২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১১:২৮:৪৬ পূর্বাহ্ন


হঠাৎ তৎপর জ্বালানি সেক্টর কিন্তু কেন?
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০২-২০২৪
হঠাৎ তৎপর জ্বালানি সেক্টর কিন্তু কেন? বিদ্যুৎ নিয়ে আলোচনা


নিবিড় সেচ মৌসুম, রোজা এবং আসন্ন গ্রীষ্মকালে সবাই যখন জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তায়, তখন হঠাৎ নিজেদের গ্যাস আহরণ নিয়ে অতিশয় তৎপর হয়ে উঠেছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। দীর্ঘ ১৫ বছর ধারাবাহিক তিন টার্মে আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের গ্যাসসম্পদ আহরণ এবং উন্নয়নে নিদারুণ ব্যর্থ হয়েছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। আর ভুল পরামর্শে মূল্যবান কয়লাসম্পদ উন্নয়নে এখনো দ্বিধাগ্রস্ত আছে। স্বয়ং জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী (২০১৪ থেকে ১০ বছর মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে) সম্প্রতি পেট্রোবাংলার একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পেট্রোবাংলার ব্যর্থতার জন্য কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন। পেট্রোবাংলার সাফল্য বা ব্যর্থতা যাই থাকুক, তার দায়দায়িত্ব অবশ্যই জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ওপর বর্তায়। 

এটা আর জানতে বাকি নেই কারোই যে, পেট্রোবাংলা এবং এর আয়ত্তাধীন কোম্পানিসমূহ এখন একান্তভাবে আমলানির্ভর। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন মন্ত্রণালয় বা স্বয়ং মন্ত্রীর অবগতির বাইরে হয়নি। ২০০৯-২০১৪ একমাত্র ডক্টর হোসেন মানসুর ছাড়া সব চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে। সব কোম্পানির পরিচালনা পরিষদে মূলত জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রাধান্য। কেন ২০০৯-২০২৪ জলে-স্থলে, গ্যাস-তেল অনুসন্ধান স্থবির থেকেছে, কেন কয়লা উত্তোলন এখনো যদি, অক্টোপাস বাঁধনে বাঁধা সেই প্রশ্নের জবাব জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়াই সংগত। 

পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলোর তহবিল এখন শূন্য। এমনকি গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে বাপেক্সের জন্য সংগৃহীত গ্যাস উন্নয়ন ফান্ডের টাকাও তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত প্রস্তাবে বাপেক্সের কারিগরি এবং ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা না বাড়িয়ে তাদের ওপর অবাস্তব খনন পরিকল্পনা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পরও নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী সফল হয়েছে। কোনো বাছবিচার না করে স্থলভাবে অনুসন্ধানের সম্পূর্ণ দায়িত্ব বাপেক্সের ওপর অর্পণ করা আত্মঘাতী হয়েছে। কঠিন চ্যালেঞ্জ জেনেও নিজেদের জ্বালানি সম্পদ আহরণ এবং ব্যবহার উপেক্ষা করে কিছু চিহ্নিত ব্যাবসায়ীকে সুবিধা দেয়ার জন্য এলএনজি আমদানির দিকে ধাবিত হয়েছে মন্ত্রণালয়। সেখানেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এফেসারু এবং ল্যান্ড বেসড টার্মিনাল স্থাপনের ব্যর্থ কার্যক্রম নিয়ে ২০১০ -২০২৪ প্রচেষ্টায় সবে মাত্র ২টি এফেসারু স্থাপন সম্ভব হয়েছে। মাতারবাড়িতে ল্যান্ড বেসড টারমিনাল নির্মাণ বছরের পর বছর ঝুলে আছে। ফলশ্রুতিতে জ্বালানি সংকট এবং গ্যাস সংকটের কারণে আসন্ন গ্রীষ্মকালে তীব্র বিদ্যুৎ সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এগুলোর দায় দায়িত্ব পেট্রোবাংলার মত মন্ত্রণালয়ের উপর সমভাবে বর্তায়। 

স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা কিন্তু দীর্ঘ দিন বলে আসছে দেশের গ্যাস সম্পদ, জ্বালানি সম্পদ আহরণ এবং ব্যবহারকে প্রাধান্য দিতে। অবজ্ঞা করেছে মন্ত্রণালয়। গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা ছাড়াই বিপুল বিনিয়োগ করে পঙ্গু বানানো হয়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানিকে। সরকারের ব্যর্থতার কারণে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোতে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার অসহনীয় পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের সকল গ্যাস গ্রাহককে মিটারিংয়ের আওতায় আনা যায়নি। গ্যাস বিতরণ লাইনগুলো অনিরাপদ হয়ে যাওয়ায় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যান মালের ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। ভাবতে পারেন, অবৈধ গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগের কারণে রোজার সময় মসজিদে ২৯ জন মুসল্লি পুড়ে মারা গেছেন। এগুলোর দায় দায়িত্ব কি শুধুমাত্র গ্যাস কোম্পানির? যদি প্রশ্ন করা হয় কেন দীর্ঘ দিনেও সাগরে গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া হলো না? কি জবাব মিলবে ব্যর্থতা কাদের? 

পেট্রোবাংলার কাছে প্রচুর তথ্য-উপাত্ত আছে। এগুলো ব্যবহার করে ব্যবস্থা যথাসময়ে গৃহীত হলে স্থলভাগে ইতিমধ্যে ২-৩ টিসিএফ গ্যাস যোগ হত। উদ্যোগগুলো কোন অজানা অশুভ মহলের ইঙ্গিতে থিম গাছে। ডলার সংকট জেনেও এখন চলছে এলএনজি আমদানির তোড় জোড়। নিজেদের গ্যাস কয়লা মাটির নিচে রেখে এখন ভারত থেকে পাইপ লাইনে আর এলএনজি আসবে। হয়নি ১৫ বছরে এখন ছয় বছরে নাকি ১০০ কূপ খনন করা হবে। 

এ ক্ষেত্রে পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলোকে খুব একটা দোষ দেয়া যায় না। গত ১৫ বছরে জ্বালানি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উন্নয়নে পেট্রোবাংলার সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ হয়েছে। পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হয় নি। অনেক সিদ্বান্ত অশুভ মহলের স্বার্থে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। গ্যাস সংকট জেনেও কেন মেঘনাঘাটে তিনটি বড় গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করা হলো? কেন সেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় পাইপ লাইন যথা সময়ে নির্মাণ করা হলো না? 

দীর্ঘ দিন ধরে দেশের বিশেষজ্ঞরা গ্যাস সংকট জ্বালানি সংকট বিষয়ে সতর্ক করে আসছে। কেন অবজ্ঞা করা হয়েছে? প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার অধিকার আছে আপামর জনসাধারণের। কারণ জ্বালানি সংকটে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাবে। দেশের শিল্প কারখানাগুলো বিপদে পড়বে। এমতাবস্তায় কর্তৃপক্ষের উচিত উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে না চাপিয়ে সবাইকে নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করা। জ্বালানি বিদ্যুৎ খাত একান্ত ভাবে কারিগরি ঘনিষ্ট। এখানে অন্যদের করার কিছু নেই। এই বোধোদয় সরকারের হলে মঙ্গল। যে তৎপরতা এখন দেখা যাচ্ছে সেটি অন্তত ৫ বছর আগে দেখানো হলে পরিস্থিতি এতো নাজুক হতো বলে মনে হয় না।

শেয়ার করুন