২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:১২:৪৯ পূর্বাহ্ন


প্রাচুর্যের অভিশাপ
বিপিডিবি-পেট্রোবাংলা বিপুল দেনা নিয়ে প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়েছে
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০২-২০২৪
বিপিডিবি-পেট্রোবাংলা বিপুল দেনা নিয়ে প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়েছে


২৯ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশ এখন আসন্ন গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কোনো দেশে চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রিজার্ভ মার্জিন থাকে না। বাংলাদেশে দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন বিশেষ আইনের অধীনে ব্যক্তিখাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই কথা থেকে প্রাথমিক জ্বালানি আসবে, সঞ্চালন সক্ষমতা আছে কি না বাছবিচার করা হয়নি। কঠিন চ্যালেঞ্জ জেনেও নিজেদের গ্যাস, কয়লা আহরণ এবং ব্যবহার উপেক্ষা করে আমদানিকৃত জ্বালানির দিকে ঝুঁকে পড়েছে বাংলাদেশ। এমতাবস্থায় বিপুল উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর সংকট। সময়মতো নিজেদের গ্যাস আহরণ এবং ব্যবহারের উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রমাণিত গ্যাসসম্পদ নিঃশেষ হয়ে আসছে। 

কয়লাসম্পদ মাটির নিচে। জ্বালানির আমদানি অবকাঠামোর সক্ষমতা সীমিত। সর্বোপরি বাংলাদেশের দুর্বল অর্থনীতি নানা কারণে বিক্ষুব্ধ বিশ্বজ্বালানি বাজার থেকে উঁচুমূল্যে জ্বালানি কেনার সক্ষম নয়। অথচ অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অলস বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। সার্বিক অব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা, জ্বালানিমন্ত্রী এবং সচিবদের ভ্রান্ত কৌশল দায়ী। একশ্রেণির সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মহল জ্বালানি ব্যবস্থাপনার স্বেচ্ছাচারিতা থেকে ফুলে ফেঁপে লাভবান হয়েছে। বারবার মূল্যবৃদ্ধি করেও সরকারকে বিপুল পরিমাণ সাবসিডি দিতে হচ্ছে। তার পরও বিপিডিবি, পেট্রোবাংলার মতো সরকারি সংস্থাগুলো বিপুল দায়-দেনা নিয়ে প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। 

এবারে গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ চাহিদা প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। গ্যাস সংকটের কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বোচ্চ ৬৫০০-৭০০০ মেগাওয়াট হতে পারে। সেক্ষেত্রে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫ হাজার মেগাওয়াট হতে হবে। আদানির বিদ্যুৎসহ ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট আমদানি করা সম্ভব। বাকি প্রায় ৩৫০০-৪০০০ মেগাওয়াট তরল জ্বালানি থেকে উৎপাদন করতে হবে। সরকার যথাসময়ে জ্বালানি আমদানির প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা দিতে পারবে কি না তার ওপর নির্ভর করবে বিদ্যুৎ লোডশেডিং সহনীয় থাকবে কি না। 

কেউ স্বীকার করুক বা না করুক সরকার আমলানির্ভরতা, সুশাসনের অভাব এবং দুর্নীতি বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। বিএনপি-জামায়াত আমলে কেমন ছিল অবস্থা সেই প্রসঙ্গ তোলা এখন অবান্তর। জ্বালানি সংকট সবাইকে নিয়ে মোকাবিলা করা এখন সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। 

শেয়ার করুন