৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৯:১৪:৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘ডেড’ নয়, এখন ‘লাইফ’ ইস্যু’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৬-২০২৩
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘ডেড’ নয়, এখন ‘লাইফ’ ইস্যু’


নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘ডেড’ নয়, এখন ‘লাইফ’ ইস্যু বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ডেড ইস্যু- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এরকম বক্তব্যের জবাবে শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

 

তিনি বলেন, ‘‘ বাংলাদেশকে এই সরকার চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যেকারণে আমরা বার বার করে বলছি যে, এই সরকারের এখন থাকার আর কোনো কারণ নেই। তারপরও তার নেতা, তার মন্ত্রীরা যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি এখন ডেড ইস্যু। ডেড ইস্য্ হবে কেনো? এটাই তো এখন সবচেয়ে লাইফ ইস্যু। কারণ আমরা মনে করি যে, এই সরকারের এই মুহুর্তে পদত্যাগ করা উচিত। এতো চুরি করেছে, এতো দুর্নীতি করেছে এবং একটা সমস্যারও সমাধান করতে পারেনি সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কারণ নেই। সেই কারণে আমরা বলেছি যে, একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা একটা নিরপেক্ষ সরকার এবং নির্দলীয় সরকারকে দায়িত্ব দিতে হবে।”

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা যে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা, আমরা যে নির্বাচনী ব্যবস্থা এটাকে তারা ধবংস করে দিয়েছে পরিকল্পিতভাবে। কারণ তারা জানে যে, তারা এতো চুরি-চামারি করেছে যে, সাধারণভাবে যদি ‍সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হয় তাহলে কোনো দিনই তারা ক্ষমতায় ফিরে আসা দূরে থাকুক, পার্লামেন্টে ১০ ভাগেরও বেশি ভোট পাবে না। সেই সরকার আজকে ক্ষমতায় বসে আছে।”

 

‘‘ আমরা খুব পরিস্কার করে বলতে চাই যে, বাংলাদেশের মানুষ দুইটা ইলেকশন দেখেছে… ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালে। আবার ওই জায়গায় ফেরত যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না।এখানে দাদা(সুব্রত চৌধুরী) আছেন। আমরা গত ’১৮ সালে শেখ হাসিনা আমাদেরকে ডেকেছিলেন সংলাপের জন্য। আমরা গিয়েছিলাম এজন্য যে, আমরা মনে করেছিলাম আলোচনার মাধ্যমে যদি একটা অবস্থা তৈরি হয় সেই অবস্থায় আমরা যদি একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারি তাহলে হয়তবা জনগনের সেই ইচ্ছা-আকাংখার প্রতিফলন ঘটাতে পারবো।”

 

সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স  ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তী প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

 

‘ওদেরকে বিশ্বাস করা যায় না’

 

 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীল বলেন, ‘‘ আইনমন্ত্রী পার্লামেন্টে কালকে বলেছেন যে, যখন নির্বাচন চলবে, নির্বাচন কমিশনের সেই ক্ষমতা থাকবে যে, তখন আর কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না বা কাউকে আটক করা যাবে না। এই কথা কে বিশ্বাস করবে? সেই রাখাল বালকের গল্পের মতো। আপনারা সেই রাখাল বালক গ্রামবাসীকে বোকা বানানোর জন্য যখন প্রায় চিতকার করতো যে, বাঘ আসছে বাঘ আসছে বলে গ্রামবাসী তখন লাঠিশোঠা নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসতো। এসে দেখে যে, কিছু নেই্ সেই রাখাল বালক দূরে দাঁড়িয়ে হাসছে।থার্ড টাইম যখন সত্যি সত্যি বাঘ এসেছে, চিতকার শুরু করেছে তখন দেখে গ্রামবাসী কেউ আসেনি। তো আমরা তো দুইবার প্রতারণার স্বীকার হয়েছি। থার্ড টাইম এদেশের মানুষ আর প্রতারণার স্বীকার হবে না। আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, তোমাদের এই সমস্ত কথায় কেউ ভুলবে না। কারণ কখনই তোমরা প্রমিজ রক্ষা করেনি।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা কোনো কথা শুনতে চাই না। আগে পদত্যাগ করুন, তারপরে সংসদ বিলুপ্ত করে নির্বাচনকালীন একটা নির্দলীয় সরকার গঠন করবার জন্য সেই ব্যবস্থা নিন। নতুন নির্বাচন কমিশন নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচন করবে।”

 

‘দেশের অর্থনীতি আন্ডারগ্রাইন্ডে’

 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ এতো বেশি উন্নয়নের কথা বলেছে কিছুদিন আগে পর্যন্ত… খৈ ফুটে মুখে মধ্যে, সব দিকে নাকী তারা উন্নয়নে একেবারে সমুদ্র বইয়ে দিয়েছে। আমরা তখনও বলেছি, গণতন্ত্র বিহীন উন্নয়ন কখনো উন্নয়ন হতে পারে না-এটা টেকসই নয়। এটা ভেঙে যাবে। আজকে দেখুন আমাদের কথার প্রতিধবনি করছে আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলোতে। সরকার বলছে, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোড মডেল। আর আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলো বলছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ঝুঁকিতে বাংলাদেশের সাফল্য গল্প টক হয়ে গেছে… সাওয়ার। কথাটা আমার নয়, কথাটা ভারতের টেলিগ্রাফের অনলাইন ভাসর্নে পরাণ বালাকৃষ্ণা বলে একজন প্রতিবেদক তার প্রতিবেদনে এসব এসেছে। আরো এসেছে যে, বাংলাদেশের সরকার ইতিপূর্বে যে সমস্ত দাবি করেছে সেই দাবিগুলো যে কতটা ঠুককো ছিলো তা ক্রাসিসে যখন বাংলাদেশ পড়েছে তখন সেটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশের পুরো ব্যবস্থটাই এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে। এমনকি রপ্তানি থেকেও ডলার ফেরত আসছে না। রপ্তানির রশিদ সংখ্যা, রপ্তানি শিফমেন্টের সংখ্যা মেলানো খুব কঠিন। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন জোর দিচ্ছে কমপক্ষে ৩০ লাখ ডলারের ওপর যেকোনো এলসিতে তারা ক্লিয়ারেন্স দেবে যা বানিজ্যের জন্য আরো একটি বোঝা হবে।”

 

‘‘ অর্খাত ইকোনমি অলরেডি আন্ডারগ্রাউন্ডে। এই আন্ডারগ্রাউন্ডে কেনো? এই যে ভয়াবহ নজিরবিহীন দুর্নীতি, এই দুর্নীতি করে তো সব কাজগুলো করা হয়েছে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন কিছুদিন পত্রিকায় দেখলাম, বাংলাদেশ বিমান নাকী এয়ারবাস কিনবে আরো কয়েকটা। যে বিমান চলতেই পারে না, যে বিমান টাকা দিতে পারছে না তেলের… যেটা জেট ফুয়েল বলা হয়, যে বিমানের প্রতিমুহুর্তে ভতুর্কি দিতে হয় সেই বিমানের এখন বোয়িং বাদ দিয়ে তারা এয়ারবাস কিনবে। কারণটা কি জানেন? আমি কিছু দিন বিমান মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছি। বোয়িং কাউকে কিক-ব্যাক দেয়, কিক-ব্যাক হচ্ছে কমিশন দেয় না। কিন্তু এয়ার বাস কিক-ব্যাগ দেয়, কমিশন দেয়। শেষ মুহুর্তে আবার পরিচিত ব্যক্তি… আমি নাম বলতে চাই না যাকে আপনারা সবসময় দেখেন, যিনি সব ব্যবসাগুলো করাত্ব করছেন তিনি আবার সেই এয়ারবাস নিয়ে এসেছেন যে, আবার যদি একটা বড় ফান্ড তৈরি করা যায় আর সেই ফান্ডে একদিকে নির্বাচনেও কাজ হবে আবার তাদেরও পকেট ভর্তি হবে। আজকে সমস্ত কিছুর লক্ষ্য একটাই নিজেদের পকেট ভর্তি করা এবং সেই টাকা বিদেশে পাচার করা।”

 

বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে প্রয়াত গৌতম চক্রবর্তীর সম্পৃক্ততা দেখে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের চলমান আন্দোলনে আরো সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

 

হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার ও মহাসচিব তরুন কুমার দে‘র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উপদেষ্টা   অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, তপন চন্দ্র মজুমদার, সুশীল বড়ুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান অর্পনা রায়, নিতাই চন্দ্র ঘোষ, রমেশ দত্ত, প্রয়াত নেতার ছেলে গৌরব চক্রবর্তী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

 

অনুষ্ঠান গৌতম চক্রবর্তীর সহধর্মিনী ও ফ্রন্টের উপদেষ্টা দিপালী সাহা চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন