২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১০:১৫:০৯ অপরাহ্ন


এই পতন ছিলো অনিবার্য
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৫-২০২২
এই পতন ছিলো অনিবার্য


বিশ্ব গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ ১০ ধাপ পিছিয়েছে। ১৮০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২তম। গত বছর ছিল ১৫২তম। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের (আরএসএফ) এ তালিকায় দণি এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১০ ধাপ পিছিয়ে যাওয়ার কারণ অনেক। গণতন্ত্রহীন একটি দেশে গণমাধ্যম কোনোভাবেই স্বাধীন থাকতে পারে না। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে। বাংলাদেশে বর্তমান সরকার মিডিয়াকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তবে অবনতির পেছনে সবচেয়ে নেতিবাচক ভ‚মিকা রেখেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই আইনটি সাংবাদিকদের হেনস্তা, দমন ও গ্রেফতারে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে এই আইনটির অপব্যবহার হচ্ছে এবং আইনটির অপপ্রয়োগ চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ ছাড়া সাংবাদিকদের নিরাপত্তার অভাব, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে সূচকের অবনতি হয়েছে।  বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের ১০ ধাপ অবনমন দুঃখজনক বিষয়। চারটি বড়মাপের মূল সূচকের অবনতির কারণে এটি হয়েছে। প্রথমটি হলো রাজনৈতিক সূচক। প্রায় প্রতিটি সরকারের আমলেই সরকারের দলীয় কর্মীরা বা সরকারের বিভিন্ন বাহিনী গণমাধ্যমের ওপরে চড়াও হয়। এটি বর্তমান সরকারের আমলেও সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই সরকারের আমলেই সর্বাধিক মিডিয়া বন্ধ করা হয়েছে। মিডিয়াকে বন্ধ করে তার সম্পাদককে জেলে পাঠানো হয়েছে। আরেক মিডিয়ার সম্পাদককে দলীয় ক্যাডাররা তার অফিসে ঢুকে মারধর করে পুলিশে তুলে দিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন ঘটনা।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে. অর্থনৈতিক সূচক। এখানে পরোভাবে সরকারের দায় আছে।  অর্থনৈতিক সূচকে বলা হয়েছে বাংলাদেশের কিছু মানুষের অনেক টাকা হয়েছে। তারা বড় বড় ব্যবসায়ী হয়েছেন। এই ব্যবসায়ীরা গণমাধ্যমের মালিক হয়েছেন। গণমাধ্যমকে মালিকরা নিজেদের প্রভাব বিস্তার এবং মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। এই কাজটি করতে গিয়ে তারা সরকারের সঙ্গে তারা ভালো সম্পর্ক রাখেন। সূচকের অবনমনের পেছনে এটি একটি বড় কারণ। সূচকের অবনমনের তৃতীয় কারণ হচ্ছে- সামাজিক সূচকে পিছিয়ে যাওয়া। রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রথমসারির গণমাধ্যমগুলো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিয়ে বেশি নিউজ করে না। চতুর্থ কারণ হচ্ছে, আইনগত সূচকে পিছিয়ে পড়া। এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথা বলা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটা যখন করা হয়, আমরা তখন আইনটি ছিলো ত্রুটিপূর্ণ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে বিষবৃ রোপণ করা হয়েছে, সেটি এখন ফল দিতে শুরু করেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ মাসে এই আইনে প্রায় ৯০০ মামলা হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১৪ শতাংশ সাংবাদিক। তার মানে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে বেশি। পঞ্চম সূচকটি হচ্ছে নিরাপত্তাসূচক। নিরাপত্তাসূচকে বাংলাদেশ বরাবরই পিছিয়ে আছে। কারণ বাংলাদেশের সাংবাদিক হত্যা হলে বিচার হয় না। নির্যাতন হলে বিচার হয় না। বিচারহীনতার সংস্কৃতির দেশে আমরা বসবাস করি। সেই কারণে এই সূচকের অবনতি হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্তৃত্ববাদী সরকার সবসময় গণমাধ্যমকে দাবিয়ে রাখতে চায়। বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রে তারা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সেটি করা হচ্ছে। এমন ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছে যে, সাংবাদিকরাও কোনো কিছু বলতে বা লিখতে গেলে দশবার চিন্তা করেন। কারণ তাদের সামনে রয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খড়গ।

অন্যদিকে গণমাধ্যমকর্মী আইন নামে নতুন আইন তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে। এটির মধ্য দিয়ে সাংবাদিকদের যে ন্যূনতম অধিকার ছিল তার কফিনের শেষ পেরেকটি মারতে চায় সরকার। গণতন্ত্রের এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরস্পর একসঙ্গে চলে। যেখানে গণতন্ত্র নেই, সেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আসা দুরূহ।

মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ভালো করতে হলে গণতন্ত্রে ফিরে আসতে হবে। সেজন্য দরকার একটি গণতান্ত্রিক সরকার। যে সরকার জনগণের প্রত্য ভোটে নির্বাচিত হবে। জনগণের প্রতি যাদের দায়িত্ববোধ থাকবে। 

এর পাশাপাশি একশ্রেণির সাংবাদিক দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তাদের কাজই হচ্ছে সরকার যা করছে, তাকেই জি হুজুর করছে। সেই সাথে সাংবাদিকদের অনুদানের নামে ঘুষ দেয়া হয়, জমি দেয়া হচ্ছে। এগুলোর মধ্য দিয়ে সাংবাদিকদের একদিকে পুষে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে, অন্যদিকে কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের অধিকার আদায় করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দলীয় বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এক সম্পাদককে গ্রেফতার করা হলে আরেক সম্পাদক দাঁত কেলিয়ে হাসা বন্ধ করতে হবে। কারণ সবার মনে রাখা উচিত এক মাঘে শীত যায় না।

শেয়ার করুন