২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ১১:৩৯:৩৭ পূর্বাহ্ন


চীন তাইওয়ান উত্তেজনা : বৈশ্বিক মেরুকরণে কোন পথে বাংলাদেশ?
চীন-ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে হাতছাড়া করতে নারাজ সরকার
ইমরান হোসাইন আনসারী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৮-২০২২
চীন-ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে হাতছাড়া করতে নারাজ সরকার


যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাওয়ানে ভ্রমণের পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের রাজনীতি। চীন কর্তৃক তাইওয়ানের জলসীমার চারপাশে ব্যাপকভিত্তিক সামরিক মহড়া উদ্বিগ্ন করে তুলেছে পুরো পৃথিবীকে। বিশেষ করে ৮ আগস্ট  চীনের সামরিক মহড়া শেষ করার কথা থাকলেও এটি চীন কর্তৃক অব্যাহত রাখার ঘোষণা বৈশ্বিক রাজনীতিতে আতঙ্কের বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছে।চীন মনে করে তাইওয়ান দ্বীপটি একটি পৃথক প্রদেশ যা কিনা বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণেই থাকা উচিত। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিংয়ের ঘোষণা- চীনের সাথে তাইওয়ানের একীভূত হবার আকাক্সক্ষা পরিপূর্ণ করা হবে।  তা সত্ত্বেও স্বশাসিত তাইওয়ান মনে করে চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সংবিধান ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতাদের দ্বারা পরিচালিত হবার কারণে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। 

রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন দখল অভিযানের পর থেকেই বিশ্বের বড় রাষ্ট্রগুলোর পাশে ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলোর জাতীয় নিরপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনার ঝড় বইছে বিশ্বরাজনীতিতে। বলা চলে এক নয়া মেরুকরণের দিকে হাঁটছে পৃথিবী। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিককেন্দ্রিক বৈদেশিক নীতি দক্ষিণ এশিয়াসহ এশিয় প্যাসিফিক অঞ্চলের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে কিনা তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। বৈশ্বিক এ নয়া মেরুকরণে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে চলছে নানাধরনের বিশ্লেষণ। 

তাইওয়ানের ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব 

দক্ষিণ পূর্ব চীনের ভূখণ্ড থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার  দূরে তাইওয়ানের দ্বীপের অবস্থান। দ্বীপটির এমন এক জায়গায় অবস্থান যেটিকে ধরে নেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের  ‘প্রথম দ্বীপ শৃঙ্খল’ হিসেবে। এটিকে বিবেচনা করা হয় মার্কিনবান্ধব একটি অঞ্চল হিসেবে, যা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন ও জাপান এগুলোকে ধরে নেয়া যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালায়েন্স রাষ্ট্র হিসেবে। সে হিসেবে চীন কর্তৃক তাইওয়ান দখল হলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ  পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরসহ গোয়াম ও হাওয়াইতে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটি সম্ভাব্য ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। 

তাইয়ানের অর্থনৈতিক গুরুত্ব 

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিচারে তাইওয়ানের অবস্থান ২১তম। মাথাপিছু জিডিপি ৩৩ হাজার ১১ ডলার। বৈশ্বিক চিপস উৎপাদনের ৬৪ শতাংশ আসে তাইয়ান থেকে। কম্পিউটার সরঞ্জামাদি, গাড়ি উৎপাদনসহ ইলেকট্রনিকসের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এ চিপস এখন অতিআবশ্যকীয় একটি উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে।তাইওয়ান চীনের মধ্যকার যদি যুদ্ধ বেঁধেই যায়, তাহলে কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ গাড়ি উৎপাদন কিছুদিনের জন্য হলেও বাধাগ্রস্ত হবে। শুধু তাই নয় বিশ্ববাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। 

তাইওয়ান কি চীনের অংশ? 

চীন-তাইওয়ান উত্তেজনার মুহূর্তে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে তাইওয়ান কি চীনের অংশবিশেষ কিংবা অঙ্গরাজ্য নাকি আলাদা একটি রাষ্ট্র। ঐতিহাসিক বিভিন্ন ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৭ শতকে দ্বীপটি প্রথম সম্পূর্ণ চীনা নিয়ন্ত্রণে আসে। তখন এটি কিং রাজবংশ দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছিল। তারপর ১৮৯৫ সালে চীন জাপােেনর কাছে যুদ্ধে হেরে দ্বীপটি জাপানের কাছে ছেড়ে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান হেরে গেলে ১৯৪৫ সালে দ্বীপটি আবারো চীন দখল করে নেয়। কিন্তু চিয়াং কাই শেকের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী সরকারি বাহিনী এবং মাও সেতুংয়ের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে চীনের মূল ভূখণ্ডে একধরনের গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।

যে যুদ্ধে কমিউনিস্টরা জয়লাভ করে এবং ১৯৪৯ সাল থেকে বেইজিংয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এমনি বাস্তবতায় চিয়াং কাই শেখ এবং জাতীয়তাবাদী দলের কিছু অংশকে নিয়ে তাইওয়ানে পালিয়ে যান, সেখানে কুওমিনতাং নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রায় কয়েক দশক ধরে সেখানে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। চীন এই ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে বলে যে, তাইওয়ান মূলত চীনের একটি প্রদেশ ছিল। কিন্তু তাইওয়ানিরা একই ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে যুক্তি দেয় যে, তারা কখনই আধুনিক চীনা রাষ্ট্রের অংশ ছিল না, যা প্রথম ১৯১১ সালে বিপ্লবের পরে গঠিত হয়েছিল। যা পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে মাওসেতুং নেতৃত্বে পুনর্গঠিত হয়েছিল।

চীন বরাবরই এবিষয়ে জোর দিয়ে বলে আসছে যে সেখানে শুধুমাত্র ‘এক চীন’ নীতিই প্রভাব বিস্তার করবে এবং সঙ্গত কারণে তাইওয়ান চীনেরই অংশ। তাই মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের চূড়ান্ত ‘একীভূতকরণ’ চায় চীন। চীন দাবি করে যে, তাইওয়ান পারস্পরিক বোঝাপড়া ১৯৯২ সালের  মতৈক্যে আবদ্ধ, যা চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) এবং কুওমিনতাং (কেএমপি)-এর মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। উল্লেখ্য, তাইওয়ানে দীর্ঘদিন শাসন করা রাজনৈতিক দল কুমিনতাং তাইওয়ানকে চীনের অংশই মনে করতো। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচনে কেএমপি পরাজয় বরণ করার পর দলের পলিসিতে পরিবর্তন দেখা যায়।

দলটি ১৯৯২ সালের সমঝোতা স্মারকটি পুনর্বিবেচনা করতে চায়। পক্ষান্তরে কেএমপির প্রতিদ্বন্দ্বী দল ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) বরাবরই ১৯৯২ সালের মতৈক্যের বিরোধী অর্থাৎ তারা তাইওয়ানকে চীনের অংশ মনে করে না। বর্তমানে শুধুমাত্র ১৩টি দেশ তাইওয়ানকে সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। দেশগুলো হচ্ছে- বেলিজি, গুয়েতেমালা, হাইতি, হন্ডুরাস, মার্সাল আইল্যান্ড,  নাউরো, পালাও, প্যারাগুয়ে, সেইন্ট কিটস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট বিনসেন্ট, ও  টুভ্যালু। পাশাপাশি ভ্যাটিকান সিটিও তাইয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাইওয়ানকে স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য বা স্বীকৃতি বোঝায় এমন কিছু না করার জন্য অন্যান্য দেশের ওপর যথেষ্ট কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে আসছে চীন। 

তাইওয়ানের জনগণ কি চায়?

চীন তাইওয়ান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে প্রশ্ন উঠেছেআসলে তাইওয়ানের জনগণ কি চায়? তারা কি স্বাধীনতা চায় নাকি চীনের সঙ্গে একীভূত হতে চান। বিভিন্ন জনমত জরিপ থেকে এটি স্পষ্ট তাইওয়ানের বেশিরভাগ মানুষ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সমর্থন করে। ন্যাশনাল চেচিং ইউনিভার্সিটি কর্তৃক পরিচালিত এক জনমত জরিপ অনুসারে, অল্পসংখ্যক মানুষ অবিলম্বে স্বাধীনতাকে সমর্থন করে। পক্ষান্তরে চীনের সাথে তাইওয়ানের একীভূতকরণকেও কমসংখ্যক মানুষ সমর্থন করে। ওই জরিপ অনুসারে, তাইওয়ানের ক্রমবর্ধমান সংখ্যক মানুষ মূল ভূখণ্ডের চেয়ে তাইওয়ানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে বেশি আবদ্ধবোধ করে। ন্যাশনাল চেচিং ইউনিভার্সিটির একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে দ্বীপের ৬২ শতাংশেরও বেশি বাসিন্দা নিজেদের একচেটিয়াভাবে তাইওয়ানি বলে মনে করেন।৩২ শতাংশ তাইওয়ানিজ এবং চীনা উভয় হিসেবে নিজেদের চিহ্নিত করেছেন। বর্তমানে ৩ শতাংশ লোক নিজেদের চীনা বলে দাবি করে, যেখানে ১৯৯৪ সালে ২৬ শতাংশ লোক নিজেদের চীনা বলে দাবি করতো। সময়ের আবর্তনে তাইওয়ানিদের মনোজাগতিক পরিবর্তন এসেছে।

চীন কি তাইওয়ান দখল করবে? 

যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর চীনের ব্যাপকভিত্তিক সামরিক মহড়ার পর  নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা হিসাব কষছেন চীন কি আদৌ তাইওয়ান দখল করে নিবে? তাইওয়ানের সাথে কি চীনের যুদ্ধ বেঁধেই যাচ্ছে?  পেন্টাগনের মত হচ্ছে আগামী ২ বছরের মধ্যে চীনের তাইওয়ান দখলের কোনো পরিকল্পনা নেই। পেন্টাগনের আন্ডার সেক্রেটারি ডিফেন্স ফর পলিসি,কলিন কাহল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ৮ আগস্ট জানিয়েছেন,এখনই তাইওয়ান দখলের পরিকল্পনা নেই চীনের। তবে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ চীনকে অভিযুক্ত করে বলেন, চীনের ব্যাপকভিত্তিক সামরিক মহড়া তাইওয়ান দখলের বার্তা বহন করে। ৯ আগস্ট দেয়া ওই বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, চীন কর্তৃক মিসাইল পরীক্ষা, সাইবার হামলা, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ তাইওয়ানের জনগণের মনোবলকে দুর্বল করবে। অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন অভিযানের সার্বিক বিষয়টি বিবেচনা করছে চীন। রাশিয়া ইউক্রেন দখলের ক্ষেত্রে যেসব ভুল করেছে তা থেকে শিক্ষা নিচ্ছে চীন এবং সেই অনুযায়ী যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করছে তারা। 

যুক্তরাষ্ট্র কি পারবে তাওয়ানকে রক্ষা করতে?

রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন অভিযানের পর বিশ্বজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে আমেরিকা কি পারবে তাইওয়ানকে রক্ষা করতে? এক্ষেত্রে অনেক নিরাপত্তাবিশ্লেষকরা মনে করেন, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র হয়তোবা তাইওয়ানকে রক্ষা করতে পারবে না, তা সত্ত্বেও চীনকে এর সামরিক ও অর্থনৈতিক চরম মাশুল গুনতে হবে। আর এর নির্দেশনা পাওয়া যায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন্ট দ্ব্যার্থহীন ভাষায় ঘোষণা দেন, চীন যদি তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ডের সাথে একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রদেশ হিসেবে দেখে, তাইওয়ানকে পুনরায় একত্রিত করতে আক্রমণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের সামরিক প্রতিরক্ষায় আসবে।

বাইডেনের এ ঘোষণার পর নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা প্রকাশ্যই প্রশ্ন তুলেছেন প্রেসিডেন্টের এ বক্তব্যে ‘কৌশলগত অস্পষ্টতা’ রয়েছে। পশ্চিমা বিশ্লেষকরা প্রেসিডেন্টএ বক্তব্যের‘স্পষ্টীকরণ’ দাবি করেছেন। পাশাপাশি তাইয়ানকে যুদ্ধে উৎসাহ দেয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র অ্যাডভাইজর  মনে করেন, তাইওয়ান হয়তো এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে,  কিন্তু এর জন্য তাইওয়ানকে তার ব্যাপকভিত্তিক অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক মূল্য দিতে হবে।আর যুক্তরাষ্ট্রকে প্যাসিফিকে  হারাতে হবে অনেক সৈন্য।

বহুমেরুর পৃথিবী

১৯৯৩ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পর দ্বিমেরু থেকে এক মেরু পৃথিবীর নেতৃত্বের আসনে আসীন হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া কর্র্তৃক ক্রাইমিয়া এবং সর্বশেষ ইউক্রেন অভিযানের পর এখন বিশ্বব্যবস্থা দ্বিমেরু নয় অনেকটা বহুমেরুকেন্দ্রিক ব্যবস্থার দিকে হাঁটছে। আর এই বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থার চালিকাশক্তি হচ্ছে কৌশলগত সংযোগ। তাইতো দেখা যায়, চীন তাইওয়ানের উত্তেজনার মধ্যেই বাংলাদেশ সফর করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

দৃশ্যত তেমন বড় ধরনের কোনো চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক সফরসূচিতে না থাকলেও আসন্ন সংকটে বাংলাদেশকে পাশে চাইছে বেইজিং সে কথার জানান দিতেই সাম্প্রতিক এ সফর। তাইতো বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন দ্ব্যার্থহীনভাবে ‘এক চীন’ নীতির পক্ষে জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং তাইওয়ানকে চীনের অংশ হিসেবেই গণমাধ্যমে বক্তব্য তুলে ধরেন। বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যমে বিষয়টি না এলেও ভারতের গণমাধ্যম প্রচার করছে,চীন-তাইয়ান সংঘাতে কোনোভাবেই যেন  বঙ্গোপসাগর যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার  করতে না পারে তার নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে। বিনিময়ে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে দেশটির পক্ষ থেকে।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফরের পরপরই মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অ্যাফেয়ার্সের সহকারীমন্ত্রী মিশেল সিসন তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশ সফর নজর কেড়েছে কূটনৈতিক মহলে। সেই সুযোগে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। যদিও এব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। একদিকে চীন, অপরদিকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র কাউকেই হাতছাড়া করতে নারাজ সরকার। বলাচলে অনেকটা সতর্কভাবে পা ফেলতে চাইছে ঢাকা। কারণ ২০১৪ ও ২০১৮ পরপর দুটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর সরকারের শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার বিষয়টিই এখন মুখ্য।

কারণ গণতান্ত্রিক সংকটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশে। উল্লেখ্য, বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর কোভিড-১৯ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও তারা ইন্দো-প্যাসিফিককেন্দ্রিক পলিসি বাস্তবায়নে বেশ তৎপর দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ‘কোয়াড-কোয়ার্ডি লেটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ’ ও ‘ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনোমিক ফ্রেমওয়ার্ক’ পুনর্গঠনের তোড়জোড় তারই একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আর এসব উদ্যোগে ছোট ছোট জাতি রাষ্ট্রগুলোকেও কাছে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই তালিকার শীর্ষে যে বাংলাদেশের অবস্থান তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এদুটো গ্রুপে যোগদান করেনি শুধুমাত্র চীনের আপত্তির কারণে। প্রকারান্তরে চীনের অর্থনৈতিক জোটে বাংলাদেশ যোগ দেবার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। কোভিড-১৯, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, সর্বোপরি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর বিশ্ব আরেকটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক তা কেউই চাইছে না। 


শেয়ার করুন