২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৮:৪৭:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চেয়ে জাতিসংঘে আহ্বান
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৬-২০২২
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল   চেয়ে জাতিসংঘে আহ্বান


বাংলাদেশে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ এবার জাতিসংঘে উঠেছে। সে অধিবেশনে বাংলাদেশের  ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ আইন বাতিল চেয়ে আহ্বান জানানো হয়েছে। ‘ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জোরদার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই আহ্বান জানান আইরিন খান। বলা হয়েছে, এ আইন ব্যাবহারের মাধ্যমে সাংবাদিকদের নির্বিচারে আটক, নির্যাতন এবং নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে। এতে করে সাংবাদিকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন- জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিকাশ ও সুরক্ষাবিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান।

গত শুক্রবার (২৪ জুন) জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আইরিন খান তার প্রতিবেদনে বিশ্বে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিপজ্জনক হারে কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এর ফলে বৈশ্বিকভাবে মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

এদিকে গত সেপ্টেম্বরে (২০২১) ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ এর তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। এটা এখন চার বছর পূর্ণ হতে চলেছে। কিন্তু ওই তিন বছরের এক সমীক্ষা করেছিল সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়- “গত তিন বছরে সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে এ আইনের ব্যবহার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে দেশে এবং দেশের বাইরে মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসছে। এ কঠোর আইন ব্যাপক হারে ব্যবহারের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে সম্পাদক পরিষদ ‘দুঃস্বপ্নের বাস্তবতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।আইনটি বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। সাংবাদিক এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের নাগরিকরা ডিজিটাল মাধ্যমে মতামত প্রকাশের জন্য এ আইনের দ্বারা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।”

সিজিএস সেসময় জানায়, “আইনটি চালু হওয়ার পর থেকে কথিত সাইবার অপরাধ সম্পর্কিত দায়ের করা মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৩ সাল থেকে প্রাথমিকভাবে তথ্য ও যোগাযোগ আইন- এর অধীনে এবং পরবর্তী সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে সাইবার ট্রাইব্যুনালে করা মোট মামলার সংখ্যা ৪ হাজার ৬৫৭টি। এর মধ্যে ৯২৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে ২০১৮ সালে। এক হাজার ১৮৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে ২০১৯ সালে এবং ২০২০ সালে দায়েরকরা মামলার সংখ্যা এক হাজার ১২৮টি।

সংস্থাটি জানায়, ১ জানুয়ারি ২০২০ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ সাল পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর অধীনে ১ হাজার ৫০০টিরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ভিন্ন মতের বিরুদ্ধে এ কঠোর আইন ব্যবহার করেছে। বর্তমানে ডিজিটাল আইনের ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে।

সিজিএস এর সংগৃহীত তথ্যনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর অধীনে দায়ের করা মামলাগুলো চিহ্নিত করে নথিভুক্ত করা করছে। ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির (এনইডি) অর্থায়নে এই সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক হিসেবে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ।”

এর বাইরেও সিজিএস ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর প্রভাবের কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছে তাদের ওয়েবসাইটে। সেখানে ওই সময়ের বিভিন্ন পরিসংখ্যান অর্থাৎ ওই আইনে কতজন সাংবাদিক,রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষ মামলার শিকার হয়েছেন সে বিষয়গুলো তারা তাদের সাইটে উল্লেখ করেছেন। 

ওয়েব সাইটে সিজিএস’র প্রকল্পটির মুখ্য গবেষক অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ বিষয়ে বলেন, ‘এ প্রবণতা দেখাচ্ছে যে কীভাবে একটি আইন উদ্ভূত কর্তৃত্ববাদের দিকে অগ্রসরমান শাসনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এটি ভিন্নমতকে অপরাধে পরিণত করছে। আইনের নির্বিচার ব্যবহার বাংলাদেশে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনটি বাতিল করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।’ 

এদিকে জাতিসংঘে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে আইরিন খান বলেছেন, একনায়কতন্ত্রের বিস্তার এবং গণতন্ত্র দুর্বল হতে থাকায় লোকরঞ্জনবাদী নেতৃবৃন্দ স্বাধীন গণমাধ্যমকর্মীদের অপরাধীতে পরিণত করার চক্রান্তে সক্রিয়ভাবে লিপ্ত। অনেক দেশের সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে শৃঙ্খলিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বিধিনিষেধ চালু করেছে।

২২ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনের মিথ্যা খবর প্রতিরোধন বিষয়ক আইন অংশে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রসঙ্গটি এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, মিথ্যা সংবাদ প্রতিরোধবিষয়ক আইনগুলো নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক সনদের ১৯(৩) ধারা অনুযায়ী আইনি প্রক্রিয়া, আইনসম্মত লক্ষ্য ও প্রয়োজনীয়তার তিন স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের ত্রুটিপূর্ণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথা। অত্যন্ত কঠোর এই আইনে এমন কিছু বিধান রয়েছে, যার সংজ্ঞা ব্যাপক অর্থে অস্পষ্ট এবং শাস্তিও বেশ কঠোর। এখানে জাতীয় নিরাপত্তা, ইন্টারনেট জগতের অপরাধ, ভুল তথ্য ছড়ানো-সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে তদন্ত সংস্থাগুলোকে অনুসন্ধান, জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করার ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

 

শেয়ার করুন