২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৮:০৬:০০ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশ ভারত ওয়ানডে সিরিজ
হাইভোল্টেজ ম্যাচে ভারতকে হারাল বাংলাদেশ
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১২-২০২২
হাইভোল্টেজ ম্যাচে ভারতকে হারাল বাংলাদেশ জয় সুচক রানটা শেষ করে মেহেদি হাসান মিরাজের এমন উচ্ছাস। দেখছেন বিরাট কোহলি/ছবি সংগৃহীত


বাংলাদেশে গভীর রাতে কান পাতলে শোনা যাবে কখনও ব্রাজিল,কখনো আর্জেন্টাইন সাপোর্টারদের গোল উৎসব। মিছিলও হয় পাড়া মহল্লার গলিতে। বিশ্বকাপ চলাকালে ব্রাজিল আর্জেন্টিনা সহ পছন্দের দলের জার্সী গায়ে জড়ানো বা বাড়ীর ছাদে ওই দেশের পতাকা উড়িয়ে জানান দেয়া , তারা কোন দলের সপোর্টার। রাস্তাঘাট, চায়ের দোকানে বাকযুদ্ধ তো প্রতিনিয়ত। কাতার ফিফা বিশ্বকাপের এমন ঢামাডোলে যখন মত্ত বাংলাদেশ তথা গোটা ফুটবল বিশ্ব। বিশ্বসেরা ফুটবল দলের বিশ্বসেরা পারফরমেন্স প্রদর্শনী নিয়ে যখন ব্যস্ত সবাই। এরই মধ্যে ঢাকায় এসেছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। বাংলাদেশের সঙ্গে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের পাশাপাশি দুই টেষ্ট। 

ক্রিকেট মানেই বাংলাদেশের অণ্য এক উম্মাদনা। সেটা ওয়ানডে ম্যাচ হলে তো কথাই নেই। তবে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ বরাবরই একটু অণ্যরকম। সর্বশেষ এ দুইয়ের সাক্ষাত অ্যাডিলেডে। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে আরো দেরী করেই নামার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের চাপে বাংলাদেশকে আগেই নেমে যেতে হয়। যার সুফলটা পুরাই নেয় ভারত। জিতে যায় তারা ম্যাচ। কিন্তু অমন এক কন্ডিশনে জিম্বাবুয়েকে মাঠেই নামানো যায়নি ওই টি২০ বিশ্বকাপে। বাংলাদেশ এক পয়েন্ট পেয়ে গেলে উঠে যেত পরের রাউন্ডে। কিন্তু ভারত বাধা। বাংলাদেশের মানুষ সেদিন ছিল চরম নাখোশ। ভারতের আচরণ নিয়ে সমালোচনাও হয় বর্হিবিশ্বে। 

সে ভারতকে আজ রোববার পেয়েছিল বাংলাদেশ, মিরপুর শেরেবাংলায় প্রথম ওয়ানডেতে। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে জিতে যায় ম্যাচ এক উইকেটে। লো’স্কোরিং ম্যাচে উত্তেজনা কখনও বেশীই হয়। তবে এ ম্যাচ হয়ে যায় রীতিমত হাইভোল্টেজের। ভারত, বাংলাদেশের দর্শকরা সম্ভবত ফুটবল রেখে ক্রিকেট ম্যাচের ভাইরাসে কাঁপছিল।    


সাকিবের অণ্যতম সেরা ইনিংস। ৫ উইকেট নেন ৩৬ রানে। এমন অর্জনের পর অণ্যরকম সেলিব্রেশন তার/ছবি সংগৃহীত 


প্রথম ব্যাটিং করতে নামা ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আটকে দেয়া হয় ২০০ রানের আগেই, ১৮৬ রানে। সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত বোলিং পারফরমেন্স সাথে এবাদতেরও দুর্দান্ত পারফরমেন্স। ব্যাটিংয়ে খেই হারিয়ে ফেলে যেন ভারতের ব্যাটিং লাইন। বিরাট কোহলি, রুহিত শর্মা, শেখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল প্রমুখ অভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইনআপ নিয়েও পারেনি তারা। লোকেশ রাহুলের ৭৩ রানের ইনিংসের উপর ভর করে ওই রান করেছিল তারা। 

সাকিব নেন ৫ উইকেট ৩৬ রান দিয়ে। এবাদত নিয়েছেন চারটি, ৪৭ রানে। বাকী উইকেট নিয়েছিলেন মিরাজ। 

এরপর খেলতে নেমে প্রত্যাশা ছিল সহজেই জিতে যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু ১৮৭ রানের টার্গেটে খেলতে নামা বাংলাদেশ সহজম্যাচটাই করে ফেলে কঠিন। যা রীতিমত হাইভোল্টেজে রুপ নেয়। কারন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সুচনা থেকেই রীতিমত উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। লিটন, শান্ত, বিজয়, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সবাই ব্যর্থ। এক সময় দলের রান দাড়ায় ১৩৬/৯। শেষ উইকেট জুটিতে মেহেদি হাসান মিরাজ ও মুস্তাফিজ। এরা আর কতদুর যাবেন। শুধু উইকেট পতনের অপেক্ষা। অনেক ভারতীয় হয়তো জয় নিশ্চিত ভেবে চলেও গেছেন। কিন্তু ক্রিকেট ম্যাচ তো এমনই। অনিশ্চয়তার মাঝেও দেখা দেয় আশার আলো। 

মিরাজ ও মুস্তাফিজ দারুন বোঝাপড়ার মাধ্যমে এগুতে থাকে। কারন অনেক ওভার তখনও বাকী। প্রয়োজন শুধু উইকেটে টিকে থেকে সুযোগ বুঝে শট খেলে রান করে যাওয়া। সেটাই করেছেন এ দুই। শেষ পর্যন্ত এরা খেলেন ৫১ রানের অপরাজিত এক পার্টনারশীপ। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে চেজিংয়ে রেকর্ড। শুধু বাংলাদেশের রেকর্ডই নয়। ক্রিকেট বিশ্বে  মাইলফলক চতুর্থ সেরা। এর আগে ওয়েস্টইন্ডিজের মারে ও রবার্ট ১৯৭৫ সনে ৬৪ রানের, ২০১৪ সনে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাককাই ও ফকনার ৫৭, ২০০৭ এ কেনিয়ার থমাস ওদায়ো ও ভারাইয়ার হিরেন অশোকের ৫৫ রানের অপরাজিত পার্টনারশীপের পর মিরাজ ও মুস্তাফিজের এ রেকর্ড। 

মিরাজ গোটা ইনিংসটা নিজের মত করে মুস্তাফিজকে তার প্লান অনুসারে খেলিয়ে জয়টা তুলে নেন ভারতের বিপক্ষে। ভারতীয় খেলোয়াড়দের এমন জয় হাতছাড়াতে হতাশায় পরে যাওয়ার মত অবস্থা। এমনিতেই এত অল্প রান করে কেউ জয়ের আশা করে না। ভারতও ভাবেনি। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও ব্যর্থ হলে তাদের জন্য আশা জেগেছিল। কিন্তু তা শেষ করে দেন এ দুই ব্যাটসম্যান। মিরাজ ম্যাচ সেরা এ ইনিংসে করেন ৩৯ বলে ৩৮ রান। যার মধ্যে রয়েছে দুই ছক্কা ও চারটি চারের মার। মুস্তাফিজ ১১ বল খেলে করেন দশ রান। ফলে চার ওভার হাতে রেখেই জয়ের মার্কে পৌছায় বাংলাদেশ। এতে সিরিজে এগিয়ে গেল তারা ১-০ তে। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

ভারত ১৮৬/১০ (৪১.২ ওভার) লোকেশ রাহুল ৭৬, সাকিব ৫/৩৬, এবাদত ৪/৪৭। 

বাংলাদেশ : ১৮৭/৯ (৪৬ ওভার), লিটন ৪১, সাকিব ২৯, মিরাজ ৩৮ অপ, মুস্তাফিজ ১০ অপ. সিরাজ ৩/৩২।

ফল: বাংলাদেশ ১ উইকেটে জয়ী।  ম্যান অব দ্যা ম্যাচ : মেহেদি হাসান মিরাজ । 

শেয়ার করুন