২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:৬:৫৪ পূর্বাহ্ন


পরিবর্তনের একটা বাতাস বইছে দেশে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৪-২০২২
পরিবর্তনের একটা বাতাস বইছে দেশে মাহমুদুর রহমান মান্না


দেশ’কে মাহমুদুর রহমান মান্না

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, এ সরকারকে কোনো পরামর্শ দিচ্ছি না। চোর ডাকাতকে কি পরামর্শ দেবো? ভালো লোক হইে না দেয়া যেতো। প্রথম দিকে হয়ত দিয়েছিলাম। আমাদের কথা বা বক্তব্য শোনার মতো মন থাকতে হবে তাদের।

দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে মাহমুদুর রহমান মান্না এসব কথা বলেন। দেশ’র সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে মান্না এ প্রতিনিধিকে বলেন, ১২ বছর ধরে অবৈধ সরকার ক্ষমতায় আছে। অবৈধ সরকার বলছি কারণ এদের জবাবদিহিতাই নেই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটাই আস্তে আস্তে ধবংস হয়ে যাচ্ছে। আর রাজনীতি যখন কুলষিত হয়ে পড়ে তখন এর ছাপ অর্থনীতি,প্রশাসন,সংস্কুতিতে পরে যায়, যা এখন সবক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে। অর্থনীতিতে একটা লুটেরা শ্রেণী জন্ম নিয়েছে। করনার মধ্যে সাড়ে তিন কোটি লোক দরিদ্র হয়েছে।

সরকার বলে থাকে এদের সহায়তা করেছে। আসলে কিন্তু তা লুটপাট হয়ে গেছে। দ্রব্যমুল্য এমনভাবে বেড়েছে যে এর ওপরে কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। সিন্ডিকেটের দয়ার ওপর নির্ভরশীল এখন দেশবাসি। চাল,দেল পেঁয়াজের দাম কমানো যাচ্ছে না। তাদের মসকরা করা শেষ নেই। খোদ বানিজ্য মন্ত্রী বলে বেরাচ্ছেন আগেতো লুঙ্গি পড়ে দাড়াতো টিসিবি’র পন্য কিনতে। এখন জনগন প্যান্ট সার্ট পরে টিসিবি’র পন্য কিনে। অভাব গ্রাস করে ফেলছে দেসবাসীকে। আর এরা তথাকথিত উন্নয়নের তবলা বাজাচ্ছে। অল মেঘা প্রকল্প মানে মেঘা লুট। এরা এসবে আগ্রহী। কারণ এতে তারা ফুলে ফেপে ওঠতে পারে। আবার এসবের বিরুদ্ধে কথা বললে নেমে, আসে নিপীড়ণ নির্যাতন। জনগণ এখন আমাদের প্রশ্ন করে জানতে চায়। ভাই মুক্তি পাবো না? আমরাতো বলি এসরকার এখনই বিদায় নিক। 

আপনি কি মনে করে এসরকার পতনে জনগণের আগ্রহ আছে। তারা কি মনে করে না এমন অবস্থা আগেও হয়েছে। এর বিরুদ্ধে জনগণ নেমেছে। কিন্তু পরে তা উল্টে যায়। জনগণের কাছে অতীতে তিন জোটোর রুপরেখা অনুযায়ীতো নির্বাচন হবে বলা হয়েছিল। সেই বিএনপি বা আওয়ামী লীগ পরবর্তীতে তো কেহই মানেনি। তাহলে কার স্বার্থে জনগণ আবার মাঠে নামবে বলে আপনার ধারণা হলো?

মাহমুদুর রহমান মান্না অভিযোগ করেন, দেশের মান-মর্যাদা আর্ন্তজাতিকভাবেও ক্ষুন্ন হচ্ছে। কেননা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংগঠন বাংলাদেশে গুমের ফ্যাক্টস এন্ড ফিগার দিয়ে সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে এরা কোথায়? অথচ এসরকার জাতিসংঘকে এসব অভিযোগের ব্যাপারে খুব হালাকাভাবেই উপস্থাপন করেছে। যেনো ব্যাপারটা এমন এটা বিএনপি’র দেয়া অভিযোগ বা মোকাবিলা তাদেরকেই করছে। বিএনপি’কে যেভাবে মোকাবেলা করা হচ্ছে অতীতে বা এখন।  তেমনি জাতিসংঘকেও তারা একিই কায়দায় মোকাবেলা করতে চায় এসরকার। পরিনতি তি হয়েছে? সেই জাতিসংঘই এখন এ্যকাশনে গেছে। এটা দেশের জন্য খুবই অপমানজনক। জাতিসংঘের বক্তব্য হচ্ছে তারা বারোটা মানবাধিকার সংগঠন গুম খুনের অভিযোগটা বিবেচনায় নিয়েছে।

তাহলে কি পিস কমিশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে? এধরণের পদক্ষেপে বাংলাদেশ যাবে কই? এতো কিছুর পরও সরকার এবিষয়টি নিয়ে মিথ্যাচার করে বলছে। বলা হচ্ছে  ৭৬ জন ভুমধ্যসাগরে হারিয়ে গেছে। এসব কারণে আমি মনে করি, দেশে একটা পরিবর্তনের বাতাস বইছে। গত দুই আড়াই বছরের প্রায় ঘুমন্ত বিরোধী দল  সম্মিলিতভাবে জেগে উঠেছে। বিএনপি’ও এখন মাঠে নেমেছে। তারা গত দু’বছর আগে যেভাবে নেমেছে ঠিক সেভাবে এবার নামবে না। সম্মিরিতভাবেই এসরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তাদের সম্মতি আছে। এখানে অন্য যারা আছে তারা হয়ত ভাবছেন আমরা কি শুধু অন্যকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যই আন্দোলন করবো? সরকার পরিবত’নেরই লড়াই? তারাও তো একটা সিস্টেম ডেভেলাপের কথা বলে তাদের মতো করে আন্দোলন করছে। আমি একটা জিনিসি লক্ষ্য করছি যে, ওমিক্রনের ছড়ানোর আগে বিএনপি বেশ কয়েকটি সভা করেছে। এতে জনগন কিন্তু ১৪৪ ধারা ভেঙ্গেই বিএনপি সমাবেশে অংশ নিয়েছে। আমি মনে করে আন্দোলন পুর্নগঠিত হচ্ছে, এ সরকারের সব ধরণের অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগণ রাস্তায় নামবেই।

কার স্বার্থে জনগণ আবার মাঠে নামবে বলে আপনার ধারণা হলো?

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক থেকে সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এপ্রশ্নটা খুবই জেনুয়িন। তবে আপনার একটা ধারণার ব্যাপারে আমি অন্য কথা বলবো। এটা ঠিক এপর্যন্ত যারা যারা অতীতে ক্ষমতায় ছিলেন তাদের ব্যাপারে জনগণে আশা কমে গেছে। সেক্ষেত্রে জনগণতো আমাদের দোষ দিচ্ছে না। যদি বলা হয় আমরা যারা ক্ষমতায় ছিলাম না বা আরো অন্যভাবে যদি বলা যায় সুযোগ ছিল না। তাহলে কি বলবেন? আমাদের ব্যাপারেতো জনগণের এমন বাজে ধারণা নেই। যে আমরা ক্ষমতায় গেলে লুটপাট করে খাবো। দেশ রসাতলায় নিয়ে যাবো। মানুষ তো আমাদের ঐ স্পট দিতে পারবে না। সম্প্রতি একটা টক শোতে গিয়েছিলাম।

সেখানে আওয়ামী লীগের একজন নেতা আমার কাছে জানতে চেয়েছিল আমরা ক্ষমতায় গেলে কি এর চেয়ে ভালো কিছু করতে পারবো কি-না? আমি তখন বলেছিলাম আপনাদের চেয়ে আর খারাপ কি হবে। এর চেয়ে তো বেটার হবেই। আমরা একটা কল্যান রাষ্ট্রের কথা বলেছি। তাদের অন্ন,বস্ত্র,শিক্ষা,চিকিৎসা সংস্থান কি করে হবে তার একটা ফমূলা আছে। তাতে এখনো বাসস্থাানের কথা বলা হয়নি। তবে মানুষের খাওয়ার ব্যবস্থা কি করে করা যেতে পারে? আট কোটি দরিদ্র মানুষ, চারকোটি বেকার দেশে। এক কোটি শিক্ষিত বেকার। এসব বিষয় নিয়ে বিএনপি’র অবশ্যই কথা হয়। জানতে চাওয়া হয় এদের কি করবেন? তখন তারা আমাদের আশ^স্থ করেন বিএনপি। এটা মোকাবেলায় তাদের মেকানিজম আছে বলে জানায়। এবং এব্যাপারে তারা ভাবে। এমন কি এখন তারাই তো বলে কল্যান রাষ্ট্রের কথা। আমাদের বলে বিএনপি কল্যান রাস্ট্রে কনসেপ্টে বিশ্বাসী। আমরা তাদের বলেছি। এটা যদি মনে কথা হয়ে থাকে তাহলে জনগণের কাছে যান। আপনাদের অভিপ্রায়ের কথা খোলাসা করে বলেন। বলেছি শিক্ষা ব্যবস্থা এখন ধবংসের মুখে। এগুলির কি হবে তাদের কাছে কিন্তু জানতে চাওয়া হয়। আমরা বলেছি এসব বিষয় জনগনের কাছে পরিস্কার থাকতে হবে। তা না হলে জনগণ আপনাদের বা বড়ো একটি জোটের আন্দোলনে যাবে কেনো?

প্রশ্ন হচ্ছে এসব  যে তারা আপনারা ক্ষমতায় গিয়েই বাস্তবায়ন করবেন তার গ্যারান্টি কি?

আমি জনগণকে বললাম নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার হবে। দেশে নিজের ভোট নিজে দেয়ার গ্যারান্টি করে দেয়া হবে। এসব প্রতিশ্রুতির যে জনগণের বিজয়ের পর ক্ষমতায় আসীনরা মানবে তা নিশ্চয়তা কি? আওয়ামী লীগও সেদিন ১৪ দলের সাথে অনেক কিছুতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। শোনা যায় ১৪দলের শরিকরা আওয়ামী লীগকে সেসব দাবি  বা প্রতিশ্রুতি মেনে নিতে চাপতো দুরে থাক সামনেই ভিড়তে পারে না। সেক্ষেত্রে আপনারা কি পারবেন যে বড়ো দল ক্ষমতায় যাবে তখন তাপরা আপনাদের দাবি মেনে নিতে?কল্যান রাষ্ট্রের কথা বলবে?

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সাধারণ মানুষ যদি  চায় তা হবেই। বিএনপি আগের মতো দাবি পাশ কাটিয়ে যেতে পারবে না। আর আপনি বিএনপি আর আমাকে এক কাতারে ফেলছন কেনো? কিন্তু আমি বা আমরা তা নই। সিপিবি’র ব্যাপারে মানুষে অন্য রকম ধারনা থাকতে পারে। কিন্তু সিপিবি’র লোকগুলিতো চোর না। চুরি করে বাড়ি ঘর বানিয়েছে এমনতো না। তাদেরতো মানুষ ভালো বলে। কাজেই ভালো মানুষ আছে। মুক্তিযুদ্ধে এক পক্ষ আছে যারা যুদ্ধের পর দেশ গড়েছে। আবার এক পক্ষ ছিল যারা যুদ্ধের পর পর লুটপাট করেছে। অনেক সৎ লোক আছে। যারা ফোকাসড নয়। সেরকম দল ব্যক্তিদের নিয়েই জোট করার পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের মতে মানুষ বা জাতি ভুল জিনিস চিনতে বা বুঝতে ভুল করে না। হ্যাঁ আমাকেও প্রশ্ন করছে আপনি এতো ভালো মানুষ যদি ক্ষমতায় গিয়ে বদলে যান? দেখেন তখন বলতে হয় কোনো না কোনো জায়গায় আপনাকে বিশ^াস করতে হবে যে আমরা বা অন্যরা এটা করবে।

আমরাতো দল আছে। সেখানেওতো আমাকে ধরা হবে অতীত প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে। দেখেন আপনিতো আপনার পিতাকে বিশ^াস করতেই হয়। এখন কাউকে না কাউকেতো বিশ^াস করতে হবে। যেনো বিশ^াসটায় যেনো ক্ষতি না আমরা সে রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার চেস্টা করে যাচ্ছি। আমি এটা প্রচার করছি না। আমিতো আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। বেরিয়ে আসছি কেনো? ভালো লাগেনি তাই। আমরা সাথে বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নির্বাচন করে ডাকসুতে দু’বার হেরেছে। তিনি তো এখন সেক্রেটারি হয়েছেন। আমিতো দলের প্রেসিডেন্ট হতে পারতাম। কই হয়নিতো? এমন নির্মোহ মানুষের নাম আরো দু’শ জনের বলতে পারেবো। দেশে এমন ধরণের মানুষ ফোকাসড হচ্ছে না। 

আচ্ছা এসরকারকে আপনার কোনো পরামর্শ আছে?

মান্না বলেন, এসরকারকে কোনো পরামর্শ দিচ্ছি না। চোর ডাকাতকে কি পরামর্শ দেবো? ভালো লোক হইে না দেয়া যেতো। প্রথম দিকে হয়ত দিয়েছিলাম। আমাদের কথা বা বক্তব্য শোনার মতো মন থাকতে হবে তাদের। একসময়ে তারা আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে যখন প্রশ্ন তোলা হয় যে ভোটের আগেই কি করে ১৫৩ টা আসনে বিজয়ী হয়ে যায়?

এরা সে সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বুঝিয়েছে সে বিরোধী দল নির্বাচনে আসেনি, তাই এমন হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৮ সালে এখনকার ক্ষমতাসীনরা বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বললেন, আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে,কথা দিচ্ছি ভোট নয় ছয় হবে না। এরপর কি হয়েছে তাতো দেশবাসি দেখেছেন। এজন্যই বলি তাদেরকে আমি কি পরামর্শ দেবো?  এই যে সার্চ কমিটির কথা বলা হচ্ছে। আরে এই প্রেসিডেন্টের কি ক্ষমতা আছে?

তিনি কি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারবেন? ওরা বললো আইন করেছি। আরে ঐ আইনতো বেআইনি। আমি আপনাদের কাছে আইন চেয়েছি। আপনি আমাদের কালো আইন দিয়েছেন। এটা আমি কোনো মানবো বলেন? তাদের কি বলবো । তারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ^াস অর্জনে ব্যর্থ। এ মানবাধিকার লঙ্ঘনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও গুম বিষয়ে জাতিসংঘের তৎপরতার কারণে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা এখন এলোমেলো বক্তব্য দিচ্ছে। যে কারণেই আমি পরামর্শ দিতে যাচ্ছি না। আমরা বলছি আন্দোলন করতে হবে, তাদেরকে দাবি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে । 


শেয়ার করুন