বলেন, আমরা আজ বিশ্বের ৪১তম অর্থনীতির দেশ। আশা করা যায়, ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। কোভিড ব্যবস্থাপনা ও অব্যাহত অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বের কাছে আজ  রোল মডেল বাংলাদেশ। প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অগ্রণী ভূমিকা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করছে। নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানরা এখানকার মূলধারার রাজনীতিতে নেতৃত্বশীল ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এখানকার প্রবাসী ভাই-বোনেরা নিয়মিত রেমিট্যান্স প্রেরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী রাখতে সহায়তা করছেন। জাতির পিতা ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের মধ্যে যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, তাদের দেশের ফিরিয়ে বিচারের আওতায় আনতে মিশনের উদ্যোগে প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

আলোচনা পর্ব শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সংগীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক রথীন্দ্রনাথ রায় এবং শহীদ হাসান। নৃত্যগীতি পরিবেশন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফর্মিং আর্টসের একদল নৃত্যশিল্পী। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার আহ্বায়ক মিথুন আহমেদ এর কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে শেষ হয় সাংস্কৃতিক পর্ব।

সবশেষে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কেক কেটে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ কনস্যুলেট

জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সমস্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।  কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম  উপস্থিত অতিথিবৃন্দসহ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সকল শহিদ, ৭১-এর সকল শহিদ, জাতীয় চারনেতা ও শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। 

কনসাল জেনারেল তার বক্তব্যের শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন ত্রিশ লক্ষ শহিদ ও দুই লক্ষ নির্যাতিত  মা-বোনদের অপরিসীম আত্মত্যাগের কথা। তিনি বলেন, জাতির পিতা একটি সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন যা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। তিনি নতুন প্রজন্মের মাঝে জাতির পিতার আদর্শ ও দর্শন এবং  স্বাধীনতার ইতিহাস ও গৌরবগাথা তুলে ধরার জন্য সকলকে আহ্বান জানান। উন্মুক্ত আলোচনায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায় ও শহীদ হাসানের পরিবেশনা উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করে।  

অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সকল শহিদ সদস্য, ৭১-এর সকল শহিদ, শহিদ বুদ্ধিজীবী এবং শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।  

সান্ধ্যকালীন ২য় পর্বে বিদেশি অতিথিদের অংশগ্রহণে কনস্যুলেটে একটি রিসিপশনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে বাংলাদেশের  স্থায়ী  প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত, উপ প্রতিনিধি ড. এম মনোয়ার হোসেন, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু, মেয়র অফিসের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিশনার দিলিপ চৌহানসহ বিভিন্ন দেশের কনসাল জেনারেল ও কূটনীতিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। কমিউনিটির শিল্পীদের দ্বারা মনোজ্ঞ এক সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

ইতালিতে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত

যথাযোগ্য মর্যাদায় ইতালির রোমে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। ইতালি, সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান সকাল ৮টায় দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। 

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব আয়োজন করা হয় দূতাবাসের সম্মেলন কক্ষে যেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, প্রবাসী বাংলাদেশি ও দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা ও  কর্মচারীর উপস্থিতিতে এক মিনিট নীরবতা পালন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ, দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ এবং ‘স্বাধীনতা শব্দটি কি করে আমাদের হলো’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। 

দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ে এক বিশেষ আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সকলকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন অভিযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু এবং সকল শহিদের প্রতি তাদের গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বঙ্গবন্ধু ও শহিদদের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন। 

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধুর সম্মোহনী নেতৃত্বই ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের মূল চালিকাশক্তি। তিনি আরো বলেন যে, বঙ্গবন্ধু একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের জন্য বিশ্ব পরিম-লে ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, আজকের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক সামাজিক সূচকের সম্মানজনক অবস্থানের কারণে আমরা সবাই গর্ববোধ করি। মহান বিজয় দিবসের এই আনন্দঘন মুহূর্তে তিনি ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐক্যবদ্ধ সহাবস্থানের আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত দূতাবাসের সেবা কার্যক্রমের মান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রবাসীদের আন্তরিক সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করেন। বর্তমান সরকারের প্রবাসীবান্ধব নীতির বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি উন্নত সেবা নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে দূতাবাস কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের প্রতি আলোকপাত করেন। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবারের শহিদ সদস্যবৃন্দ এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদের বিদেহী আত্মার প্রতি মাগফিরাত কামনা করে এবং দেশের উত্তরোত্তর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

প্রথম সচিব আসিফ আনাম সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, ইতালি আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, নারী নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মীগণ, প্রবাসী বাংলাদেশিরা এবং দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন।

শেয়ার করুন