যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডিতে) ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পেয়েছেন আরেক বাংলাদেশি। পটুয়াখালী জেলার কৃতীসন্তান এ কে এম সফিউল আলম প্রিন্স গত ২৮ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে পদোন্নতির সনদ গ্রহণ করেন। পুলিশ বিভাগে বিভিন্ন পদে অর্ধশতাধিক পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পান তিনি। শুক্রবার সকাল ১০টায় নিউইয়র্কের কুইন্সে অবস্থিত পুলিশ একাডেমিতে জমকালো এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তার হাতে পদোন্নতির সনদ তুলে দেন বর্তমান পুলিশ কমিশনার কিচেন্ট সিওয়েল।
আলম প্রিন্স বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের (বাপার) সাধারণ সম্পাদক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ক্যাপ্টেন সফিউল আলমের পদোন্নতিতে অভিনন্দন জানান সংগঠনটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন কারাম চৌধুরী, সহপ্রতিষ্ঠাতা লেফট্যানেন্ট কমান্ডিং ডিটেকটিভ শামসুল হকসহ বাপার অন্যান্য সদস্যরা।
বাপার অন্যতম সদস্য এস এম হক জানান, ক্যাপ্টেন সফিউল আলম পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া সদরের অ্যাডভোকেট এ কে এম শাহ আলম ও জাহানারা আলমের কনিষ্ঠ পুত্র। ছাত্রজীবন থেকেই সফিউল আলম অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি কলাপাড়া উপজেলার খেপুপাড়া সরকারি হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং মোজাহের উদ্দীন বিশ্বাস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে ২০০০ সালে আমেরিকায় পাড়ি জমান।
এদিকে ২০০৬ সালে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে যোগ দেওয়ার আগে তিনি কুইন্স বরো কমিউনিটি কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্ট এবং নিউইয়র্ক সিটির জন জে কলেজ থেকে ক্রিমিনাল জাস্টিসের ওপর দ্বিতীয় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১২ সালে পুলিশের সার্জেন্ট হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে ম্যানহাটনের পি এস এ ফাইভে কর্মরত ছিলেন। এরপর ২০১৭ সালে লেফটেট্যান্ট পদে পদোন্নতি পেয়ে ৭১ প্রিসিঙ্কটের ইন্টিগ্রিটি কন্ট্্েরাল অফিসার (আইসিও) হিসেবে যোগদান করেন। ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পাওয়ার আগে তিনি পুলিশের ট্রান্সপোর্টেশন বরোতে আইসিও হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুই ছেলে জোয়েব, জেইন ও সহধর্মিণী তানজিনা ইসলাম শর্মিকে নিয়ে লং আইল্যান্ডে বসবাস করেন আলম প্রিন্স।
তার এই সাফল্যের পিছনে বাবা-মা, সহধর্মিণী ও ভাই-বোনদের অবদানের পাশাপাশি বন্ধুবান্ধদের অনুপ্রেরণার কথা জানান। এদিকে এনওয়াইপিডিতে তার এই অনন্য কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন (বাপা), এনওয়াইপিডি মুসলিম অফিসার সোসাইটি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ইউএসএ ইনকসহ কমিউনিটির সর্বস্তরের লোকজন।
বাপার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সার্জেন্ট এরশাদ সিদ্দিকী জানান, ক্যাপ্টেনের মতো পুলিশ বিভাগের শীর্ষপদগুলোর নেতৃত্বে বাংলাদেশিরা আসতে পারলে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষ লাভবান হবেন। এনওয়াইপিডির বিভিন্ন ইউনিটে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে এবং অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশিরা পুলিশ বিভাগের উচ্চপদগুলোর নেতৃত্বের আসনে আসীন হবে বলে তিনি এ আশা ব্যক্ত করেন।
বাপার ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রাফিক সুপারভাইজর মোহাম্মদ আলী চৌধুরী জানান, বর্তমানে এনওয়াইপিডির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। নিয়মিত বাহিনীতে প্রায় চার শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচ জন ক্যাপ্টেন, ১৩ জন লেফটেন্যান্ট, ৩৭ জন সার্জেন্ট এবং ১২ জন ডিটেকটিভ রয়েছেন।
এছাড়া নিউইয়র্ক সিটিতে পুলিশ বিভাগের অধীনে প্রায় দুই জন বাংলাদেশি ট্রাফিক কমান্ডিং অফিসার, শতাধিক ট্রাফিক সুপারভাইজারসহ সাত শতাধিক ট্রাফিক পুলিশ, স্কুল সেফটি এজেন্ট, পুলিশ কমিউনিকেশন টেকনেশিয়ান, স্কুল ক্রসিং গার্ডসহ বিভাগের অন্য ইউনিটে হাজারের বেশি বাংলাদেশি অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।