২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৮:১১:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


৩০ পেরোলো ১০০ দিনের কর্মসূচি কোথায়?
চ্যালেঞ্জের মুখে সরকারের প্রস্তুতি কতটুকু
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০২-২০২৪
চ্যালেঞ্জের মুখে সরকারের প্রস্তুতি কতটুকু দ্বিতীয় প্রধান সংকট জ্বালানি বিদ্যুৎ সরবরাহ


৭ জানুয়ারি ২০২৪। বহুল আলোচিত জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর ধারাবাহিক চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন করা হয়েছে, বেশ কয়েকজন নতুন মন্ত্রী এসেছেন মন্ত্রিসভায়। নানা বৈষয়িক পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিক সংকটসহ বিবিধ চ্যালেঞ্জ আছে উত্তরণের। মোকাবিলায় এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার তাগিদে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকারি দল। শুরুতেই আকাক্সিক্ষত ছিল প্রতিটি মন্ত্রণালয় ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে। ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভা কাজ শুরু করার ৩০ দিন পেরিয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো কোনো কার্যক্রম অথবা ১০০ দিনের পরিকল্পনা দৃশ্যমান নয়। অথচ নিবিড় সেচকাজ শুরু হচ্ছে, রমজান আসছে, আবহাওয়া উষ্ণ হতে শুরু করেছে। অনেকে বলে সকালের সূর্য দেখে দিন চেনা যায়। প্রত্যাশী বাংলাদেশিরা এখনো সূর্যোদয়ের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। 

বৈশ্বিক সমস্যা 

বলার আর অপেক্ষা রাখে না, করোনার সর্বগ্রাসী প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই যে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলো সেটি এখনো চলছে। এরই মাঝে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে হামাস ইসরায়েল সংঘাত এবং প্রতিক্রিয়ায় হুতি আগ্রাসনে লোহিত সাগরে জলযান চলাচলে অচল অবস্থা। এর ভীষণ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্যেও। শুধু এখানেই নয়, বাংলাদেশের জন্য নয়া সংকট সীমান্ত এলাকা জুড়ে মায়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সশস্ত্র সংঘাত। এ উত্তাপে পুড়ছে বাংলাদেশও। দুশ্চিন্তা সীমান্তে থাকা মানুষদের। ঘরবাড়ি ছেড়ে সরে আসছেন অনেকেই। অন্য একটা দেশের সংঘাত কেন আরেকটি দেশ ভোগ করবে। তটস্ত বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীসহ অন্যরাও। এ বাড়তি উৎকণ্ঠা কেন বয়ে বেড়াবে বাংলাদেশ। ফলে অচিরে সংঘাত বন্ধ না হলে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশ পরাশক্তিদের মাঝে পড়ে স্যান্ডউইচ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

অনিয়ন্ত্রিত দ্রব্যমূল্য 

বাংলাদেশের প্রধান সংকট দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। দেশে কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ সংকট নেই। লোকে বলে সরকার সমর্থিত সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করলেই বাজার মূল্য স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু প্রয়োজন লাগসই পরিকল্পনা এবং নিবিড় তদারকি। সরকারপ্রধান কিন্তু বারবার তাগিদ দিচ্ছেন। কিন্তু তার ওই নির্দেশনা অজ্ঞাত কারণে উপেক্ষিত। কারা ওই উপেক্ষা করছে, কীভাবে এতো সাহস দেখাচ্ছে সেটা ঠাহর করা যাচ্ছে না। ফলে ওই সব নির্দেশনার বিন্দুমাত্রও বাজারে এখনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ঢাকায় বিভিন্ন মহল্লায় ফেরি করে বিক্রি হয় শাক সবজি, মাছ, ফলফলাদি। কিছু অশুভ মহল চাঁদাবাজি করে মূল্য বৃদ্ধি ঘটায়। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ধরে ঢাকাসহ সারা দেশে জনপ্রতিনিধি তথা, সাংসদসহ অন্যসব জনপ্রতিনিধি এবং মেয়রদের সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। মোটকথা বাণিজ্য, খাদ্য, কৃষি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে কিভাবে দ্রব্যমূল্য আয়ত্তে রাখা যায়। 

জ্বালানি সঙ্কট 

দ্বিতীয় প্রধান সংকট জ্বালানি বিদ্যুৎ সরবরাহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আস্থা রেখেছেন তার বহুল আলোচিত উপদেষ্টা এবং প্রতিমন্ত্রীর ওপর। দেশ কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করেছে। গ্রিড, অফগ্রিড মিলিয়ে এখন দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৯ হাজার মেগাওয়াটের অধিক। অথচ প্রাথমিক জ্বালানি জোগানের সংকটে ১৪০০০-১৫০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করাই এখন মারাত্মক চ্যালেঞ্জ। বিশেষত নিজস্ব গ্যাস উৎপাদনে ঘাটতি। প্রমাণিত গ্যাসসম্পদ আশঙ্কাজনক হারে নিঃশেষ হচ্ছে। গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ভুল পরামর্শ এবং ভ্রান্ত কৌশলের কারণে মূল্যবান কয়লাসম্পদ মাটির নিচে পড়ে রয়েছে। ডলার সংকটের কারণে কয়লা, জ্বালানি তেল এবং এলএনজি আমদানি সীমিত। অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতার কারণে ২০২৬ সালের আগে বাড়তি এলএনজি সরবরাহের সুযোগ নেই। এসব কারণে জ্বালানি বিদ্যুৎ এবং খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় অবিলম্বে স্বল্প এবং মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা ঘোষণা করে বাস্তবায়ন কার্যক্রম ঘোষণা জরুরি। বৈষয়িক অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি দেশে জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট ঘনীভূত হলে সরকার মহাসংকটে পড়বে। ২০২৪-২০২৫ সাল কিন্তু জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাত নিয়ে সরকারের অগ্নিপরীক্ষা। 

পরিবেশ সংকট ও যানজটের চ্যালেঞ্জ

অপরাপর চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম মুখ্য হলো বড় শহরগুলোর যানজট নিরসন এবং পরিবেশের সংকট মোকাবিলা। ঢাকার কথাই বলা যাক। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস সড়ক কিছুটা যানজট নিরসন করলেও ঢাকা বাইপাস সড়ক নির্মিত না হওয়ায় এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেস সড়কটি ১০০ শতাংশ শেষ না হওয়ায় ঢাকার সড়কে যানজট এখনো অসহনীয়। সঙ্গে করতে হবে সড়ক ব্যবস্থাপনার অভাব। ঢাকায় অসংখ্য ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলছে, ট্রাফিক আইন নিয়মিত লঙ্ঘিত হচ্ছে। অনেকেই বলেন, রাজনৌতিক নেতা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের মালিকানার যানবাহনগুলো সড়ক আইন মানছে না। মহাখালী, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনাল এবং কাওরানবাজার পাইকারি বাজার ঢাকার বিষফোড়া হয়ে আছে। কেন গণতান্ত্রিক বলে দাবিদার সরকার জন কল্যাণে এগুলো যথাস্থানে সরাতে পারছে না? কেন মহানগরীগুলোর সড়কে শৃখলা আনতে ব্যর্থ সরকার? জনগণ সরকারের কাছে যানজটমুক্ত নগরী, মহানগরী নিশ্চিত করার দিনক্ষণসহ পরিকল্পনা দেখতে চায়। একই সঙ্গে জনগণের দায়দায়িত্ব আছে ট্রাফিক আইন মেনে চলা। উপরের বিষয়গুলো নিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত কার্যক্রম জরুরি। সড়কে শৃঙ্খলা এলে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণে আসবে। 

সবশেষ 

এমনিতেই নানা বৈষয়িক কারণে বিশ্ব এখন গভীর সংকটে। বাংলাদেশের জন্য সংকট আরো গভীর। এটা সরকারের দায়িত্বে থাকা সবারই বিশ্লেষণ করা জরুরি। নিজেরাই হোমওয়ার্ক করে এগুলোর পাশাপাশি সরকারপ্রধানকেও সহায়তা করা উচিত। সেখানে সরকার প্রধানের বিভিন্ন নির্দেশনা উপেক্ষা করে গা বাঁচিয়ে চলার অর্থ সংকট জিইয়ে রাখা। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী-সাংসদরা মিডিয়ায় বেশি কথা না বলে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অধীনে কাজ করে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ নেওয়া জরুরি। ২০২৪ ও ২০২৫ সালের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল না হলে বিপদে পড়বে সরকার, বিপদে পড়বে বাংলাদেশ। তাই প্রশ্ন রেখেছি সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা কোথায়?

শেয়ার করুন