১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৩:১৭:২৩ অপরাহ্ন


বাংলাদেশি সুপার মার্কেটগুলোতে চুরি
জ্যামাইকা টু জ্যাকসন হাইটস ॥ আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৫-২০২৩
জ্যামাইকা টু জ্যাকসন হাইটস ॥ আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা জ্যামাইকার কাওরান বাজার


করোনা মহামারির সময় এক ধরনের আতঙ্ক ছিল। সেই আতঙ্কের বিষয়টি ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রঙ্কস, ব্রুকলিনসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা দুর্র্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছিলেন। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছিলেন। ব্রঙ্কসে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি হামলার শিকার হন। যার মধ্যে একজনকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। সাবওয়েতেও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির ওপর হামলা চালানো হয়। এখনো বিক্ষিপ্তভাবে বাংলাদেশিদের ওপর হামলা হচ্ছে। এ নিয়ে পুলিশ রিপোর্টও করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে পুলিশ রিফর্ম এবং বেল রিফর্মের কারণে পুলিশও কিছুটা অসহায়। কারণ দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করার পরদিনই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। থানা থেকে ফিরে এসে তারা আবারও একই স্টাইলে হামলা শুরু করে।

ইদানীং নতুন করে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় বাংলাদেশি মালিকানাধীন সুপার মার্কেট, গ্রোসারি এবং কনভেনিয়ন্স স্টোরগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে জ্যামাইকায় তিনটি বাংলাদেশি সুপার মার্কেটে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। প্রথম ঘটনা ঘটে জ্যামাইকার কাওরান বাজার সুপার মার্কেটে। ঈদের দিন ২১ এপ্রিল রাতে চুরির ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ২৫-৩০ হাজার ডলারের মতো লুট হয়েছে বলে জানা গেছে। কাওরান বাজার সুপার মার্কেটের অন্যতম স্বত্বাধিকারী ইলিয়াস খান জানান, দুর্বৃত্তরা মার্কেটটির পিছন দিক থেকে কৌশলে তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে ক্যাশ রেজিস্ট্রার আর সেফবক্স ভেঙে প্রায় ২৫-৩০ হাজার ডলার লুট করে নিয়ে যায়। তিনি জানান, ঈদের দিন শুক্রবার রাত ১১টার দিকে স্টোরটি বন্ধ করা হয় এবং শনিবার সকাল ৯টার দিকে স্টোর খোলার পর লুটের ঘটনা দেখা যায়। শুক্রবার মধ্য রাত থেকে শনিবার ভোর সময়ের মধ্যে লুটের ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে পুলিশ রিপোর্ট করা হয়েছে এবং পুলিশ স্টোরটি পরিদর্শন করেছে।

অন্যদিকে পরদিন জ্যামাইকার বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রিমিয়াম সুপার মার্কেটে এক কৃষ্ণাঙ্গ ক্যাশ রেজিস্ট্রারে থাবা মারে, কিন্তু সফল হতে পারেনি। ভিডিওতে দেখা যায়, কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটি ক্রেতা হিসেবে প্রথমে স্টোরে ঢোকে। কিন্তু কোনো মালামাল ক্রয় না করেই পকেট থেকে কয়েকটি ১ ডলারের নোট বের করে কর্মরত ক্যাশিয়ারকে বড় নোট দিতে বলে। কর্মরত ক্যাশিয়ার যখনই ক্যাশ বাক্স খোলে তখনই সে রেজিস্টারে থাবা মারে, কিন্তু সফল হতে পারেনি। পরে অবশ্য পুলিশ ডেকে রিপোর্ট করা হয়।

ঠিক তার একদিন পর জ্যামাইকার আরেকটি বাংলাদেশি মালিকানাধীন মান্নান সুপার মার্কেটেও আরেকজন কৃষ্ণাঙ্গ দুর্র্বৃত্ত ক্যাশ রেজিস্টারে থামা মেরে হাতে যা উঠেছিল তা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় কয়েকজন বাংলাদেশি তাকে আটক করে এবং পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

গত ২৭ এপ্রিল রাত সোয়া ১০টার সময় জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশি মালিকানাধীন (৭৩ স্ট্রিট এবং ৩৭ অ্যাভিনিউ) কনভেনিয়ন্স স্টোরে কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্ত ডাকাতি করে। এ সময় সে স্টোরে ঢুকে ভয় দেখিয়ে ক্যাশ রেজিস্টারে থাকা অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়। দোকান মালিক জানিয়েছেন, তার সারা দিনের বিক্রি, লটোর অর্থ, মানি ট্রান্সফারের অর্থসহ প্রায় ২০ হাজার ডলার নিয়ে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কল করা হলে পুলিশ এসে স্টোরটি পরিদর্শন করেন এবং ভিডিও ফুটেজ নিয়ে যায়। বাংলাদেশি গ্রোসারি, সুপার মার্কেটে ঘন ঘন চুরি বা ডাকাতি নিয়ে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। জ্যামাইকার তিনটি সুপার মার্কেটের মধ্যে একটিতে দারোয়ান ছিল। তারপরও দুর্র্বৃত্তরা চুরি এবং ডাকাতি করার সাহস দেখাচ্ছে। জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি এবং ফাতেমা গ্রোসারির মালিক ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার জানান, জ্যামাইকায় অনেকগুলো দোকানে রাতে চুরির ঘটনা ঘটছে। দোকানগুলো বন্ধ করে চলে যাওয়ার পর এসব ঘটনা  ঘটে। এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ প্রিসেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করাও হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দোকান মালিকদের আরো সতর্ক হওয়া উচিত। পুলিশ জানায়, রাতের বেলায় অন্যপথে ঢুকে দোকানে চুরি করলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। সেক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ হচ্ছে, দোকানে অ্যালার্ম সিস্টেম লাগানো। অ্যালার্ম সিস্টেম লাগালে দোকানে ঢোকার চেষ্টা করলে বা তালা ভাঙার চেষ্টা করলে অ্যালার্ম বেজে উঠবে। তাতে করে দোকান মালিক জানতে পারবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কল করলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, সবার উচিত পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ী দোকান বা সুপার মার্কেটে অ্যালার্ম সিস্টেম লাগানো। সে যেসব স্টোর ২৪ ঘণ্টা খোলা তাদের দরজায় বিশেষ সিকিউরিটির ব্যবস্থা করা। তাহলে হয়তো এসব ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।

শেয়ার করুন