২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:৩৯:৫৯ পূর্বাহ্ন


মালদ্বীপের বিরুদ্ধে একচেটিয়া খেলে ৩-১ জয়
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী বার্ষিকীতে স্বস্তির জয় বাংলাদেশের
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৬-২০২৩
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী বার্ষিকীতে স্বস্তির জয় বাংলাদেশের


১৯৮৫ থেকে ২০২৩ দীর্ঘ তিন যুগের বেশি সময় পর দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের একসময়ের নান্নি মুন্নি দল মালদ্বীপের বিরুদ্ধে একচেটিয়া খেলে ৩-১ জয় পেলো বাংলাদেশ। কাল ছিল বাংলাদেশের স্বপ্নের  পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের প্রথম বার্ষিকী। ভারতের বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠারত সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩ বাংলাদেশের জন্য ছিল বাঁচা মরার লড়াই। টুর্নামেন্টে ভালোমত টিকে থাকার জন্য ইদানিং শক্তিশালী মালদ্বীপের বিরুদ্ধে জয় ছাড়া বিকল্প ছিল না।

ফিফা রাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯২, মালদ্বীপ সেখানে ১৫২। এছাড়া ২০০৩ এর পর মুখোমুখি হয়ে জয় পায়নি বাংলাদেশ, সমীকরণ এমন ছিল জয় পেলে উৎরে যাবে বাংলাদেশ। ড্র হলে কঠিন সমীকরণ শেষ ম্যাচ নিয়ে। দুই গ্রুপে বিভক্ত বাংলাদেশ গ্রুপে শীর্ষে শক্তিশালী লেবানন। প্রথম ম্যাচে ভালো খেলে নিজেদের ভুলে ০-২ হেরেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভুটানকে ২-০ হারিয়ে স্বস্তির অবস্থানে মালদ্বীপ। কাল কিন্তু পরিবর্তিত বাংলাদেশ উজ্জীবিত ফুটবল খেলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মালদ্বীপকে কোনঠাসা করেই ৩-১ দাপুটে জয় তুলে নিয়েছে। ১৯৮৫ সালে সাফ গেমসে মালদ্বীপকে ৮-০ বিশাল ব্যাবধানে হারানোর পর এই প্রথম বাংলাদেশ ওদের বিরুদ্ধে বড় ব্যাবধানে জয় পেলো। নিজেদের মধ্যে খেলা গত ৬ ম্যাচের ৫ টিতেই জয় পেয়েছিলো মালদ্বীপ। বাংলাদেশ ফুটবলের নানা সংকট সময়ে এই জয় বাংলাদেশ ফুটবল সমাজের জন্য বিশেষ টনিক হিসাবেই কাজ করবে।

কাল কিন্তু বাংলাদেশ গোটা ম্যাচেই সমানতালে খাটো পাসে গোছানো ফুটবল খেলেছে।  রক্ষণ ভাগ ছিল জমাট বাধা। সৃজনশীল মধ্যমাঠ নিজেদের রক্ষণ ভাগ থেকে সূচিত আক্রমণগুলো বিন্যস্ত করে কখনো মাঝ মাঠের সামনে দাঁড়ানো দুই স্ট্রাইকার ,কখনো দুই প্রান্তে সরবরাহ করে মুহুর্মুহ মালদ্বীপের রক্ষণ ভাগ কাঁপিয়ে দিয়েছে। রক্ষণ ভাগ থেকে বার বার উপরে উঠে তপু বর্মন লাফিয়ে উঠে হেড করে গোল করার প্রচেষ্টা নিয়েছে। বিশ্বজিৎ ঘোষ ওভারল্যাপ করে উইং থেকে হাওয়ায় ভাসিয়ে ক্রমাগত বল ফেলেছে। লম্বা থ্রো ইন এবং রসালো কর্নার করে গোলের মুখ বার বার খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশের মুহুর্মুহ আক্রমণের মুখে কাল মালদ্বীপকে অনেকটা অসহায় মনে হয়েছে। ঠিক যেমন দেখতাম ১৯৮০ দশকে মালদ্বীপ, ভুটান , নেপালকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। কাল কিন্তু জামাল ভূঁইয়া, তারেক কাজী, তপু, হৃদয়, রকিব, ফাহিম, বিশ্বজিৎ সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেছে চরম নিষ্ঠার সঙ্গে। আর তাই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ মালদ্বীপকে কোনঠাসা করে রেখেছে শুরু থেকে শেষ অবধি। তবুও খেলার ধারার বিরুদ্ধে ১৮ মিনিট হামজার দূর পাল্লার নিশানাভেদী শটে গোল খেয়ে ০-১ পিছিয়ে পরে।  হতোদ্যম হয় নি বাংলাদেশ। কাল নতুন কৌশলে খেলেছে হাভিয়ের কাবরেরার দল। মাঝ মাঠে চার মিডফিল্ডারের সামনে দুই স্ট্রাইকার হৃদয় আর রকিব। ক্রমাগত আক্রমণের ঢেউ মালদ্বীপ রক্ষণ ভাগকে প্লাবিত করে ফেলে। বার বার এগিয়ে এসে তপু আক্রমণকে জোরগার করে। এমনি এক ক্রস থেকে তপুর মাথার গ্যান্সিং হেড সুযোগসন্ধানী রকিবের মাথার ছোয়ায় জালে পৌঁছালে ৪২মিনিট ১-১ সমতা।  

বিরতির পর একই ধারায় খেলতে থাকে জয়ের নেশায় বাংলাদেশ। কোচ তিনটি মোক্ষম পরিবর্তন করেন। জামাল ভূঁইয়ার জায়গায় আসে তরুণ প্রতিশ্রুতিবান মোরসালিন, সোহেল রানার জায়গায় মজিবুর রহমান এবং রকিবের জায়গায় ইব্রাহিম। তিন জন গতিময় কুশলী খেলোয়াড়। খেলার ৬৭ মিনিটে ইব্রাহিমের কর্নার থেকে গোল মুখে জটলা সৃষ্টি হলে গোল করে দলকে ২-১ এগিয়ে নেয় তারিক কাজী। স্মরণে থাকবে আগের ম্যাচে তারিকের ভুলে গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ লেবাননের বিরুদ্ধে। কাল গোল করার কিছু পরে আহত হয়ে মাঠ ছারে তারিক।  ওর স্থানে মেহেদী এসে নতুন উদ্দমে খেলতে থাকে। মালদ্বীপ গোল পরিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে কয়েকটি প্রতি আক্রমণ করলেও বাংলাদেশের রক্ষণ ভাগ সামলে নেয়. বাংলাদেশ আক্রমণের ধারা বজায় রাখে। খেলার অন্তিম মুহূর্ত ৯০ মিনিট তরুণ প্রতিশ্রুতিময় খেলোয়াড় মোরসালিন গোল করে ৩-১ ব্যাবধানে তৃপ্তি দায়ক জয় এনে দেয়।  বহুদিন পর বাংলাদেশের এই কাঙ্খিত জয় বলা যায় সাফ ফুটবল ২০২৩ দলকে প্রায় নিশ্চিত সেমী ফাইনালের দারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। গ্রুপ শীর্ষে আছে লেবানন। দুই ম্যাচে এক জয় ,এক পর্যায়ে সমান্তরালে বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপ। তবে বাংলাদেশের শেষ খেলা অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ ভুটান আর মালদ্বীপকে খেলতে হবে শক্তিশালী লেবাননের বিরুদ্ধে। 

যাক সেসব কথা. বদলে যাওয়া বাংলাদেশ একই ধারায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলতে পারলে দেশ প্রবাসে থাকা নিযুত ফুটবল প্রেমী বাংলাদেশিরা স্বপ্নের জাল বুনতেই পারে। সাফ ফুটবলে একটি শিরোপা বাংলাদেশ ফুটবলকে আধার থেকে আলোর পথে এগিয়ে দিতে বড় ভূমিকা পালন করবে সন্দেহ নেই। আমি কাল খেলা বাংলাদেশ ফুটবল ব্র্যান্ড পছন্দ করেছি। শুধু যদি সুযোগ সন্ধানী পরিণত স্ট্রাইকার থাকতো চার পাঁচ গোলের ব্যাবধানে জয় পাওয়া সম্ভব ছিল। 


শেয়ার করুন