২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:২৮:০৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


প্রশ্ন একটাই ২৮ অক্টোবর কী হতে যাচ্ছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১০-২০২৩
প্রশ্ন একটাই ২৮ অক্টোবর কী হতে যাচ্ছে


দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালে এক অজানা আতংকে কাঁপছে দেশ! সবার মুখেই অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু কথা। কী হতে যাচ্ছে। কী হতে পারে। কেউ কেউ জানান দিচ্ছেন অনিশ্চয়তার কথা। কেউ বা আবার অভয় দিয়ে না!  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেউ কেউ অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় বসানোর পাঁয়তারা করছে। নির্বাচন কমিশন বলছেন, জানুয়ারির মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন শেষ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতা রয়েছে। সরকার বিরোধী দলগুলোর দাবি ‘এক দফা’। সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। অক্টোবরের শেষ লগ্ন। মাঝে নভেম্বর ও ডিসেম্বর দুইমাস। এরই মধ্যে যা হওয়ার সেটা হয়ে যাবে। অর্থাৎ সংবিধান অনুসারে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচনের পানে এগিয়ে যাওয়া। বা বিরোধী দল তাদের দাবি পূরণে কঠোররতা অবলম্বন করে আদায়ে সমার্থ হওয়া। 

এর পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্রদের প্রত্যাশা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান। এ তাগাদা তারা দীর্ঘ এক বছর ধরেই দিয়ে আসছেন। সেখান থেকে পিছপা হয়নি তারা। বরং কঠোরতার সঙ্গে জানান দিচ্ছে তাদের প্রত্যশার সপক্ষে যুক্তি দিয়ে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি অক্টোবরের ২৮ তারিখে মহাসমাবেশ ডেকেছে পল্টনে। বিএনপির এ জনসভায় পেছনের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে লোক জড়ো করার টার্গেট হাতে নিয়েছে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন দেখেছে মানুষ। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের শতাধিক হরতালসহ কঠোর আন্দোলনও দেখেছে। কিন্তু অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ ইতিমধ্যে করে ফেলছে বিএনপি। এর আগে পল্টনের জনসভা মহাসমুদ্রে রূপ নেয়। এবার আরো বেশি মানুষের সম্পৃক্ততা ঘটিয়ে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি ওই ২৮ অক্টোবর। অনুমান করা যাচ্ছে কী হতে যাচ্ছে। তাছাড়া অন্যসময়ে বিভিন্ন বাধাবিপত্তি ছিল। এবার নানা কারণে সে বাধাদান প্রক্রিয়া আপাতত দৃষ্টি তেমন নেই বললেই চলে। ফলে বিএনপি ওই মহাসমাবেশ থেকে থেকে সরকার বিরোধী ‘আন্দোলনের মহাযাত্রা’ও ঘোষণা দেবে বলে জানান দিয়েছে মির্জা ফখরুল ইতিমধ্যে। 

সরকার পক্ষ ইতিমধ্যে বিএনপির এ সম্মেলন নিয়ে কিছুটা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। বারবার তারা বলছে, বিএনপি বিপুল লোক ঢাকায় ডেকে এনে বসে পড়ার প্লান কষেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতিমধ্যে হুংকারও দিয়েছেন যে যদি অমন কিছু করার প্লান বিএনপি করে তাহলে পরিণতি শাপলা চত্তরের চেয়েও খারাপ হবে। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, নির্বাচনের প্রাক্কালে বিরোধী দলের এমন কর্মসূচিতে তৃণমূল থেকে শুরু করে সকল স্থানে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেন সজাগ থাকে। সতর্ক থাকেন। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, মহাসমাবেশ সফল করতে সরকার পক্ষ কি আচরণ করে সেটা প্রত্যক্ষ করা হবে। এবং তার উপর মূলত পরবর্তি কর্মসূচি ঘোষণা হবে। তবে বিএনপির মূল লক্ষ্য বিপুল পরিমাণ মানুষের সমাগম ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের অনাস্থার প্রমাণ দিয়ে দেয়া। তবু বিপুল পরিমাণ লোকের সমাগম যেখানে ঘটে তার নিয়ন্ত্রণ শেষ পর্যন্ত কারোর উপরই থাকে না। ঘটে যেতে পারে অনেক কিছু। তৃতীয় পক্ষ থেকে অঘটন ঘটিয়ে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়া কিংবা বিএনপির অহিংস আন্দোলন যাতে অহিংস না থাকে সে প্লানে কালিমা লেপন। বা অতি উৎসাহী কেউ এমন কোনো আচরণ করলো যাতে সুন্দর পরিবেশ আর চাইলেও ধরে রাখা সম্ভব নয়। এতে করে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে পরিস্থিতি- সে অনেক কিছুই। ফলে মহাসমাবেশে অংশগ্রহণকারী ও এটা সুষ্ঠুভাবে করার সহযোগিতা প্রদানকারী সকলকেই সংযত থেকে সতর্কতার সঙ্গে এমন প্রোগ্রাম শেষ করা উচিৎ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। 

দেশের মানুষ কোনো ঝুট ঝামেলা পছন্দ করেন না। তারা চান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, এবং শান্তিপূর্ণ সব কর্মসূচি। এমন সমাবেশ কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপি থেকে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদের অনেক নেতাকর্মীদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভীতি সঞ্চার করে মানুষের উপস্থিতি হ্রাস করার পায়তারা করছে ক্ষমতাসীনরা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে এ অভিযোগ। তারা বলছেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা, অভিযোগ রয়েছে, তাদেরই তারা আটক করছেন নিয়মানুসারে।   

তবে এটা ঠিক ক্ষমতাসীন সরকারের একেবারে শেষ লগ্নে এমন কর্মসূচিতে স্বতঃষ্ফূর্ত মানুষের উপস্থিতি ঘটে এটা পূর্বেও দেখা গেছে। বাংলাদেশের মানুষ চায় ক্ষমতার পরিবর্তন। টানা তিন টার্ম ক্ষমতায় থাকার পর আবারও আরেকটার্ম ক্ষমতায় থাকুক আওয়ামী লীগ সেটা খোদ দলটির মধ্যেও সম্ভবত অনেকে চান না। কারণ এখানে চাওয়া পাওয়া, বঞ্চিত হওয়া, অবহেলিত হওয়া নানা সমস্যা রয়েছে। ক্ষমতার বাইরে থাকলে এগুলো সাধারণত কাউকে স্পর্শ করে না। কেউ কেউ আবার ধারাবাহিক তিন টার্ম ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগকেই কন্টিনিউ দেখতে চান। গণতন্ত্রটা এখানেই। মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করবে। বলবে। সাপোর্ট করবে। 

এ মহাসমাবেশ সামনে রেখে পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের আগভাগেই ঢাকা পৌঁছানোরও নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। কারণ ইতিপূর্বে মালিক সমিতির পরিবহন ধর্মঘট, রাস্তায় রাস্তায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার নিমিত্তে বাধাদান এগুলো পূর্বে হয়ে আসছে। সে জন্যই ওই আগভাগে ঢাকায় পৌঁছানোর নির্দেশনা। 

এদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও সতর্ক। বিএনপিসহ সমমনাদের মহাসমাবেশ যাতে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে এ জন্য তারাও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শুধু দেশেই নয়, বাংলাদেশের এমন মহাসমাবেশসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পানে নজর আন্তর্জাতিক মহলেরও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেড ডিপার্টমেন্ট ইতিমধ্যে জানান দিয়েছে তারা নিবিড়ভাবে নজর ও প্রতিটা মুহূর্তের খবরাখবর রাখছেন। ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগসমূহের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েছেন।  

শুধু বিএনপিই নয়, একই দিনে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশও। তাদের কর্মসূচি হবে মতিঝিল শাপলা চত্তরে। পাশাপাশি এমন দুই মহাসমাবেশে গোটা রাজধানীর চিত্রই পাল্টে যেতে পারে ২৮ অক্টোবর। তবে বিএনপির পাশাপাশি হঠাৎ করে জামায়াত ইসলামীর শাপলা চত্তরে কর্মসূচি দেয়ায় উত্তেজনার পারদ বাড়ছে। সব মিলিয়ে কী হতে যাচ্ছে, কী ঘটতে যাচ্ছে সেটা আসলে সকলেরই অজানা। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, এমন কর্মসূচিতে কারোর পক্ষেই বাধাদান সম্ভব হবে না। মানুষ ছুটে আসবেই। বিএনপি ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, এ মহাসমাবেশ থেকেই পরের কর্মসূচি ঘোষণা দেবে। এক দফা দাবি আদায়ে তারা কী কী করবে তার ফিরিস্তিও।  

বিএনপির আহ্বান 

গত ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভি স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি মিডিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে বিএনপি জানায়, “আগামী ২৮ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার রাজধানী ঢাকায় বিএনপি’র উদ্যোগে আয়োজিত মহাসমাবেশ সফল করার জন্য ঢাকাসহ দেশব্যাপী সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন।

উক্ত মহাসমাবেশ থেকে ঘোষিত পরবর্তী কর্মসূচিসমূহ সফল করার জন্য দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ২৮ অক্টোবরের পরে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করবেন। ঢাকার মহাসমাবেশে দেশব্যাপী সর্বস্তরের মানুষসহ দলের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ীদের যোগদান করে ১ দফা দাবি আদায়ে দলের পক্ষ থেকে সোচ্চার আওয়াজ তোলার জন্য উদাত্ত আহবান জানানো হলো।”

শেয়ার করুন