২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:২৮:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


জীবনের গল্প : ৪৭
শওকত হোসেন বাদল
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৪-২০২২
জীবনের গল্প : ৪৭


এক.

কি রে? কেমন আছিস। বয়স কত হলো তোর? জানি, তোদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই। আমাদের যেমন বেতন! আচ্ছা, বয়স আর বেতন জিজ্ঞেস করলে কি হয়! -আমি জানি না, তুই জানিস?  

তোর এই বয়সটা ছাড়া আর কিছুই তো অজানা নেই রে। তোকে যত দেখি, কথা বলি, অবাক হই! তোর সঙ্গে পরিচয়টা নিয়ে গর্ব হয়। তোর মতো বন্ধু পাওয়া সৌভাগ্যের। জীবনের পুণ্যের ফল!

আজ লিখতে বসে ভাবছি, আমাদের বন্ধুত্বের বয়স কতো হলো? ১৯৮৫ সালের কোনো একরাতে তোকে প্রথম ফোন করি। তখন আমি ঢাকা কলেজে বি.কম (পাস) পড়ি। ছাত্রলীগের সভাপতি। তাই তারুণ্যের উদ্যমতায় জীবন ছিল বেপরোয়া। সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খলতাও ছিল। 

এরশাদের শাসনামল। কি যে কঠিন ছিল ছাত্ররাজনীতি করা, যারা না করেছে তারা বুঝবে না রে। ওই রাতে আমিসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী জসিম ভাইয়ের চাচার বাড়িতে রাতযাপন করেছিলাম। পুলিশের ভয়ে গ্রেফতার এড়াতে সে রাতে আমাদের কলেজ হোস্টেলে থাকা সম্ভব হয়নি। সেখানে উপস্থিত কেউ একজন, তোর ল্যান্ডফোনের নম্বরটা দিয়েছিল। আজ তার নামটা মনে করতে পারছি না।


দুই.

সেই রাতে ‘হ্যালো’ বলতে তুই পাত্তাই দিলি না। শুধু তোর নাম বলেছিলি, ‘মৌ’। তারপর লাইনটা কেটে দিলি। কিছুদিনের মধ্যে তোর উপোর প্রহর শেষে সম্পর্কটা স্বাভাবিক হলো। একদিন তোর বাসায় যেতে বললি, গেলাম। তারপর মাঝেমধ্যে তোর বাসায় যেতাম। ফোনে কথা হতো। এমনি করে বহতা নদীর মতো দু’জনের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা এগিয়ে চলছিল। 

তোর মনে আছে, আমার কোনো এক জন্মদিন, তোর বাসায় ঘটা করে পালন করেছিলাম। সেদিন আমার আখাউড়ার বাল্যবন্ধু প্রয়াত রতন, জুলি, বীনু, বাবলু ও আসিফও ছিল। ওদের সঙ্গে সীমাও এসেছিল। যদিও সীমার সঙ্গে তখনও বিয়ে হয়নি। আমরা দু’জনে চুটিয়ে প্রেম করতাম। তোর আতিথেয়তা, আহ! এখনো জিভে জল আসে। 

আমার বিয়ের প্রথম শাড়িটা তোর দেয়া। এখনো যত্ন করে সীমা আলমারিতে রেখে দিয়েছে। বিয়ের পরে আমি-সীমা কতো তোর বাসায় থেকেছি, খেয়েছি ও আড্ডা দিয়েছি। সেদিনের রোমন্থিত স্মৃতি আজো সুখ দেয়। বিয়ের পর পর আমার অবস্থা ছিল যাচ্ছেতাই। পত্রিকার সামান্য কয়টা টাকায় বাসাভাড়া দিতে পারি না। তুই অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলি। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলি। তোর ঋণ এ জনমে কি করে শোধ করবো বল?


তিন.

বন্ধু হিসেবে তুই এক তরফাই করেছিস। প্রতিদান চেয়ে দায়মুক্তির সুযোগও তুই দেসনি। তাছাড়া তোকে দেয়ার চেষ্টা করেও পারিনি। তুই এতো ভালো কেন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে আজো পাইনি। অনেকে বলে, ছেলে ও মেয়ের বন্ধুত্ব মানেই যৌনতা-কাম কিংবা ভালোবাসা। কিন্তু গত ছত্রিশ বছরের সম্পর্কে, দুষ্টুলোকের মন্দ ভাবনার বিন্দুমাত্র ছায়া আমরা পড়তে দেইনি। অবিচল আস্থায় আমাদের এই বন্ধুত্ব জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এগিয়ে যাবে, এই বিশ্বাস দু’জনরেই আছে।

গতরাতে সীমা তোকে ‘বার্থডে উইশ’ করেছে। আমি করিনি। তুই তাকে বলেছিস, ‘বাদল তো আমাকে উইশ করলো না।’ শুনে সীমাকে আমি বলেছি, ‘বার্থডে উইশ করবো, তবে লিখে!’

পরিশেষে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, যদি পুনর্জন্ম থাকে, ওই জন্মেও তোকে যেন আবারো আমার বন্ধু করেই পাঠায়। আজ তোর জন্মদিন। তোকে শুভেচ্ছা। ভালো থাকিস বন্ধু। শুভ জন্মদিন...


কে. এম দাস লেন

টিকাটুলি, ঢাকা

০৫.০৩.২২

শেয়ার করুন