২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৪৭:২২ পূর্বাহ্ন


‘সক্রিয়’ নেতাদের গোয়েন্দারা ‘হুমকি’ দিচ্ছে - মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৬-২০২৩
‘সক্রিয়’ নেতাদের গোয়েন্দারা ‘হুমকি’ দিচ্ছে - মির্জা ফখরুল


দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে যেতে ‘সক্রিয়’ নেতাদের গোয়েন্দারা ‘হুমকি’ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

 তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের যারা এক্টিভ পলিটিক্স এবং ইলেকশন করছেন বা করবেন… এই ধরনের নেতৃবৃন্দকে গোয়েন্দা তুলে নিয়ে যাচ্ছে এবং তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, তোমরা নির্বাচন করবা যদি বিএনপি নির্বাচন না করে তাও। আমি আপনাদেরকে (গণমাধ্যম) আজকে প্রকাশ্যেই বললাম। আই হেভ লট অব লিডারস যারা এ অভিযোগ করেছে। আমরা কোন দেশে বাস করছি? এটা একটা মধ্য যুগীয় বর্বর যুগে আমরা বাস করছি। এই সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য এমন কোনো হেন কোনো অন্যায় নাই যে তারা করছে না।”

 

‘ওরা দেশের ভূ-রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ কি রকম মরিয়া হয়ে গেছে যে, দেশের ক্ষতি করতেও তারা দ্বিধা করছে না। জানে যে, এই দেশের যে অবস্থা সেই দেশের আজকে অন্যান্য দেশ সম্পর্কে তারা যে কমেন্টস করছে, যে কথাগুলো বলছে এটা আমাদের দেশের ভূ-রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এবং আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি ইতিমধ্যে । এই ধরনের কথা-বার্তাগুলো কোনো দায়িত্বহীন নেতা বলতে পারেন, বিশেষ করে সরকার চালাচ্ছেন যিনি তিনি বলতে পারেন… এটা আমরা কল্পনা করতে পারি না। যারা আমরা সুস্থ রাজনীতিতে বিশ্বাস করি আমরা মনে করি যে, তাদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তারা পরিস্কার বুঝতে পেরেছেন এবং আগে থেকেই বুঝতে পেরেছেন যে তাদেরকে জনগন আর গ্রহন করবে না। তাই কোনোভাবেই তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা শুনছেন না, একেবারে ওদিকে যাচ্ছেনই না।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ তাদের একটাই কথা হচ্ছে যে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে সেই সংবিধান কে কাটাছেড়া করেছে? সেই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হলে তো অবশ্যই এয়োদশ সংশোধনীতে যে কেয়ারটেকার সরকার ছিলো সেটাই থাকবে এবং সেটা থাকা উচিত। সেটা ছিলো কনসেন্সাসের ভিত্তিতে একটা রাজনৈতিক একটা সিদ্ধান্ত একটা বন্দোবস্তো হয়েছিলো সব দলগুলো মিলে।সেখান থেকে সরে গিয়ে নিজেরা বেমালুম একতরফাভাবে শুধু নিজেদের ক্ষমতায় রাখার জন্য একাজগুলো করেছেন। আর এখন। যখন আপনার নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে আবার একতরফা নির্বাচন করার জন্য, আবার ক্ষমতায় হাইব্রিড রেজিমের মতো চলে যাওয়ার জন্য প্রশাসনকে ব্যবহার করে আপনারা সেভাবে যেতে চান। কিন্তু মানুষ তো ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মানুষ প্রতিবাদ করছে,মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। এবার সেটা মানুষ করতে দেবে না।”

 

প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ রাষ্ট্রযন্ত্রের যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, যারা আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত তাদের কর্মকর্তাদের আমরা অনুরোধ জানাতে চাই যে, দয়া করে সাংবিধানিক কাজের সঙ্গে নিজেদের জড়িত করবেন না এবং জনগনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। এদেশের মানুষ তারা বরাবরই যেকেনো অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, যেকোনো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, যেকোনো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের অধিকার আদায় করে নিয়েছে। এখনো তারা অধিকার আদায় করে নেবে। জনগনের যেটা আশা-আকাংখা সেটাতে পুরণ করবার জন্যে আমরা আশা করব, যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি যাদের দায়িত্বশীলতা শুধু জনগনের প্রতি, সেই জনগনের প্রতি তাদের দায়িত্বশীলতা পালন করবেন। এই ধরনের অন্যায়-বেআইনি নির্দেশের ফলে আপনারা এ ধরনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকে ব্যাহত করবেন না। এটা সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা। জনগন যেখানে তার অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে, তার সাংবিধানিক অধিকার প

ফিরে পেতে চাচ্ছে সেই অধিকারের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে এভাবে বাধাগ্রস্থ করা, গ্রেফতার করা, নির্যাতন করা নাগরিকদেরকে… এটা ভয়াবহভাবে রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামীল বলে আমরা মনে করি। দয়া করে এটা থেকে বিরত থাকুন, জনগনের সঙ্গে আসুন।”

 

‘সরকারের প্রতি’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এখনো সময় আছে আপনারা জনগনের ভাষা বুঝতে পেরে, জনগনের চাহিদা বুঝতে পেরে আপনারা পদত্যাগ করুন, একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন এবং সংসদ বিলুপ্ত করে একটা নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।অন্যথায় দেশের মানুষ তাদের অধিকার আদায় কিভাবে করে নিতে হয় তারা তা জানে।”

 

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মহানগর দক্ষিনের নেতা-কর্মীদের ওপর মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দায়েরের বিষয় নিয়ে কথা বলতে বিএনপি মহাসচিব এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন।

 

মহানগর দক্ষিনের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুব দলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাবেক মহানগর সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর আলম, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন, মহানগর দক্ষিন বিএনপির শেখ রবিউল আলম রবি, হারুনুর রশীদ হারুন, ওবায়দুর রহমান লিটন, আরিফুল ইসলাম আরিফসহ মহানগর দক্ষিনের গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তিসহ তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলাসমূহ প্রত্যাহারের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘  ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে গায়েবী মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই কাজটি এখন পুরোপুরিভাবে শুরু হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই আমাদের এক্টিভ নেতাদের জেলে আটকিয়ে রাখা। এসব নেতাদের জামিন হচ্ছে উচ্চ আদালত থেকে কিন্তু তাদেরকে আরেকটা মামলা দিয়ে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। একটা ভয়াবহ অবস্থা।”

 

সংবাদ সম্মেলনে মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকন, আবদুস সাত্তার, লিটন মাহমুদ, হাজী মো. মনির হোসেন, আনম সাইফুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিন যুব দলের সাঈদ হাসান মিন্টু, খন্দকার এনামুল হক এনাম, মহানগর দক্ষিন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইদ মোরশেদ পাপ্পা, মহানগনর দক্ষিন কৃষক দলের হাজী মো. কামাল হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন বাদশা ও পূর্ব ছাত্র দলের মোহাম্মদ আল আমিন প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

 


শেয়ার করুন