০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ৬:২৩:৪৪ পূর্বাহ্ন


শামীম ওসমান এমপিকে জ্যাকসন হাইটসে হেনস্তা
নোয়াখালীতে ছাত্রদল নেতার বাড়িতে হামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৭-২০২৩
নোয়াখালীতে ছাত্রদল নেতার বাড়িতে হামলা এমডি আইয়ুব আলীর বাড়িতে হামলা


যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে নারায়ণগঞ্জ-৪ (সদর ও সিটি করপোরেশন একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানকে হেনস্তার চেষ্টার অভিযোগ তুলে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা এমডি আইয়ুব আলীর গ্রামের বাড়িতে ককটেল হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী গত ১৫ জুলাই শনিবার সকালে উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আমকি গ্রামের মিয়াবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রদল নেতা বাদল মির্জা (৩৬) আমকি গ্রামের আবু বাহারের ছেলে। দেশে থাকতে তিনি সোনাইমুড়ী উপজেলা ও জয়াগ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সক্রিয় একজন নেতা ছিলেন। একই সঙ্গে রাহিমুজ্জামান প্রিন্সকে হুমকি প্রদান করে।

জয়াগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত আকবর পলাশ মিডিয়াকে বলেন, বাদল ৮-১০ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান। সেখান থেকে পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, ১৫ জুলাই সকাল ১০টার দিকে ছাত্রলীগের ১৫ থেকে ২০ জন নেতাকর্মী মোটরসাইকেলে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাবেক ছাত্রদল নেতা এমডি আইয়ুব আলীর গ্রামের বাড়িতে যান। এ সময় তারা যুক্তরাষ্ট্রে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে হেনস্তার চেষ্টার অভিযোগে বাদলের বাড়িতে ১০-১২টি ককটেল বিস্ফোরণ করেন এবং বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেন। তবে হামলার সময় এমডি আইয়ুব আলীর পরিবারের কোনো সদস্য বাড়িতে ছিলেন না। তারা আগের দিন রাতে আত্মগোপন করেন। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা বাদলের শাস্তি দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

হামলার বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফ হোসেন বলেন, ছাত্রদল নেতা এমডি আইয়ুব আলী দেশে থাকতে ছাত্রদলের একজন ক্যাডার ছিলেন। সরকার পরিবর্তন হলে জনগণের রোষাণলে পড়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা। তার মতো ব্যক্তিকে হেনস্তার চেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বাদলের পরিবারকে সতর্ক করতে ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। এ সময় এলাকার অতি উৎসাহী কিছু ছেলেপেলে বাড়িতে ভাঙচুর করেছে বলে তিনি শুনেছেন।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কেউ থানায় অভিযোগ দেননি কিংবা ফোনেও ঘটনাটি জানাননি। তিনি বিকালে লোকমুখে ঘটনাটি শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছেন। এমডি আইয়ুব আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে দেশ পত্রিকাকে এমডি আইয়ুব আলী বলেন, তারা আমাদের বাড়িতে হামলা করেছে, ককটেট মেরেছে এবং আমাদের বাড়ি ভাঙচুর করেছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বাবা আবু বাহার, আমার মা কনসন বেগম এবং আমার ভাই হাসানুজ্জামান বিপ্লব গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। আমার ভাই হাসানুজ্জামান বিপ্লব জেলা ছাত্রদলের সহ-প্রচার সম্পাদক। তারা কোথায় এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জানি না, তারা কোথায়।

ঘটনার সূত্রপাত

গত ১২ জুলাই বুধবার রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে তার এক বন্ধুর আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের (৭৩ স্ট্রিট) এলাকায় আসেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তিনি একটি কালো রঙের রেঞ্জ রোভার গাড়িতে ছিলেন। তিনি জ্যাকসন হাইটসের হাটবাজার সুপার মার্কেটের সামনেই গাড়ি থেকে নামছিলেন। এই সময় রাস্তার অপর পার্শ্বে নবান্ন রেস্টুরেন্টের সামনে বিএনপির কয়েকজন নেতা অবস্থান করছিলেন। শামীম ওসমান এমপিকে দেখামাত্র নিউইয়র্ক মহানগর বিএনপি নেতা রিয়াজ, সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা এমডি আইয়ুব আলীসহ কয়েকজন ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন এবং ভোট চোর ভোট চোর বলেও স্লোগান দেয়। তাদের এই ধরনের স্লোগান দিতে দেখে শামীম ওসমান এমপি তাদের দিকে এগিয়ে আসেন এবং তাদের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান। তিনি মহানগর বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার নাম শামীম ওসমান। তোমরা নিশ্চয় জান, বিএনপি-জামাত যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন আমার ওপর বোমা হামলা হয়েছে। আমার লোক মারা গিয়েছে। আমার শরীরে এখনো স্প্লিন্টার লাগানো। তোমরা আমেরিকায় থেকে মনে করো না, সব লোক তোমাদের, এখনো তোমাদের চেয়ে আমার লোক অনেক বেশি। যাদের তোমরা চেন না। এখন তোমরা খুশি, আমিও খুশি। কথা শেষ। এ সময় এমডি আইয়ুব আলী ও রহিমুজ্জামান প্রিন্স শামীম ওসমানের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান এবং মহানগর বিএনপি নেতা রিয়াজ বলেন, আপনার প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকে এসে মিথ্যা বলেছে, বলেছে আমাদের চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এটা ডাহা মিথ্যা। আমরা আপনাকে চা খায়াবো। শামীম ওসমান বলেন, যাও চা নিয়ে আস। শামীম ওসমান আরো বলেন, আমি এখানে মেহমান। তোমাদের বলি, এমন কোন কাজ করো না, যাতে করে তোমাদের বাবা- মাদের বদনাম হয়। আওয়ামী লীগ কর, বিএনপি কর, তাতে অসুবিধা নেই, যা করেছো এনাফ করেছো, এখন যাও। এই সময় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সেখানে উপস্থিত হয়েছে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তোলেন। আপনারা অতিরিক্ত করেছেন। হুট করেই একজন ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। এতে করে শামীম ওসমানও ধাক্কা খান। এই সময় বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয়া হয়। শামীম ওসমান এমপিকে একটি দোকানে ঢোকানো হয় এবং বিএনপির ওই সব নেতাও চলে যান।

এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে স্টেট আওয়ামী লীগ গত ১৬ জুলাই বিকালে যেখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল, সেখানে কয়েকজন মিলে প্রতিবাদ সভা করে। স্টেট আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমলের পরিচালনায় কয়েকজন বক্তব্য রাখেন এবং ঘটনার প্রতিবাদ জানান। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে এই ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজ থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান।

শেয়ার করুন