২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:০১:১২ পূর্বাহ্ন


নতুন ফরমুলা ‘সর্বদলীয় সরকার’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৮-২০২৩
নতুন ফরমুলা ‘সর্বদলীয় সরকার’


তত্ত্বাবধায়ক সরকার এড়াতে নতুন এক ফরমুলা আবিষ্কৃত হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সর্বদলীয় সরকার’। মূলত রাষ্ট্রপতির চয়েজের ওপর নির্ভরশীল এ ফরমুলা ইতিমধ্যে দেশের প্রধান মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে। গত ১৪ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বরাবর এ চিঠি ডাকযোগে পাঠিয়েছেন এক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। নাম- মো. মাহমুদুল হাসান। তবে রাজনৈতিকভাবে তিনি কোন দলের আদর্শ ধারণ করেন, সেটা তাৎক্ষণিক জানা না গেলেও চিঠিতে তার ব্যবহার করা বাক্যগুলোর সঙ্গে বাস্তবে বেশকিছু অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। তিনি বারবার যুক্তি দিয়েছেন, কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গ্রহণযোগ্য নয়। কেন সংবিধানের অধীনে থেকেই নির্বাচনব্যবস্থা পরিচালিত হতে হবে, যা একপ্রকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি। 

এ চিঠিতে রাষ্ট্রপতিকেই সর্বসেবা মানা হয়েছে। তিনিই একটা ফরমুলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবেন, মন্ত্রিপরিষদ ঠিক করবেন। সেখানে বিরোধী দল থেকেও নেওয়া যেতে পারে মন্ত্রী। এ ব্যাপারে তিনি (আইনজীবী) বাংলাদেশ সংবিধানের ২১ (১) অনুচ্ছেদকে রেফারেন্স হিসেবে নিয়ে তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর এমন চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।  

কী রয়েছে ওই চিঠিতে- 

ভূমিকা: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য ‘সর্বদলীয় সরকার’ব্যবস্থা গঠন বিবেচনা করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ২১(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয় উল্লেখ করে ওই আবেদন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মাহমুদুল হাসান। আবেদনে তিনি বলেন-

“প্রতি নির্বাচনকালীন সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ, সংঘর্ষ, রাস্তাঘাট অবরোধের কারণে সাধারণ জনগণ চরম ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে দেশের তরুণ সমাজ সরকার ও বিরোধী দলগুলোর কর্মকাণ্ডে চরমভাবে হতাশ। এজন্য দেশের মেধাবী তরুণরা প্রতিনিয়ত দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে এবং যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো যেখানে উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানে বাংলাদেশ এখনও নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে একমত হতে পারেনি। প্রতিটি নির্বাচনের আগে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ফলে দেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে এবং দেশের জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো স্বীকৃত নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নয়। বিশ্বের দুয়েকটি দেশ ছাড়া কোথাও এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নেই। মূলত এই রাজনৈতিক সমাজব্যবস্থায় শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা আদৌ সম্ভব নয়। তা ছাড়া বাংলাদেশে অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। এ অবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আলোচনা ও সমালোচনা পরিত্যাগ করে বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে হবে। এতে একদিকে যেমন সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় থাকবে না, অন্যদিকে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে। 

সর্বদলীয় সরকার গঠনে বিদ্যমান সংবিধানের কোনো সংশোধন বা পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না। তবে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সব সদস্য পদত্যাগ করবেন। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মধ্যে থেকে একজনকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবেন, যিনি বিগত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। নতুন প্রধানমন্ত্রী একটি নতুন নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। এই মন্ত্রিসভার ৯০ শতাংশ সদস্য বিদ্যমান সংসদ সদস্য হবেন তবে তারা এমন ব্যক্তি হবেন, যারা বিগত ১০ বছরের মধ্যে কোনো মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। এছাড়া নতুন প্রধানমন্ত্রী বাকি ১০ শতাংশ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে। 

এক্ষেত্রে নতুন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ জানাবেন, তাদের দলের কোনো যোগ্য এক বা একাধিক সদস্যকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করার প্রস্তাব দিতে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত সদস্যদের নিয়ে এমনভাবে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন, যাতে প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত অন্তত একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী থাকে। তবে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীরাও এমন ব্যক্তি হবেন, যারা ১০ বছরের মধ্যে কোনো মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। 

তবে কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কোনো মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী প্রস্তাব না করলে সেক্ষেত্রে নতুন প্রধানমন্ত্রী অন্য রাজনৈতিক দল থেকে প্রস্তাবিত একাধিক মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারবেন। এভাবে একটি নতুন প্রধানমন্ত্রী ও নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। এই সর্বদলীয় সরকার পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত না হলেও যেহেতু মন্ত্রিসভায় সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ থাকবে, তাই সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। 

ওই সর্বদলীয় সরকারে যদি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন বা মৃত্যুবরণ করেন, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি পুনরায় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যের মধ্যে কাউকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন, যিনি গত ১০ বছরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। এছাড়া মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ক্ষেত্রেও আগের প্রস্তাব অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, যারা এর আগে কখনোই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশ নিতে পারেনি, তারাও তাদের মনোনীত মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকার পরিচালনার কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে। এতে দেশের স্বার্থে জাতীয় ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠবে। সর্বোপরি, নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে দেশে একটা শৃঙ্খলা তৈরি হবে এবং দেশ হানাহানি, সংঘাত থেকে পরিত্রাণ পাবে।” 

দেশের জাতীয় স্বার্থে রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারব্যবস্থা বিবেচনার জন্য আবেদনটিতে অনুরোধ করা হয়েছে। 

এ চিঠি সবে দেওয়া হওয়ায় এ নিয়ে এখনো রাজনৈতিক দলের ভাবনা জানা যায়নি। তবে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি যেসব বিষয় নিয়ে দাবি তুলে আসছেন তার সঙ্গে একটি স্থান ছাড়া তেমন মিল নেই। সেটা হলো প্রধানমন্ত্রীর পদ। এ ফরমুলায় প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনার থাকার কোনো সুযোগ নেই। তবে যেহেতু ১০ বছর মন্ত্রিপরিষদে ছিলেন না-এমনরা যেহেতু থাকতে পারবেন, সেক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সরকারের দীর্ঘ তিন টার্মের অনেকেই এ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখবেন।

শেয়ার করুন