২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:০৭:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


নির্বাচনের পরও কাটেনি গুমট পরিস্থিতি
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০১-২০২৪
নির্বাচনের পরও কাটেনি গুমট পরিস্থিতি


সাধারণ মানুষের পাশাপাশি খোদ সরকার সমর্থক কিম্বা বিরোধী দল, সবার মুখে এক কথা। কী হতে চলেছে। কী হবে? এ এক গুমট পরিস্থিতির কবলে বাংলাদেশ। স্বাভাবিক নিয়মে বা সংবিধান অনুসারে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন। এ নিয়ে এখন আর কারোর সন্দেহের সুযোগ নেই। নির্বাচন শেষে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের শপথ সম্পন্ন। মন্ত্রিপরিষদসহ দায়িত্বশীলরা যার যার কাজে মন দিয়েছেন। দেশের প্রধান প্রধান বিরোধী দলসমূহও বড় কোনো আন্দোলনে নেই। অনেকটা নীরবে তারা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন। 

অন্যসব সময় এমনি মুহূর্তে সবার মাঝে থাকে পরিতৃপ্তির নিঃশ্বাস। বিরোধীরা হতাশ এটা বরাবর। কিন্তু এবার সরকার সমর্থক ও বিরোধী দলের সর্বত্র এক ধরনের হতাশা। গুমট ভাব। সবই হলো। নির্বাচন থেকে শুরু করে নতুন সরকার গঠনের সবকিছু। এরপরও কিছু যেন বাকি। কিছু এখনও হতে পারে? এমন এক সন্দেহের দোলাচাল যেন সর্বত্র। যার প্রতিফলন সরকারি দল ও বিরোধী দলের নেতাদের কথাবার্তাতেও ফুটে উঠছে বারবার। যা খবরের পাতায় চোখ বুলালে ভেসে উঠছে প্রতিনিয়ত। 

প্রশ্ন এখানে। কী বাকী। এরপর আবার কী হতে পারে? নতুন সরকার ও টানা চারবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া শেখ হাসিনাকে কে অভিনন্দন জানায়নি, তা এখন হাতে গোনা। যার অর্থ বিশ্বের বহু দেশ এ নতুন সরকার ও সরকার প্রধানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, এ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। যার মধ্যে রয়েছে ভারত, চীন, রাশিয়াসহ ৩০টি বেশি দেশ। এরপর অপূর্ণতা কোথায়? সেটা খুঁজতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে একটা অপূর্ণতা ফুটে উঠেছে। 

গত ২১ জানুয়ারি রোববার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কারও রিকগনিশনের জন্য চাতকের মতো অপেক্ষায় বসে আছি, নির্বাচিত সরকার এমন দেউলিয়া অবস্থায় পড়েছে-এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।’ আরেকবার তিনি সরকারের ওপর দেশি-বিদেশি চাপ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশি- বিদেশি চাপ প্রসঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ’চাপ বিদেশ থেকে আছে। দেশে তো আছে। আমরা সব মোকাবিলা করার সক্ষমতা রাখি।’ একই সময়ে তিনি বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নতুন নির্বাচনের দাবিকে মামাবাড়ির আবদার বলে উল্লেখ করেন। ১৩ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে। এ সরকারকে হটাতে তারা বিদেশি বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে আছে। বিরোধীরা মনে করছেন কম্বোডিয়ার মতো নিষেধাজ্ঞা আসবে।’ এ ছাড়াও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) ৭ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছে, ‘৭ জানুয়ারির ভোট এক পাক্ষিক, পাতানো।’ এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক হয়েছে প্রচুর। নির্বাচনে না যেয়ে ক্ষমতায় যেতে ব্যর্থ হওয়ারা অনেক কথাই বলবেন এটাই স্বাভাবিক। তাতে নতুন সরকারের কিছু যায় আসে না। তবু কয়েক ড’জন দেশের অভিনন্দন ও নতুন সরকারের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবার অঙ্গীকার পূর্ণব্যক্তের পরও ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য সমালোচনার পথ উম্মুক্ত করেছে। 

বলার অপেক্ষা রাখে না- সে দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর ওই দুই দেশ বলে দিয়েছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হয়নি। এরপর থেকেই এক রকম অশ্বস্তি। এমপিদের শপথ, মন্ত্রী পরিষদ গঠন ও শপথ, সবকিছুতেই একটা অন্যরকম তাড়াহুড়া। 

বিশ্বের পরাশক্তিধরদের মধ্যে এ দুই দেশের বক্তব্যটা কুড়ে খাওয়ার অর্থ রয়েছে। কারণ নির্বাচনের প্রায় এক বছর আগ থেকে বলে আসছিল যে বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক। এ নিয়ে দীর্ঘ ফিরিস্তি আছে দেনদরবারের। কিন্তু এগুলোকে মোটেও আমলে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে যায়নি নির্বাচন কমিশন বা সরকার। যার কারণে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি, জাময়াতসহ বিশাল তালিকার একটি অংশ নির্বাচনে যায়নি। এখানে ওই দুই দেশের অসন্তুষ্টি। 

এরপরও নির্বাচনের পর ওই দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বলেছে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবে। বলেনি নতুন যে সরকার এটা অবৈধ, বা তাদের সঙ্গে কাজ করবে না তারা। এখানেও রহস্য। সরকার সমর্থক দল বলছে, নির্বাচন মেনে নিয়ে ওই দুই দেশ এ সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়া ও এ সরকারের মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও উপস্থিতি প্রমাণ দেয় সব কিছু স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। 

বাংলাদেশে নতুন সরকারকে অবৈধ বলার সুযোগ নেই অন্য কোনো দেশের। সেটা হলে তাদেরকে এ দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে হবে। চলে যেতে হবে এ দেশে তাদের কর্মকাণ্ড গুছিয়ে। বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনেক দেশের জন্য। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের রয়েছে নানা রকম বাণিজ্য। ফলে ‘অবৈধ’ বলে দেশ ছেড়ে যাবেন না তারা মোটেও। বরং বাংলাদেশের সঙ্গেই তারা রয়েছেন। থাকবেনও। এছাড়া বাংলাদেশে শুধু ব্যবস্য বাণিজ্যই নয়, রয়েছে ভূরাজনৈতিক বহু বিষয়ক সম্পর্ক। সেটা রক্ষা করতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে নীবিড়ভাবে কাজ করা জরুরি। 

তাহলে কী হতে চলছে। প্রশ্ন এখানেও। ওই দুই রাষ্ট্র তাহলে কী সব মেনে নিয়েছে? কেউ বলছেন হ্যাঁ, তারা সব মেনে নিয়েছে বা ম্যানেজড হয়েছে। কেউ বলছে না। ম্যানেজড হয়নি, মেনেও নেয়নি। 

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, ভারত তার আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থেই আওয়ামী লীগ সরকারকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় অব্যাহতভাবে চাচ্ছে। বাংলাদেশের হয়ে ভারতই ম্যানেজ করেছে তাদের প্রবল বন্ধুপ্রতীম দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে। ফলে এ সরকার আবারও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে। শুধু এখানেই শেষ নয়, ভারতের স্বার্থে যতদিন প্রয়োজন ঠিক ততদিনই তারা সাপোর্ট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রাখবে। কারণ এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারতের দুশ্চিন্তা কমে গেছে। দীর্ঘদিন থেকে তাদের অত্র অঞ্চলে থাকা সেভেন চিস্টারসহ অনেকস্থানে শান্তি বজায় রয়েছে। ফলে ভারত মনে করে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের জন্য আর্শিবাদ। বাংলাদেশের স্বার্থে ও ভারতের বৃহৎ স্বার্থে আওয়ামী লীগ সরকারই যথার্থ। এবং এ জন্য যত দেনদরবার সেটা তারা করতে মোটেও পিছপা হবে না। বিএনপিসহ দেশের প্রধান বিরোধী দল ইতিমধ্যে এমন দৃষ্টিকোন থেকে ইদানিং ভারত বিরোধী কথাবার্তা শুরু করেছেন। ইতিপূর্বে যেসব কথা এ দলসমূহের নেতৃবৃন্দের মুখ থেকে শোনা যায়নি, ইদানিং সেটাই শোনা যাচ্ছে। 

শুনতে অবাক লাগলেও এটা বাস্তব যে ভারতের মত বাংলাদেশের তিন দিক বেষ্টিত একটি পরাশক্তির দেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল বিরোধীতা করছে। দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা এ দলসমূহের কাছে হয়তো এর কোনো যৌক্তিকতা রয়েছে! 

নতুন প্রশ্ন উঠতেই পারে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কী সত্যিই ম্যানেজড । তাহলে এক বছর আগ থেকে বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং এটাতে বাঁধাদানকারীদের নতুন ভিসানীতির আওতায় নেয়ার এতসব ঘোষণা, ভয়ভীতি দেখানো সব কিসের স্বার্থে? তারা যে বলেছিল, তারা যা করছে বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদার কথা বিবেচনা করে। এমনকি প্রেসিডেন্ড জো বাইডেন সারা বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে মিশন নিয়ে কাজ করছেন তার অংশ বিশেষে বাংলাদেশেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে কাজ করেছেন। এ জন্য তারা গত দুইবার বাইডেন প্রশাসনের যে গণতান্ত্রিক সম্মেলন বিশ্বের গণতন্ত্রমনা দেশসমূহকে নিয়ে সেখানে বাংলাদেশকে আমন্ত্রন জানায়নি। এবার কী তাহলে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পাবে নাকি এবারও বাদ পড়বে। নাকি বাংলাদেশে তাদের অন্য কোনো নীতি কাজ করছে- এমন হাজারো প্রশ্ন উঠতে শুরু। পরিস্থিতি এজন্য ঘোলাটে মনে হচ্ছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী করতে পারে 

মার্কিনীরা চাইলে পারে অনেক কিছুই। তারা এমন এক দেশ, তাদের কিছু করতে হলে কারোর কাছেই মদদ বা অনুমতির প্রয়োজন পড়ে না। বিশ্বের নম্বর ওয়ান পরাশক্তি কখন কী করবেন সেটা শুধু তারা নিজেরা জানেন। কাউকে ধারণা করতেও দেয় না। পরাশক্তিরা এমনই হয়। 

তবে বাইরে থেকে কিছু বিষয় আচ করা যায় মাত্র। যা তাদের চলন, বলন ও কথনেও কখনও কখনও টের পাওয়া যায়। যেমনটা বাংলাদেশের বেলায়। যেভাবে তারা চেয়েছিল সেভাবে নির্বাচনটা হয়নি বাংলাদেশে- এটা ইতিমধ্যে তারা বলে দিয়েছে নির্বাচনের পরপরই। তার অর্থ নির্বাচন প্রসঙ্গটা তারা এক্ষুনি ছেড়ে দেয়নি। এ নিয়ে তাদের অনেক কাজ এখনও বিদ্যমান। কবে- সেটা তারাই ভাল বুঝবেন! 

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পরই যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি খুবই তৎপর্যপূর্ণ। স্বল্প কথা। কিন্তু যার দিক নির্দেশনা বা ইশারা সুদূরপ্রসারী। এটা ঠিক, মার্কিনীরা প্রয়োজনের বাইরে একটি কথাও যেমন বলেন না, তেমনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু করেনও না। যা তারা করেন তা নিজেদের স্বার্থে। অন্যের স্বার্থের চোখ রেখে একটি টাকাও তারা খরচ করবে না। আর বন্ধুর জন্য। এটা তো একটা প্রবাদই রয়েছে, ‘মার্কিনীদের বন্ধু আছে যে তার আর শত্রুর প্রয়োজন নেই।’ বহু পূর্বের প্রবাদ বাক্য। এমনিতেই কী এ কথাগুলোর প্রচলন? 

দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার ৮ জানুয়ারিতে এক বিবৃতিতে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের প্রতি তাদের আকাক্সক্ষাকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র দেখেছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বেশিরভাগ আসনেই জয়লাভ করেছে। 

“যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাজারো সদস্যদের গ্রেপ্তার ও নির্বাচনের অনিয়মের খবরে উদ্বিগ্ন। অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত যে, এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি এবং সব দল এতে অংশ না নেওয়ায় আমরা হতাশ।” ম্যাথু মিলারের বিবৃতিতে বলা হয়, “সব দলকে আমরা সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান জানাই।” 

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, “বাংলাদেশে মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজের প্রতি অব্যাহত সমর্থন, দুই দেশের জনগণের মধ্যে ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের বন্ধন আরও গভীর করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” 

বিবৃতির প্রথমাংশে তারা বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের প্রতি তাদের আকাক্সক্ষাকে সমর্থন করে।” এটা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দলকে সমার্থন করছে না। তারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আকাঙ্খাকে (নিজের ভোট নিজে দেব, নিজের প্রতিনিধি নিজে বাছাই করে নেব) সমর্থন করে। যা আওয়ামী লীগ ও তাদের দলের লোকদ্বারা যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচন হয়েছে, সেটাকে তারা সমর্থন করেনি। তার অর্থ তারা এখনও পূর্বাবস্থানে যথারীতি। তারা একটি অবাধ নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশী এখনও। সেটা সময় লাগলেও। 

৭ জানুয়ারির নির্বাচন যে তাদের প্রত্যাশা মোতাবেক হয়নি তার সমর্থনে তারা বলছে, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাজারো সদস্যদের গ্রেপ্তার ও নির্বাচনের অনিয়মের খবরে উদ্বিগ্ন। অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত যে, এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি এবং সব দল এতে অংশ না নেওয়ায় আমরা হতাশ।” এখানে তারা তাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার সেটা তারা বলে দিয়েছে- এর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। 

তৃতীয়ত তারা বলেছে, “বাংলাদেশে মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজের প্রতি অব্যাহত সমর্থন, দুই দেশের জনগণের মধ্যে ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের বন্ধন আরও গভীর করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” 

এ অংশের শেষাংশে মূলত তাদের মূল পরিকল্পনার কথা। বাংলাদেশের জনগণ ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের বন্ধন তারা আরো গভীর করতে চায়। সঙ্গে একটি অবাধ ও মুক্ত প্যাসেফিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যার অর্থ দাঁড়ায় ইন্দো প্যাসেফিকে মার্কিনীরা যে মনে করছে- ইন্দো প্যাসেফিকে অবাধ, মুক্ত অঞ্চলে চীন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে এ জন্য বাংলাদেশের সমর্থন তারা যে চেয়ে আসছিল এখনও সে সমর্থন প্রত্যাশা এখনও অব্যাহত রেখেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার যদি ওই প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয় তাহলে তারা এখানেই সবকিছু হয়তো ইতি টানবে। সবকিছুই চলবে ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচনের পরের মত। নতুবা ওই প্রত্যাশা পূরণে তাদের মনের মাঝে লুকায়িত যে প্লান, সেটা পূরণে একটু দেরিতে হলেও সফল হওয়ার পরিকল্পনা থেকে মোটেও দূরে সরেনি তা একটা ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে তাদের ওই বিবৃতির বিশ্লেষণ বলছে। ফলে বর্তমান গুমট পরিস্থিতি ক্লিয়ার হতে হয়তো কিছুটা সময় লাগতে পারে বৈকি!

শেয়ার করুন