০৮ মে ২০১২, বুধবার, ১০:৩৭:৪২ পূর্বাহ্ন


মার্কিন ভিসা-নীতি কলঙ্কের তিলক
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৫-২০২৩
মার্কিন ভিসা-নীতি কলঙ্কের তিলক


রাখালের বাঘ উপর্যুপরি আসার আগাম বার্তার মতো, ভিন্ন মোড়কে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেই গেল। বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সম্ভাব্য কারচুপির আশঙ্কায় সেদেশে গমনেচ্ছুদের জন্য একধরনের আগাম সতর্কতামূলক বার্তা দিলো মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। যুদ্ধজয়ী সংগ্রামী জাতির জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি কলঙ্ক তিলক। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার পথে যারা যেভাবেই বাধার সৃষ্টি করবে তাদের এবং তাদের পরিবার পরিজন (স্বামী স্ত্রী সন্তান) যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা প্রদানের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম তাদের সবার কাছে এই ঘোষণা নিদারুণ লজ্জা, ক্ষোভ আর হতাশার। আর এর জন্য প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলো আর তাদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠাগুলো এবং সুবিধাভোগী মহল দায়ী। এর মাধ্যমে প্রমাণ হলো নির্বাচন নিয়ে সরকার, সরকারি দল, বিরোধীদল এবং উভয় পক্ষের প্রবাসে ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড মূলত দায়ী। বিশেষ করে বাংলাদেশের কূটনীতি এবং সরকারের মন্ত্রীদের দ্যূতিয়ালি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সরকার এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে তাদের আন্তরিকতা  বিষয়ে আস্থা প্রদান করতে পারেনি। হতে পারে একই ধরনের ঘোষণা পশ্চিমা গোষ্ঠী থেকে আরো আসতে পারে। বিষয়টি গোটা জাতির জন্য কলঙ্ক জনক। সরকার বা বিরোধীদল কারো জন্যই শুভকর নয়।  

সব সময় সব দেশের রাজনীতি সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কারণেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। বিরোধীদলগুলো যেমন কথায় কথায় ছুটে যায় বিদেশি মিশনগুলোর কাছে নালিশ করতে, একইভাবে সরকারি দলগুলো অনেকটা জবাবদিহি করে বিদেশি দূতাবাসে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বিএনপিকে দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং পশ্চিমা দেশের দূতাবাসে ধরনা দিতে। একইভাবে সরকারি দল, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশের বিশেষত প্রতিবেশী দেশের সহায়তাকে নিজেদের ক্ষমতায় টিকে থাকার অবলম্বন হিসেবে মনে করে। 

বিরোধীদল নিজেদের অবস্থান না জেনেই ক্ষণে ক্ষণে সরকার উৎখাতের হুমকি দেয় আর সরকারি দল তাদের প্রতিহত করার জন্য পেশিশক্তি প্রদর্শন করে। গণতন্ত্রের প্রতি কোনো দলের কোনো নিবেদন বা সম্মানবোধ নেই, জনগণের প্রতি আস্থা নেই। এমতাবস্থায় রাজপথে সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুনিয়ার কোনো দেশের সরকারপ্রধান দেশের বাইরে গেলে পক্ষে-বিপক্ষে মিটিং-মিছিল না হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যে দেশের সরকারি দল এবং বিরোধীদলের রাজনীতি প্রবাসে বিস্তৃত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব সংঘাতের কথা সোনা যায়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সফর করে দেশে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে কিছু কথা বলেছেন, লন্ডনে বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কিছু কথা বলেছেন, সেগুলো হয়তো কৌশলগতভাবে এড়িয়ে গেলেই ভালো হতো। নির্বাচন নিয়ে যখন রাজপথ উষ্ণ হচ্ছে ঠিক তখনি কয়েকটি রাষ্ট্রদূতের বিশেষ নিরাপত্তা প্রটোকল উঠিয়ে নেয়াও সময়ানুগ হয়নি। 

যাহোক কোনো দেশ যদি যুক্তিসংগত কারণে কোনো দেশের কিছু নাগরিকদের সেই দেশে ভিসা প্রদান নিয়ন্ত্রণ করে কিছু বলার থাকে না। তবে নির্বাচন বিষয় সুস্পষ্ট করে এই ধরনের আগাম ঘোষণায় কারো পুলকিত হওয়ার কারণ নেই। দেখা যাক কীভাবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা প্রমাণ করে। কতটা সফল হয় সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে? যাই হোক সরকারি দল বা বিরোধীদল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষণা বিষয়ে চট জলদি প্রতিক্রিয়া না দিয়ে নিজেদের সংযত করলে ভালো হবে। কিন্তু সেটা তারা করেনি। ওই ঘোষণার পর সবাই ইচ্ছা অনিচ্ছা সত্ত্বেও দেখছি মার্কিন প্রশাসনের ওই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে বলেছে এটা তারা প্রত্যাশা করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে প্রত্যাশা অনুসারেই এ উদ্যোগ নিয়েছে। এ অর্থ মার্কিন ঘোষণা নিজেদের অনুকূলে নেওয়ারও একটা বড় প্রতিযোগিতা চলছে দেশের রাজনীতিতে। এটা সাধারণ মানুষের জন্য হলেও লজ্জার নয় কি!

শেয়ার করুন