০৪ মে ২০১২, শনিবার, ০৫:৪২:৩০ পূর্বাহ্ন


মার্চ-এপ্রিল থেকে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি সম্ভব
নিরঙ্কুশ আমলা নিয়ন্ত্রণে পঙ্গুপ্রায় পেট্রোবাংলা
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০১-২০২৩
নিরঙ্কুশ আমলা নিয়ন্ত্রণে পঙ্গুপ্রায় পেট্রোবাংলা


২০১৬ থেকে ২০২৩। প্রবাস থেকে যখনি বাংলাদেশে এসেছি, প্রতিবারই বাংলাদেশের নিজস্ব প্রাথমিক জ্বালানি সম্পদ (গ্যাস, কয়লা) অনুসদ্ধান, উত্তোলন আর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাশ্রয়ীভাবে ব্যবহারের কথা বলেছি বিভিন্ন আলোচনায়। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, লিখেছি পত্র-পত্রিকায়। কেউ না শোনায় এখনো আমাকে একই কথা বলতে হচ্ছে। জ্বালানি সংকট এখন দুর্ভিক্ষ রূপ নিয়েছে। মনে হয় না, বাংলাদেশ মার্চ এপ্রিল থেকে জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করতে পারবে। তবে আপ্রাণ চেষ্টা করছের সরকারপ্রধান। সবার ভরসাস্থল তিনি। তবে এ বিষয়টা খুবই জটিল। হয়তো তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতায় প্রয়োজন মেটাবে বাংলাদেশ। কিন্তু এমন অবস্থায় তো পড়ার কথা ছিল না। যদি আগভাগ থেকে দায়িত্বরতরা তৎপর হতেন। দূরদর্শী হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতেন। অনেকেই রয়েছেন, দায়িত্ব পাওয়ার জন্য তদবির পর্যন্ত করে থাকেন। দায়িত্বপ্রাপ্তির পর গা-বাঁচিয়ে চলার নীতি গ্রহণ করেন। যে যাই বলুক না কেন, এসব লোকের এহেন কাজ, জনগণকে ভোগান্তি ফেলা ও সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার অভিপ্রায় ছাড়া আর কিছুই না! 

আবিষ্কৃত কয়লা উত্তোলন নিয়ে সরকার এখনো দ্বিধাগ্রস্ত। সরকারকে এ ব্যাপারে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ধারণা দিতে, বোঝানো যাদের দায়িত্ব তারা ব্যর্থ। প্রকৃতপক্ষে ন্যূনতম গ্যাস অনুসন্ধান বা উত্তোলন করা হয়নি জলে-স্থলে, অনেক অনেক চ্যালেঞ্জ জেনেও জ্বালানি আমদানির দিকে ঝুঁকে মারাত্মক জ্বালানি সংকটে বাংলাদেশ। নিরঙ্কুশ আমলা নিয়ন্ত্রণে পঙ্গুপ্রায় পেট্রোবাংলা। জ্বালানি আর বিদ্যুৎখাত দুটির মাঝে বিপুল বেতন বৈষম্যের কারণে মেধা আকর্ষণ করতে পারছে না পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলো। 

গ্যাস কোম্পানিগুলো মেধাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিলেও কিছুদিনের মাঝেই সব ছেড়ে চলে যাচ্ছে ওরা। কিছু কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতির সংবাদ নিয়মিত আসছে মিডিয়ায়। সরকার গ্যাস কোম্পানিগুলোর জমানো সম্পদ ব্যাংক থেকে তুলে নেয়ায় এলএনজি কেনার সামর্থ্য হারিয়েছে ওরা। গ্যাস সংকট থাকার পরেও জিটিসিএলকে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারণ করতে বাধা করে আর্থিক সংকটে কোম্পানিটি। কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনায় গ্যাস দেয়া হয়নি, বগুড়া, রাজশাহীতে দেয়া হয়েছে নামমাত্র। তবুও কোনো ভরসায় বগুড়া থেকে দিনাজপুর, রংপুর পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারণ করা হলো কে বলবে সে কথা? 

শুরু করেছিলাম অর্থনীতি নিয়ে। সরকার গর্ব করে বলে ‘দেশ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু, সাগর জয় করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।’  বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছর সময়ের মাঝেও বঙ্গোপসাগরে তেল অনুসন্ধানের জন্য ৬ কোম্পানিকে ৮ ব্লকে তেল অনুসন্ধানে নিয়োজিত করেছিলেন। ৭-৯ বছর আগেই সাগর সীমা নির্ধারণের পরেও সাগর থেকে কিছুই পেলো না বাংলাদেশ। পেট্রোবাংলায় জানলাম কর্তা আসেন, যান। কাজের কাজ কিছুই হয় না। ৬ বছর চেষ্টার পর মূলত ক্লায়েন্ট শুভ সবে শুরু হয়েছে। সাগরে গ্যাস-তেল অনুসন্ধান কবে শুরু হবে দেখার আশায় আশায় দিন গুনছি। শুনেছি কন্টিনেন্টাল সেলফ অঞ্চলে বিশাল মৎস্য ভা-ার আছে। কতটুকু বাংলাদেশ আহরণ করছে? অফশোর উইন্ড নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে, গ্যাস হাইড্রেট নিয়ে কাজ করা যায়। কিছু কি হচ্ছে?

মোদ্দাকথা, ‘যার কাজ তারই সাজে অন্য লোকের লাঠি বাজে।’ খনার বচনটি মেনে না নেয়া হলে কিছুই হবে না। বাংলাদেশকে তীব্র জ্বালানি সংকট থেকে বাঁচতে হলে জ্বালানি সেক্টরের খোল নলচে পাল্টে ফেলতে হবে। কিন্তু সেটা কখন হবে সে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছি।

শেয়ার করুন