২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১০:৪৭:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


নির্বাচন অত্যাসন্ন বাতাসে নানা গুজব
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১০-২০২৩
নির্বাচন অত্যাসন্ন বাতাসে নানা গুজব


আরো একটা জাতীয় নির্বাচন অত্যাসন্ন। এমনিতেই বৈষয়িক নানা কারণে ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতি সংকট পথে। নানা দায় মিটিয়ে আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ। রফতানি সংকুচিত হচ্ছে, রেমিন্টেন্স প্রবাহে গতি নেই। জ্বালানি নিরাপত্তা অনিশ্চিত। এমতাবস্থায় নির্বাচনের আগে জরুরি অবস্থা, তলে তলে আঁতাত নানা মুখোরোচক বাণী নানা গুজব মুখরিত মিডিয়া। অক্টোবর মাসটিতে একের পর এক আইকনিক মেগা প্রকল্প চালু করে সরকারের মধ্যে কিছুটা চাঙ্গা ভাব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার চাপে হোক অথবা বৈষয়িক বাস্তবতার কারণে হোক রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলন অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। সরকারপ্রধানের পরিপক্ব কূটনৈতিক দ্যূতিয়ালি সরকারের অবস্থান কিছুটা শক্তিশালী করলেও প্রচ্ছন্ন বৈষয়িক চাপ কিন্তু রয়েই গেছে। অক্টোবর শেষে কিন্তু নভেম্বরে নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করার সম্ভাবনা আছে। আমি বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন অবস্থায় অধীনে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হতে চলেছে বলেই অনেকটা নিশ্চিত। সরকারপ্রধানকে অনেকটা আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে। মাঠে বিরোধী দলের ময়দানি হুমকিধমকিকে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ এ মুহূর্তে তা মনে হচ্ছে না। 

এমতাবস্থায় জরুরি অবস্থা ঘোষণার কথা শোনা যাচ্ছে কিছু মহলে, কিন্তু বিষয়টি বোধগম্য নয়। দেশে প্রকৃত প্রস্তাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণার মতো সংকটের সৃষ্টি হয়নি। সবকিছুই সরকারি নিয়ন্ত্রণে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে আপামর জনগণ সম্পৃক্ত হয়নি। দেশে হাহাকার বা দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি নেই। জাতিগত গোষ্ঠী বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও কোনো সংঘাত সৃষ্টি হয়নি। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রলয়ঙ্করী বন্যা, সুনামি, ভূমিকম্প হয়নি। এমন কিছু অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নেই, যার কারণে পর পর তিন টার্ম দাপটের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা সরকারপ্রধানকে জরুরি আইন ঘোষণা করতে হবে। যারা বলছেন এই সম্ভাবনার কথা, তারাও কিন্তু খোলাসা করে কিছু বলছেন না।

অন্যদিকে সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা জনসভায় বলেছেন, তলে তলে নাকি আঁতাত হয়ে গেছে। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ আঁতাত হলেই নাকি নির্বাচন ঘিরে সব কিছুর সমাধান হয়ে যাবে। কথাগুলো ময়দানি ভাষা যিনি বলছেন তার নিজস্ব মূল্যায়ন। নিজেদের দলের সমর্থক এবং আমি জনতাকে চাঙ্গা রাখার জন্য এই ধরনের কথা বাংলাদেশে হয়েই থাকে। যেমন বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা সরকার পতনের দিনক্ষণ বহুবার বেঁধে দিয়ে অনেকটা হাস্যরসের খোরাক হয়েছে। বাংলাদেশ চলছে নিজস্ব গতিতে।

কিন্তু শঙ্কার বিষয়ে ক্রমহ্রাসমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি। দ্রুত কমে আসছে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়। ক্রমাগত বাড়ছে বাংলাদেশের দেনার দায়। আমদানি নির্ভর জ্বালানিখাতের জন্য শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ-জ্বালানিনিরাপত্তা টেকসই রাখা। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে জ্বালানি আমদানির অর্থ জোগান করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়ার পথে। কৃষক সমাজ প্রতি ফসলের বাম্পার ফলন করে ভান্ডার পূর্ণ করলেও মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটসমূহের কারসাজিতে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। সীমিত আয়ের মধ্যবিত্ত অসহায়। এমতাবস্থায় জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোকে সুশীল সমাজ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্বশীল সরকার গঠনে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি। নানাধরনের কারণ-অকারণ গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলা করা হলে প্রতিক্রিয়াশীল সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে জনজীবনকে আরো বিপর্যস্ত করে তুলবে।

স্বীকার করি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থান এবং বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির কারণে প্রভাবশালী প্রতিবেশীসহ বিশ্ব মোড়লদের বাংলাদেশ বিষয়ে অতি উৎসাহ আছে। কিন্তু আত্মসম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে স্বাধীন জাতিসত্তায় বেঁচে থাকতে বাংলাদেশকে নিজেদের সমস্যা সংকট নিজেদের সমাধান করতে হবে। গুজব ছড়ালে সংকট ঘনীভূত হবে বলেই মনে হচ্ছে।

শেয়ার করুন