২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৬:২৭:১৭ পূর্বাহ্ন


থ্যাংকস প্রাইম মিনিস্টার
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২৩
থ্যাংকস প্রাইম মিনিস্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


প্রায় দুই মাস হতে চলল, দেশের বাজারে ব্রয়লার মুরগির দামের ঊর্ধ্বগতি থামছিলই না। রাজধানীতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হয়ে রেকর্ড গড়েছে। ব্যবসায়ীরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলছেন, সরবরাহ ব্যবস্থায় জটিলতা তৈরি হওয়ায় দাম বাড়ছে এবং বলা যায় একপ্রকার ঘোষণাই দিয়েছে বলেছে আরও বাড়বে। এছাড়া রমজান মাস পেয়ে যেনো জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়েই যাচ্ছিল। 

এমন পরিস্থিতির আগে রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমনটা বলেছিলেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম আরও চড়া হয়ে গেছে। 

বিএনপি’র ইফতার পার্টি...

এদিকে পণ্যের লাগামহীন দাম বাড়ায় যখন চরম সংকটে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার তখন বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শুরু করে ইফতার পার্টি। সরকার পতনের লক্ষ্যে আন্দোলনরত বিএনপি রোজার মাসে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয যে তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সারা দেশে অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন, সরকারের দুর্নীতির প্রচারপত্র বিলি এবং দুস্থ, অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা দেওয়াসহ বিভিন্ন গণসংযোগ কর্মসূচিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন। বলা হয় যে দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত ও মনোবল চাঙ্গা রাখতেই রোজার মাসেও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। রমজানে ইফতার মাহফিল, গণঅনশন, অবস্থান ও মানববন্ধন এবং প্রচারপত্র বিলির মতো কর্মসূচি বহাল রাখা হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কেন্দ্রীয় ও শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন বিভাগ এবং জেলায় ইফতার মাহফিলে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে বলা হয়।

অপেক্ষায় ছিল আওয়ামী লীগকে দেখা..

এদিকে অবস্থা যেমন এমন তখন জনগণের দৃষ্টি স্বভাবতই ছিল আওয়ামী লীগ কি করে? দেশের আর্থিক অবস্থা এতো খারাপ, তখন রমযানে না ইফতার পার্টিতে না আবার মহাভোজনের আয়োজনে নেমে পড়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি। সারা দেশ তো ছেয়ে যাবে এখন একের পর এক ইফতার পার্টিতে। অনেক আশঙ্কা করা হয়  দু-দলের পাশাপাশি অন্যরাও শুরু করবে দেশব্যাপী ইফতার পার্টি। তবে আশঙ্কার কারণ অবশ্যই ছিল। কারণ হু হু করে দাম বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে ইফতার পার্টি দ্রব্যমূল্য না আরো এক ধাপ উপরে নিয়ে যায়। এমন অবস্থায়তো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামতো আরো বেড়ে যাবে। কারণ মুসলিম সংখ্যাগরিস্ট এই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাতো রমজান এলেই সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।  মনে হয়ে রমজান যেনো গলা-কাটার মাস। খোঁজ নিলে দেখা যাবে বিশ্বের সব মুসলিম দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমে। কিন্তু বাংলাদেশে বেলায় অন্য পরিস্থিতি। ফলে সবার মনে আশঙ্কা ছিল যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র রমজান মাসের ইফতার পার্টি কেন্দ্র করে হবে মারাত্মক প্রতিযোগিতা। ধারণা করা হয়ে ছিল যে এই প্রতিযোগিতা হবে জনসমাগমের না। হবে কে কতটা ভালো ইফতার পার্টি করে বিগ বিগ পারসনদের ইফতার মাহফিলে টেনে আনলেন। 

সব থামিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী..

সারা দেশে ইফতার পার্টি নিয়ে যখন একটা সাজ সাজ রব উঠার এমন সময়েই একটি ঘোষণা সবার দৃষ্টি কাড়ে। তা ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইফতার মাহফিল না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর। গত ২৫ মার্চ শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সামাবেশে এ কথা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ইফতার পার্টি না করে সেই টাকা বাঁচিয়ে গরিব-অসহায় মানুষকে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

এমন আহ্বানে ব্যাপক সাড়া 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন আহবান বিশেষ করে বর্তমানে বৈশ্বিক কারণে পরিবেশ পরিস্থিতিতে এমন ঘোষণা সাধুবাদ জানিয়েছেন দেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষ। দেখা গেছে আহ্বানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ইফতার পার্টি বাতিল করে দিয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের তিনটি বাহিনী তাদের পূর্বঘোষিত ইফতার কর্মসূচি বাতিল করেছে। বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ইফতারের আয়োজন করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। ২৯ মার্চ পুলিশ স্টাফ কলেজ কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিতব্য ইফতার পার্টি বাতিল করা হয়েছে। ২৮ মার্চ বিজিবির অনুষ্ঠিতব্য ইফতার পার্টি বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।  প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ইফতার পার্টি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এসব খবর এসেছে গণমাধ্যমে। বলা হয়েছে এই তিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গরিব-অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

শেষ কথা..

দেশে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বৈশ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে বড় ধরনের ধাক্কা আসছে। সব ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ণের ফলে দেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। শহরের চেয়ে গ্রামে এ হার বৃদ্ধি পাচ্ছে বেশি মাত্রায়। এমনকি খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতিও শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। তাই বাংলাদেশের দরকার কৃচ্ছ্র সাধনের। কিন্তু সব্বাই আশঙ্কার কথা বললেও কৃচ্ছ্র সাধনের ব্যাপার মুখ খোলেননি বা নিজ উদোগ্যে কিছু করার ঘোষণা দেননি। এটা বড়ো রাজনৈতিক দল থেকেও আসেনি। সেক্ষেত্রে কৃচ্ছ্র সাধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্তকে অনেকে থ্যাংকস দিয়েছে। জোরে সোরে না হলেও এমন বিচক্ষণীয় সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকে। অবশ্য করোনার সময়ে দলীয় নেতা-কর্মী, বিত্তশালীদের অসহায় গরিবদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন এই প্রধানমন্ত্রী। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগ, সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন। অনেকে মনে করেন সঠিক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর ওপর একটা প্রতিক্রিয়া পড়তে বাধ্য। কেননা দৃ’টি বড় দলসহ আরো অনেকের ইফতার পার্টি এসময়ে বিরাট একটা ব্যায়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতো। কিন্তু এখন সেটা থেমে যাবে। যদিও ব্যাপারটা কাকতলীয়। তবুও বলতে হয় দেশের বাজারে ব্রয়লার মুরগির দামের ঊর্ধ্বগতি আকস্মিকভাবে নেমে গেছে। আরো অনেক পণ্যের দাম না নামলেও হয়ত আকাশ ছু’তে চেষ্টা করবে না। তাই অনেকে অস্পষ্ট সরে হলেও বলেছেন, থ্যাংকস প্রাইম মিনিস্টার..। 

শেয়ার করুন