২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:৫৬:৫৯ অপরাহ্ন


উকিল আব্দুস সাত্তারে বিব্রত বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০১-২০২৩
উকিল আব্দুস সাত্তারে বিব্রত বিএনপি উকিল আব্দুস সাত্তার ভূইয়া


সরকারবিরোধী আন্দোলনরত বিএনপি কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায়। দলের একজন ত্যাগী নেতার হঠাৎ পদত্যাগ কেউই ভালো চোখে দেখছে না। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূইয়া। বেশ কয়বার সংসদ সদস্যও হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সনের নির্বাচনেও অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন ও ঢাকার গোলাপবাগে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত অনুসারে সংসদ থেকে বিএনপির সংসদ সদস্যদের যে পদত্যাগের ঘোষণা দেয়া হয়, উকিল আব্দুস সাত্তার সেটাতে সাড়া দিয়ে পদত্যাগ করেন। দলীয় সিদ্ধান্তে গত ১১ ডিসেম্বর তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) এই আসনটি শূন্য ঘোষণা করেন স্পিকার। এই আসনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি  উপনির্বাচন।

কিন্তু একই আসনে নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের ঘোষণা দিলে উকিল আব্দুস সাত্তার বিএনপিকে নিয়েই খেলা শুরু করে দিয়েছেন। তিনি প্রথম পদত্যাগ করেছেন সংসদ থেকে। এরপর বিএনপি থেকেও পদত্যাগ করেছেন। বিএনপি গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ পেয়েছে তিনি উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। তখনই তাকে বহিষ্কার করা হয় এবং সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন এলাকায় তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। তার পক্ষে উপনির্বাচনের ফরম সংগ্রহের পরই তাকে ওই অবাঞ্ছিত ঘোষণা।

উকিল আব্দুস সাত্তারের বয়স ৮৩। এ বয়সে তিনি একজন সংসদ সদস্য হওয়ার কতটুকু যোগ্যতা রাখেন সেটা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। অনেকেই মনে করেন, তার ছেলে মাঈনুল হাসান তুষার তার বাবা উকিল সাত্তারকে নিয়ে খেলছেন। ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে সে এগুলো করাচ্ছেন। কিন্তু উকিল আব্দুস সাত্তার একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। তারও যথেষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি রয়েছে। তিনি নিজে থেকে এমনটা করতে পারেন না, বিশেষ করে বিএনপি যখন ১৪ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থেকে অত্যাচার নির্যাতনে শিকার। সে বিএনপি যখন একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করে আন্দোলনে নেমেছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে জড়িত প্রবীণ নেতা কেন দল থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন।

এ নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড়। এটা উকিল আব্দুস সাত্তারের একার দোষ। নাকি তিনি কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার। নাকি দলে তার অপ্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় অভিমানে এ কাজ করেছেন প্রশ্নটা সেখানেই। 

দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, উকিল আব্দুস সাত্তারের এ কাজগুলো একটা প্রতিবাদ। তিনি বিএনপিতে অনেক সিনিয়র বা প্রবীণ নেতাদের অভিমান বা ক্ষোভ রয়েছে দলের প্রতি সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই দলকে এগিয়ে নিতে সম্ভাবনাময় ত্যাগী তরুণদের ফ্রন্টলাইনে নিয়ে আসতে হয়। এটাই নিয়ম। তাই বলে ৮৩ বছর বয়সের একজন প্রবীণকে যেমন ছুড়ে ফেলে দেয়া যাবে না। তেমনি ওই প্রবীণ রাজনীতিবিদও শেষ বয়সে যেয়ে এমন কিছু করবেন না যা তার গোটা রাজনৈতিক ক্যারিয়ার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে যাবে। 

অবশ্য বেশ ক’মাস ধরেই বিএনপিতে একটা বিদ্রোহী গ্রুপের কথা বেশ শোনা গেছে। এখনো সেটা রয়েছে। দলের অনেকেই বলছেন, ক্ষমতালোভী এসব নেতারা মনে করেন, দলের শীর্ষনেতাদের একগুয়েমির জন্য তারা বঞ্চিত। দিন দিন তাদের বয়সও বেড়ে যাচ্ছে। ক্রমশই তাদেরকে দলেও অপ্রয়োজন মনে করা শুরু করে দিয়েছে বলেও তারা মনে করছেন। ফলে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে এসে আর বঞ্চিত থাকতে চান না তারা। অর্থ ক্ষমতার কাছে নিজেদের ক্যারিয়ার বিক্রি করে দিতে চান। 

যদিও বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এসব নেতাদের খুব কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে কন্ট্রোলের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবুও দীর্ঘ তিন টার্ম ক্ষমতার বাইরে থাকা, ও গত দুই জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়া দলের বড় ভুল। এটাতেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত এবং দলও ক্ষতিগ্রস্ত। এরপর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে যদি অমন বর্জন টাইপের কিছু হয়, তাহলে তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যাবে। ফলে এভাবে নিজেদের শেষটা তারা দেখতে চান না। তাই মাঝে মধ্যেই ‘নড়াচড়া’র মধ্যেই থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা নেতাদের নিয়ে দলের অভ্যন্তরে গেম খেলার সুযোগ পেলে প্রতিপক্ষরা কেন ছেড়ে দেবে। সব মিলিয়ে বিএনপি এমন একটা  বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে বিএনপি একটি সূত্র বলছে, এমন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বিএনপি মোটেও চিন্তিত না। কারণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। সেখানে প্রার্থী দেখে ভোট দেয় না মানুষ। ভোট দেয় প্রতীক ধানের শীষকে। তবে পদত্যাগের কারণ হিসেবে তার পারিবারিক সূত্রে জানিয়েছে, যেহেতু উকিল আব্দুস সাত্তার বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছেন। তাই দল ওনাকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বিভিন্ন সিদ্ধান্তে তাকে আর ডাকছেন না। কিছু জিজ্ঞেস করছেন না। দলের কর্মকা-ে মনে হচ্ছে উনার আর প্রয়োজন নেই। অনেকটা অভিমানেই তার এমন সিদ্ধান্ত। 

উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির টিকেটে দুইবার এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জোটকে আসনটি ছেড়ে দিলে টেকনোক্রেট কোটায় তিনি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। 

শেয়ার করুন