২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:১২:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


দ. এশিয়ার তিন দেশ নিয়ে আলোচনা, ছিল না বাংলাদেশ
বাইডেন-মোদি বৈঠকে আশাহত হাসিনা!
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৬-২০২৩
বাইডেন-মোদি বৈঠকে আশাহত হাসিনা! মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (ডানে) ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ মিয়ানমার, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ নিয়ে কোনো কথা ওঠেনি। কোনো কোনো মহল মনে করেছিল বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে মোদি কথা বলতে পারেন। তবে বাস্তবে তা হয়নি। বাংলাদেশের সরকার সমর্থিত অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেছিলেন বাইডেন-মোদি বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। আবার বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান-‘সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন’, সেই অবস্থার পরিবর্তন হবে। কিন্তু তাতে গুড়েবালি।

বাইডের প্রশাসন বাংলাদেশে সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে, তা পরিবর্তনে মোদি বাইডেনকে অনুরোধ করবেন। কিন্তু বাইডেন মোদিকে সেই সুযোগই দেননি। বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান তাতে অনড় রয়েছে বাইডেন প্রশাসন। বাংলাদেশ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যার যার অবস্থান ভিন্ন। একটি সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগেই ভারতকে জানিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের ব্যাপারে তারা এবার সরাসরি ব্যবস্থা নেবে। তারা ভারতের ওপর নির্ভর করবে না। অন্যদিকে মোদি ব্যস্ত ছিলেন ভারত নিয়েই। তবে তারা দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন।

মোদির কাছে আওয়ামী লীগের যে প্রত্যাশা ছিল সেই প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের বা শেখ হাসিনার পূরণ হয়নি। আশাহত আওয়ামী লীগ এখন অন্য রাজনীতি শুরু করেছে। তারা ব্লেইম গেম শুরু করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। কিন্তু তাতেও কোনো সুফল আসবে না বলে অনেকেই মনে করেন। সোজা কথায় বলা যায়, বাইডেন-মোদি বৈঠকে আশাহত হয়েছে শেখ হাসিনা।

গত ২২ জুন দুই নেতার বৈঠকের পর হোয়াইট হাউস যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে, তাতে এ চিত্র পাওয়া গেছে। প্রায় ৬ হাজার ৫০০ শব্দের ৫৮ দফার এ বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ২ ঘণ্টা একান্তে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, বৈঠকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমেরিকা ও ভারতের ‘ডিএনএ’র মধ্যে গণতন্ত্র রয়েছে। তিনি ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধেরও প্রশংসা করেন।

বিবৃতিতে অবনতিশীল মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুই নেতা। দেশটিতে নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিয়ে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিকব্যবস্থা এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে জঙ্গি হামলার ক্ষেত্র হিসেবে যেন ব্যবহার না করা হয়, সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে। পাকিস্তান প্রসঙ্গে আলোচনায় আলকায়দা, আইএস, লস্কর-এ-তৈয়েবার মতো জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়েছে। দুই নেতা আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসী প্রক্সি ব্যবহার করার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং পাকিস্তানকে অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মুম্বাই ও পাঠানকোট হামলার অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

দুই নেতা শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও স্থিতিশীল আফগানিস্তানের জন্য দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তারা বর্তমান মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং আফগানিস্তানের জনগণকে অবিলম্বে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, আফগান ভূখণ্ড কখনই কোনো দেশকে হুমকি বা আক্রমণ, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় বা প্রশিক্ষণ, বা সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা বা অর্থায়নের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। আফগানিস্তানের পরিস্থিতির ওপর ঘনিষ্ঠ আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক কাঠামো গঠনে জোর দেন। তারা তালেবানকে নারী, মেয়েসহ সব আফগানের মানবাধিকার এবং চলাফেরার স্বাধীনতাকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছেন। আফগানিস্তানকে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও স্থিতিশীল করার ব্যাপারে সমর্থন জানিয়েছেন বাইডেন ও মোদি।

বিবৃতিতে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনভিত্তিক নীতির মধ্য দিয়ে আরো শক্তিশালী, বৈচিত্র্যময় মার্কিন-ভারত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করা হয়। বলা হয়, ‘একত্রে আমরা একটি আরো শক্তিশালী, বৈচিত্র্যময় মার্কিন-ভারত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলব; যা মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনের নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি উজ্জ্বল এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য আমাদের জনগণের আকাঙ্খাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

দুই নেতার বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদি প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তিনি তার ৯ বছরের শাসনামলে কখনো এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেননি।

সংবাদ সম্মেলনে একজন ভারতীয় এবং একজন আমেরিকান সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন। সিএনএন জানিয়েছে, যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভারতের কর্মকর্তাদের জোর আপত্তি ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ভারত শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে।

মোদি সরকারের আমলে ভারতে ভিন্ন মতাবলম্বী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর দমনপীড়ন বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো যেসব অভিযোগ তুলেছে, সেটি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়। মোদি অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন, ভারতে জাতপাত বিচারে কোনো বৈষম্য হয় না। সবাই সমান।

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট, ভারতের অবস্থান তাদের নিজস্ব 

বাংলাদেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সফরের প্রাক্কালে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফরেন প্রেস সেন্টারে আয়োজিত এক বিশেষ ব্রিফিংয়ে গত ২০ জুন এ কথা বলেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি)-এর স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন পরিচালক অ্যাডমিরাল জন কিরবি। এ সময় তিনি বাংলাদেশে মানবাধিকার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে তার বক্তব্য লিখিত আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে এক সাংবাদিক কিরবির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরে দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির মতো বিষয় কি আলোচনায় গুরুত্ব পাবে? পাশাপাশি তিনি কিরবির কাছে আরেকটি প্রশ্ন করেন যে, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগের পাশে থাকবে কি না?

এর উত্তরে জন কিরবি বলেন, আপনার প্রথম প্রশ্নের জবাবে বলবো, প্রেসিডেন্ট বাইডেন পৃথিবীর যে প্রান্তেই যান এবং যে নেতার সঙ্গেই কথা বলেন না কেন তিনি মানবাধিকার বিষয়ে তার উদ্বেগের কথা জানান দেন। এটি প্রেসিডেন্টের জন্য একটি স্বাভাবিক বিষয় এবং তিনি এ অবস্থানে অত্যন্ত দৃঢ়। মানবাধিকার এই প্রশাসনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূলভিত্তি। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং সহযোগী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও এর ব্যতিক্রম হবে না।

এরপর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত তাদের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করতেই পারে। কিন্তু আপনি সঠিক যে, বাংলাদেশে অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমরা আমাদের অবস্থান ইতোমধ্যে স্পষ্ট করে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অন্তরায় সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি ঘোষণা করেছি। আমরা কেবল আমাদের অবস্থান জানাতে পারি। আপনি জানেন আমাদের অবস্থানটা কোথায়।

এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট এবং প্রকাশ্য। তবে ভারত সরকার তাদের দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতেই পারে।

শেয়ার করুন