পাসপোর্ট না থাকায় দেশে ফেরার ‘ট্রাভেল পাস’ পেয়েছেন ভারতে আটকে পড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। আর এতে করে তিনি বাংলাদেশে আসছেন বলে জানা গেছে। তবে এখনো ভারতে আরো কিছু আইনি প্রক্রিয়া বাকি আছে। যা সম্পন্ন হলেই সালাহ উদ্দিন দেশে চলে আসতে পারবেন। এছাড়া দেশে ফেরার আগে শারীরিক সমস্যা ও চেপআপ করিয়ে নেবেন। সেজন্য দিল্লী যেতে হবে তাকে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আট বছর আগে ভারতের বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্য মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে অনুপ্রবেশের মামলায় গ্রেপ্তার হন, তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। সেই মামলায় গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি খালাস পেলেও ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ না পাওয়ায় তিনি দেশে ফিরতে পারছিলেন না। কারণ তার কাছে পাসপোর্ট নেই।
গত ৮ মে গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ মিশনে আবেদন করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। এই পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দেশে ফেরার ট্রাভেল পাস ইস্যু করা সিদ্ধান্ত দেয় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ৮ জুন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতিক শাখার মহাপরিচালক রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের একথা জানিয়ে বলেছেন, এর ফলে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে এখন আর কোনো বাধা নেই।
বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী সচিব ছিলেন। পরে সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে নামেন। ২০০১ সালে কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য হন, পরে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পান। সালাহ উদ্দিন শিলংয়ে থাকা অবস্থায়ই বিএনপির কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি যখন আন্দোলন করছিল, তখন দলের যুগ্ম মহাসচিবের পদে ছিলেন সালাহ উদ্দিন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময়ে দলের মহাসচিবসহ অনেক সিনিয়র নেতাকে গ্রেফতার করা হলে সালাহ উদ্দিন দলের মুখপাত্র হিসেব আত্মগোপন থেকে গণমাধ্যমে কথা বলেতেন। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন তিনি। বিএনপি অভিযোগ তোলে, সরকারি কোনো সংস্থা তাদের নেতাকে তুলে নিয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দল থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। নিখোঁজ হওয়ার ৬৩ দিন পর ওই বছরের ১১ মে সিলেটের ওপারে মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতের প্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার দেখায় মেঘালয় থানা পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়। সেই মামলায় রায়ে এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি শিলং জজ আদালত বাংলাদেশের বিরোধী দলের এই নেতাকে খালাস দেয়। রায়ের পর সালাহ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তিনি দেশে ফিরতে উদগ্রিব।
গত ১২ জুন সোমবার দেশে ফেরার অনুমতি ‘ট্রাভেল পাস’ হাতে পেয়েছেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন সালাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, গতকালই ট্রাভেল পাস বাংলাদেশ মিশন থেকে পেয়েছি। এটি ৮ জুন ইস্যু করা হয়েছে। এখন দেশে ফেরার পথ খুললো। তবে এখনো ভারতে আরো কিছু আইনি প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে বলে জানান সালাহ উদ্দিন। কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, এই তো ট্রাভেল পাস পেলাম। দেশে ফেরার আগে শারীরিক সমস্যা ও চেপআপ করিয়ে নিতে চাই। সেজন্য দিল্লী যেতে হবে। যে হাসপাতাল আমি চিকিৎসা করিয়েছি সেখানের ডাক্তারদের দেখাতে হবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বেশ কিছু রোগে ভুগছেন দীর্ঘ দিন ধরে। গত ৫ বছর আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি শিলংয়ের বাইরে যেতে পারেননি। এসব কারণে তার চিকিৎসার ফলোআপ করতে পারেননি তিনি। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তার কিডনি ও ঘাড়ে দুইটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। এরও আগে বাংলাদেশে তার হার্টে তিনটি রিং বসানো হয়। তিনি বলেন, কবে দেশে ফিরবো এখনই বলতে পারছি না। কারণ শারীরিক যেসব সমস্যায় ভুগছি তা দেখানোর পর সময়সূচি ঠিক করতে পারবো। দেশ যাওয়ার প্রতীক্ষায় আছি। কিন্তু চিকিৎসাটা এখানে সেরে যেতে না পারল দেশে ফিরে কি অবস্থায় পড়বো তা নিয়ে শঙ্কাও আছি।