১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ০৯:৫১:২২ পূর্বাহ্ন


রমজানে জাকাত ও ফিতরা আদায়
মো. শাহজাহান কবীর
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৪-২০২৩
রমজানে জাকাত ও ফিতরা আদায়


রমজান ফার্সি শব্দ। অর্থ হচ্ছে– জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া। অর্থাৎ যে ব্যক্তি রমজানের হক আদায় করে রোজা রাখে; আল্লাহতায়ালা তার গুনাহকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেন। এ মাসেই অধিকাংশ জাকাত আদায় হয় আর সাদকাতুল ফিতর গরিবদের ঈদুল ফিতরের আগেই দিতে হয়।

জাকাত ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলে এবং এক বছর অতিক্রম করলে সম্পদশালীর ওপর জাকাত আদায় করা ফরজ। আল্লাহতায়ালা কোরআন কারিমে জাকাতের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য বহু জায়গায় ইরশাদ করেছেন- ‘আর তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত আদায় করো এবং রুকু কর রুকুকারীদের সঙ্গে।’ (সূরা বাকারা : ৪৩)।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে জাকাত বণ্টনের জন্য ৮টি খাতের উল্লেখ করে সুরা আত-তাওবার ৬০ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘সাদাকাহ হচ্ছে শুধু গরিব এবং অভাবগ্রস্তদের। আর এই সাদাকাহ আদায়ের জন্য নিযুক্ত কর্মচারিদের এবং দীনের ব্যাপারে যাদের মন রক্ষা করতে অভিপ্রায় হয় তাদের, আর গোলামদের আজাদ করার কাজে এবং কর্জদারদের কর্জ পরিশোধে, আর জিহাদে, আর মুসাফিরদের সাহায্যার্থে। এ হুকুম আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অতি প্রজ্ঞাময়।’

হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, ‘হে মুয়াজ! তুমি জানিয়ে দাও– আল্লাহ তাদের সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ করেছেন, যা ধনী ব্যক্তিদের থেকে নিয়ে দরিদ্র ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)। রমজানে যে কোনো আমল করলে তার সওয়াব ৭০ গুণ বেড়ে যায়। তাই রমজান মাসে জাকাত আদায়ের ব্যাপারে প্রায় সবাই তৎপর থাকেন।

ফিতরাকে ইসলামী শরিয়তে ‘জাকাতুল ফিতর’ এবং ‘সাদাকাতুল ফিতর’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ ফিতরের জাকাত বা ফিতরের সাদকা। ফিতর বা ফাতুর বলা হয় সেই আহারকে, যা দ্বারা রোজাদার রোজা ভঙ্গ করে। হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) জাকাতুল ফিতর হিসেবে মুসলমানদের ছোট-বড়, পুরুষ-নারী এবং স্বাধীন-দাস প্রত্যেকের ওপর এক ছা খেজুর অথবা এক ছা যব ফরজ করেছেন এবং তিনি ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে লোকদের বের হওয়ার আগেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্য হাদিসে বর্ণিত, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমরা এক ছা খাদ্য অথবা এক ছা যব অথবা এক ছা খেজুর অথবা এক ছা পনির অথবা এক ছা কিশমিশ থেকে জাকাতুল ফিতর বের করতাম।

অত্র হাদিসে জাকাতুল ফিতর প্রদানের ব্যাপারে বিভিন্ন খাদ্যশস্যের নামসহ সাধারণভাবে ‘ত্বা আম’ বা খাদ্যের কথা এসেছে, যা দ্বারা পৃথিবীর ও সব খাদ্যশস্যকে বোঝানো হয়েছে, যা মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।’ টাকা দ্বারা ফিতরা আদায়ের রীতি ইসলামের সোনালি যুগে ছিল না। রাসুলে পাক (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম টাকা দ্বারা ফিতরা আদায় করেছেন মর্মে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।

রাসুলে পাক (সা.)-এর যুগে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রাবাজারে চালু থাকা সত্ত্বেও তিনি খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করেছেন, আদায় করতে বলেছেন এবং বিভিন্ন শস্যের কথা হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং, খাদ্যশস্য দ্বারা ফিতরা আদায় করাই ইসলামী শরিয়তের বিধান। ব্যক্তি নিজে যা খায়, তা থেকেই ফিতরা আদায়ের মধ্যে অধিক মহব্বত নিহিত। যে ব্যক্তি ৫০ টাকা কেজি দরের চাল খায়, সে উক্ত মানের চাল এক ছা ফিতরা দেবে। আর যে ব্যক্তি ৬০ টাকা বা ৭০ টাকা কেজি দরের চাল খায়, সে ওই মানের চাল এক ছা ফিতরা দেবে।

হাদিসে বর্ণিত, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলে পাক (সা.) সালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। রমজান শেষে শাওয়ালের চাঁদ ওঠার পর থেকে ঈদের মাঠে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ফিতরা আদায়ের অতি উত্তম সময়।

ড. মো. শাহজাহান কবীর: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

শেয়ার করুন