২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৩:৪৩:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বিসিবি-সাকিব রহস্যটা আমার বুঝে আসেনা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৪-২০২২
বিসিবি-সাকিব রহস্যটা   আমার বুঝে আসেনা এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপরত সাকিব আল হাসান: ফাইল ছবি


দেশকে রফিকুল ইসলাম বাবু

সাকিব মানেই একটা ‘হট ইস্যু’ ক্রিকেটাঙ্গনে! কোনো না কোনো ইস্যুতে সাকিব প্রায় আসেই। আর তোলপাড়ও হয়। এটা এখন নতুন কিছু না। সাকিব খেলতে চান না। সাকিব দুর্দান্ত পারফরমেন্স করেছেন। সাকিব বিজ্ঞাপন করছেন। সাকিব হটাৎ ছুটি নিয়ে আমেরিকাতে। খেলোয়াড়দের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সাকিব। ঘরোয়া ক্রিকেটে সাকিবে তোলপাড়। মাঠে আম্পায়ারের সঙ্গে সাকিবের হট টক। এরকম হাজারো ইস্যুতে সাকিব আর সাকিব। 

এবারও সাকিবে তোলপাড়। প্রসঙ্গ দক্ষিন আফ্রিকায় খেলতে যাবেন কি, যাবেন না সাকিব সেটা নিয়ে। সাকিব সরাসরি কিছু বলছেন না। বিসিবিও সরাসরি সাকিবের সঙ্গে আলাপ করছে না। এই যে দুইয়ের ম্েযধ তফাৎ। এ সুযোগটাও নেয় মিডিয়া। শুরু হয়, তিল থেকে তাল। অথচ সাকিব বিসিবি’র কন্ট্যাক্টের খেলোয়াড়। বিসিবি না চাইলে সাকিবের কোনো কিছু করারই সাধ্য নাই। বিসিবি অধিকার রাখেন সাকিবের ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়ারও। কিন্তু এরপরও সাকিব বিসিবিকে প্রচন্ডরকম টেনশনে রাখে। বিসিবিও তার পেছনে পেছনে ঘুর ঘুর করে। 

দক্ষিন আফ্রিকা সফরে অনেক নাটকীয়তার পর সাকিব নিজেই গিয়েছেন। খেলেছেন ওয়ানডে সিরিজ। টেস্টে খেলতে পারেননি, পারিবারিক সমস্যার দরুন। কিন্ত দক্ষিন আফ্রিকা সফর কেন্দ্র করে ঘটে যায় তোলপাড়। অবশ্য সেটা পুরানো ইস্যু এখন।  এ ব্যাপারে দেশ’র সঙ্গে কথা হয় বিশিষ্ট ক্রিকেট সংগঠক ও বিসিবি’র সাবেক যুগ্ন সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে। 


দেশকে রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন,‘আমি আসলে রহস্যটা বুঝি না। কেন সাকিব ও বিসিবি’র মধ্যে একটা লুকোচুরি ভাব। সাকিব কন্ট্যাক্টের খেলোয়াড়। বিসিবি যা চাইবে সেটা করতে হবে সাকিবকে।

কারন জাতীয়দলের প্রতি তার দ্বায়িত্ববোধ রয়েছে। জাতীয় স্বার্থে তাকে সময় দিতে হবে। খেলতে হবে।

আবার সাকিবেরও একটা অধিকার রয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা, দুর্বলতা, ফ্যামেলী ইস্যু সব কিছুর জন্য তাকেও ছাড় দিতে হবে যদি সে চায়। এটা যা হবে দুইয়ের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে। কিন্তু সেটা


রফিকুল ইসলাম বাবু 


কেন হচ্ছেনা। কেন এ প্রসঙ্গ নিয়ে ওপেন কথা হবে আমার বোধগম্য না।’ তিনি বলেন,‘আমি মিডিয়াতে যতটুকু দেখেছি, সেখানে বলা হচ্ছে সাকিব সরাসরি বলছে না। ইশারা ইঙ্গিতে বলছে। এটা তো কথা না। সাকিব একের মধ্যে তিন। সাকিব দলে না থাকলে নতুন করে দল সাঝানো প্রয়োজন।

ফলে সাকিবকে তো আগেই ক্লিয়ার করতে হবে। এরপর দল সাঝানো। কিন্তু বিসিবি সেটা না করে সাকিবের পেছনে ঘুর ঘুর এটা কোন ধরনের নীতি। বিসিবি বলতে পারে, তুমি ফিট, তুমি ব্যাটিং,বোলিং, ফিল্ডিং তিনটিতেই সেরা। একটা না পারলে অন্য দুটি দিয়েও তুমি পুষিয়ে দিতে পার। তুমি দলে থাকলে অন্যরাও উজ্জিবীত থাকে। তুমি অবশ্যই খেলবে।’ সাকিবের বক্তব্য থাকলে সে ক্লিয়ার করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেন যেন একটা ঘোরপ্যাচ। এটা মোটেও উচিৎ না। কারন এটা ন্যাশনাল ইন্টারেষ্টের বিষয়। ছেলে খেলা নয়। বা ব্যাক্তি স্বার্থ নয়।’ বাবু বলেন,‘আমার মনে হয় একটা মানসিক দ্বন্দ কাজ করছে এখানে। এটা ঝেড়ে ফেলতে হবে। পেশাদার বোর্ডের কোনোভাবেই অপেশাদারিত্ব দেখানোর সুযোগ নেই। এতে নতুবা ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশের ক্রিকেট।’  

এ ক্রিকেট সংগঠক বলেন,‘আসলে কষ্ট লাগে দেশের ক্রিকেট নিয়ে। সাকিবের বয়স কত। সে তার ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ প্রান্তে এটা বলা যায়। এ জন্যই হয়তো তার মানসিক অবস্থা ও শারিরীক অপ্রস্তুত থাকার প্রসঙ্গটা টেনে আনছেন না খেলার অজুহাতে। একজন প্রফেশনাল ক্রিকেটার কখনও এটা বলবে না। একবার এভাবে বললে দল থেকে বাদ পরে যাবে। কিন্তু কষ্ট লাগছে দীর্ঘদিনেও সাকিব,তামিম,মাশরাফির বিকল্প আমরা তৈরী করতে পারিনি। ব্যাকআপ সেভাবে থাকলে সাকিব বা সাকিবের মত ক্রিকেটাররা এভাবে কথা বলতে পারেন না। আমরা বিদেশী বোর্ডের দিকে তাকালেই এ ব্যাপারে ক্লিয়ার হয়ে যাব। তবে আমার যেটা মনে হয়, যেহেতু নেই, তাই সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে যাচ্ছেতা ব্যাবহারও করা যাবে না। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে আলোচনা করা যেতে পারে। মাশরাফির কথাই ভাবুন। মাশরাফি একরকম বিতাড়িত হয়েছেন। মাহমুদুল্লাহ’র ইস্যু। তামিমের সঙ্গে ব্যাবহার। সাকিব ইস্যুতেও অনেকের অনেক ধরনের কথা। মুশফিককে নিয়েও আছে টানা হেচড়া। এভাবে সিনিয়র ক্রিকেটারদের অসন্মান করা উচিৎ না। তারা দেশকে অনেক দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে যা করা হবে আলোচনার মাধ্যমেই করা উচিৎ। মাহমুদুল্লাহ চমৎকার এক ইনিংস শেলে ঘোষনা দিলেন রিটায়ার্টের। অথচ তাকে এখনও প্রয়োজন। কিন্তু কেউই তার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি। যখন দল ঘোষনা হলো, তাকে দলে রাখা হয়নি। তখন সে ফাইনাল ডিক্লেয়ার করলো টেষ্ট থেকে অবসরের। 

প্রতিটা ইস্যুই এমন। এখনও এ সিনিয়রদের ছাড়া মাঠে নামলে আমাদের রেজাল্ট ভাল হওয়ার কোনো লক্ষন দেখিনা। তরুনদের অবজ্ঞার সুযোগ নেই। কিন্তু ওরা যেহেতু অনভিজ্ঞ তাই এক ম্যাচ ভাল করবে অন্যম্যাচে আবার ব্যার্থ হবে। তাই প্রয়োজন সিনিয়র জুনিয়র কম্বিনেশন। ফলে যতদিন প্রয়োজন সিনিয়রদের দলে রাখা উচিৎ। বিশেষ করে বড় সিরিজগুলোতে এবং বিশ্বকাপে। ধরুন অষ্ট্রেলিয়াতে অনুষ্টিত আগামী বিশ্বাকাপে তামিম, সাকিব,মুশফিক,মাহমুদুল্লাহ যদি না খেলেন। দলের পারফরমেন্স কী হবে? এগুলো তো ভাবতে হবে। তরুনদের সময় দিতে হবে অভিজ্ঞতা অর্জনের। সাকিব, তামিমরা এখানে তো রাতারাতি আসেনি। অভিজ্ঞতা অর্জণ করেই তবে এখানে। এগুলো মাথায় রাখতে হবে।’ 

সাকিব প্রসঙ্গে বাবু বলেন,‘আমি যতদুর জানি সাকিব আইপিএলের আগে দেশের ক্রিকেট থেকে ৬মাসের জন্য ছুটি নিয়েছে। সাকিব আইপিএলে চান্স পায়নি ভাল। এখন ফ্রী। কিন্তু সে তো ছুটিতে। সে এখন খেলবে কি-না সেটা সম্পুর্ন তার ব্যাপার। বাংলাদেশ জাতীয় স্বার্থে তাকে চাইছে। সেটা তার সঙ্গে বসে বুঝিয়ে শুনিয়ে। হুট করে বললে তো হবে না যে ও ছুটি নিয়েছিল আইপিএলের জন্য এখন তো আইপিএলে খেলবে না। এখন জাতীয় দলে ফিরতে সমস্যা কী। এভাবে কথা বলা শোভনীয় নয়। তারও একটা মান মর্যদা আছে। আইপিএলের জন্য ছুটি নিয়ে চান্স পায়নি আবার জাতীয় দলে ফিরেছে এটাতে তার মর্যদাহানি হতে পারে সেটা হয়তো সে ভেবেছে। যেহেতু সে ছুটিতে সেটা সে আইপিএলে খেলে কাটাবে না ঘুরে ঘুরে কাটাবে এটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। সেখানে নাক গলানো উচিৎ?’ বাবু বলেন,‘আমার মনে হয় সিনিয়রদের সঙ্গে খুব একটা ভাল সম্পর্ক নেই বোর্ডের। সে জন্যই তামিম কখনও বলে খেলবো, আবার কখনও না। মাহমুদুল্লাহ,সাকিব- সব একই ফ্রেমে গাথা। মাঠের পারফরমেন্সের উপর যেহেতু অনেক কিছু নির্ভর তাই ক্রিকেটারদের যথার্থ সন্মান দেয়া বাঞ্জনীয় বলে আমি মনে করি। নতুবা ক্ষতিটা কিন্তু দিন শেষে দেশের ক্রিকেটেরই।’ 

শেয়ার করুন