২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০২:১৩:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


বাঙালির স্বাধীনতার মার্চ
ফকির ইলিয়াস
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৩-২০২৩
বাঙালির স্বাধীনতার মার্চ


বাঙালি জাতি জেনে গিয়েছিল, একটি সশস্ত্র যুদ্ধ ছাড়া এই দেশ স্বাধীন করা সম্ভব নয়। এর নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছিলেন যিনি, তার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন এবং সর্বাত্মক লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন।

প্রকৃতি ও গাছে গাছে ফাগুনের আগুন তখন। রাঙা মার্চ গোটা বাংলার আকাশে।

১৯৭০ সালে নির্বাচনী যুদ্ধে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসক চক্র বিজয়ী বাঙালির হাতে শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। নানা টালবাহানায় কালক্ষেপণ করতে থাকে পাকিস্তানিরা। বাঙালিকে ন্যায্য ক্ষমতা না দিয়ে হানাদার ও তাদের দোসররা গণহত্যার নীলনকশা করতে থাকে।

৭ মার্চ ১৯৭১। অবশেষে অপেক্ষার পালা ভেঙে, ধীর পদে, দৃপ্ত অঙ্গীকারাবদ্ধ প্রাণপ্রিয় বঙ্গবন্ধু হাজির হলেন জনসমুদ্রের সামনে। দুই কাঁধে গোটা দেশকে যেন সঙ্গে নিয়ে হাজির হলেন বঙ্গবন্ধু। শুরু করলেন তার আরাধ্য বক্তব্য ঠিক এভাবেইÑ‘ভায়েরা আমার আজ, দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তারা আজ তার অধিকার চায়। কি অন্যায় করেছিলাম? আপনারা নির্বাচনে গিয়ে, নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে, আওয়ামী লীগকে ভোট দ্যান, আমরা ভোট পাই। আমরা দেশের একটা শাসনতন্ত্র তৈয়ার করব। আমাদের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করব এবং এ দেশকে আমরা গড়ে তুলব। এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, ২৩ বৎসরের করুণ ইতিহাস, বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। ২৩ বৎসরের ইতিহাস মুমূর্ষু নর-নারীর আর্তনাদের ইতিহাস। বাংলার ইতিহাস, এদেশের রক্ত নিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।’

ভাষণে এমনভাবে শব্দ প্রয়োগ করেননি যাতে মনে হতে পারে তিনি সরাসরি সশস্ত্র সংগ্রামের কথা বলেছেন। ৭ মার্চের ভাষণের আরেকটি দিক হচ্ছে ভাষণটিতে একটি সুনির্দিষ্ট প্রবাহ অনুসারে উচ্চারিত হয়েছে। বক্তব্যের শুরুর দিকে পেছনের ইতিহাস, মাঝের দিকে নিপীড়ন, নির্যাতন ও অন্যায়ের কথা আর শেষের দিকে তার প্রাণপ্রিয় জনগণের প্রতি দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রয়েছে।

বক্তব্যের শেষে-‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এই বাক্যই ছিল ভাষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা শোনার জন্যেই লাখ লাখ জনতা অধীর আগ্রহে ছিলেন। সবশেষে দৃঢ়কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ বলে ভাষণটি শেষ করেছেন। একাত্তরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ এভাবেই বাংলার মানুষকে জাগিয়ে তোলে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ হাতের লাঠি নিয়েই এলাকায় এলাকায় মিছিলে যোগ দেন। যদিও তারা অনুমান করতে পারেননি, সব ভারী অস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উড়োজাহাজ ভরে ভরে ঢাকার দিকে আসছে!

শেয়ার করুন