২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১১:৪০:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


দিল্লিতে নজর থাকবে বাংলাদেশেরও
মার্কিন পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নভেম্বরে ভারত সফর
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১০-২০২৩
মার্কিন পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নভেম্বরে ভারত সফর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন


বাংলাদেশের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন মার্কিনিদের গতিবিধি। কোথায় তারা যাচ্ছেন, কাদের সাপোর্ট করছেন, বৈঠক করছেন কার কার সঙ্গে, এ প্রসঙ্গগুলোতে বাংলাদেশের প্রসঙ্গটাও থাকছে কি না এটা জানার আগ্রহ বেশ। এর কারণ আর খুলে বলার প্রয়োজন পড়ে না। বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচন প্রসঙ্গে মার্কিনিদের কড়া নজরদারি সেটা আবার ভারতকে সঙ্গে নিয়ে এটা এখন আর কারো অজানা নয়। 

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকারের অমন আগ্রহটা টের না পাওয়া না গেলেও এটা এখন বেশ উৎসাহের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার ও বিরোধী অবস্থানে থাকা বিএনপিসহ মিত্ররা। সরকারও মার্কিনিদের চলাফেরার প্রসঙ্গগুলো মুখে না বললেও পর্যবেক্ষণ করে থাকে, এটা নতুন নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে বলেই ফেলেছেন, বিবিসিকে দেওয়া (গত ১৬ মে ২০২৩ ) প্রধানমন্ত্রী তার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো চায় না আমি ক্ষমতায় থাকি বা আমেরিকা চাইলে যে কোনো দেশের ক্ষমতা ওল্টাতে-পাল্টাতে পারে (সংসদে, ১০ এপ্রিল ২০২৩) সেখানে এ পর্যন্ত যা দেখা গেছে আর যা বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোনো নড়চড় হয়নি। আর বিএনপি ও তার মিত্ররা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে প্রত্যাশা রেখেছে যে নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক সেটাকে আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছেন।

এমন প্রেক্ষাপটে ইসি যেখানে বলছে, নভেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ও জানুয়ারির প্রথমভাগেই নির্বাচন। তেমনি মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের গতিবিধিতে তীক্ষ্ণ নজর থাকাই স্বাভাবিক।

এ মুহূর্তের খবর নভেম্বরে দিল্লি সফরে যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জে ব্লিঙ্কেন ও দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। জে ব্লিঙ্কেন হরহামেশাই ভারত সফরে যান নানা প্রসঙ্গে আলাপ-আলোচনার জন্য। সম্প্রতি জি-২০ সম্মেলনেও তিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সফর করে গেছেন। এছাড়াও তিনি আসেন দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য বা ডেকে নেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা অন্যদেরও। কারণ এ মুহূর্তে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে সখ্য। 

ভারতের একটি শীর্ষ সংবাদ মাধ্যমের খবর,  যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন আসছে নভেম্বরের যে কোনো সময় ভারত সফর করবেন। দিল্লি সফরে দুই মার্কিন মন্ত্রী ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তবে ওই সফরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পাশাপাশি যে বিষয়টা উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো  আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং দুই দেশের মধ্যকার কৌশলগত সম্পর্কের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা। পত্রিকাটি আরো জানিয়েছে, সফরে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং লয়েড অস্টিন ভারতের উত্তর সীমান্তে চীনের সঙ্গে চলমান সামরিক অচলাবস্থার মতো আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করবেন।

অন্যান্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, ভারত এ মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। কানাডা ইস্যুতে এ দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। কেননা কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ দূরত্ব বাড়াচ্ছে। এছাড়াও  এ দুইয়ের মধ্যে আরেকটি বড় উদ্বেগের বিষয় হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক নিরাপত্তায় প্রভাব। এছাড়াও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিবেদিত ‘কোয়াড’ সদস্য হিসেবে দুই মার্কিন মন্ত্রীর সফরে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র উক্ত যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নিজ নিজ ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে পারে। গাজা অঞ্চলে হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত আরো বৃদ্ধি পাওয়া রোধ করার উপায় নিয়েও নেতারা আলোচনা করতে পারেন।

ভারতের সংবাদ মাধ্যমের দেওয়া সম্ভব্য আলোচ্যসূচিতে ইন্দো-প্যাসিফিকে নিরাপত্তা ও কোয়াড নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনাকালে উঠতে পারে বাংলাদেশ ইস্যু। এটাই খবর নেওয়া শুরু করেছে এখন বাংলাদেশ। তফসিল, তথা নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশের নীতিতে এ দুই দেশ একটি অবস্থানে পৌঁছেছে বলেই অনুমান করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কেননা বিগত দুই জাতীয় নির্বাচনে মার্কিনিদের এমন তৎপরতা চোখে পড়েনি। সেখানে এবার তারা বেশ সরব এবং একই ইস্যুতে মার্কিনিরা যতখানি সরব ততটাই আড়ালে ভারত। সব মিলিয়ে এ দুই দেশের একটা অভ্যন্তরীণ সমঝোতায় এমনটা হতে পারে বলেও কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন। 

বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুসমূহে দুই দেশ একত্রে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোনোর পর্বগুলো যখন চালিয়ে যাচ্ছে তখন বাংলাদেশ ইস্যুতে দুইপক্ষ দুই মেরুতে থাকবে এটা যুক্তিযুক্ত নয়। তাছাড়া বাংলাদেশে একের পর এক আসছে মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষনেতারা। সবার বক্তব্যই এক ও অভিন্ন। সেখানে ভারত ভিন্ন নীতি গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সঙ্গে দ্বিমত করবে এবং আলাদা অবস্থানে যাবে এটা চলমান প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সঙ্গতপূর্ণ নয়। 

সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু। তাদের ওই সফর ব্যাপক কৌতূহলের জন্ম দেয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ভারত সফরে যেতে পারেন এমন আভাস মিলেছে। তবে ওবায়দুল কাদেরের বিষয়টি নিশ্চিত না হলেও জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের ভারত সফরটাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফলে পররাষ্ট্রমন্ত্র জে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীরও একই সঙ্গে সফর। এটাকে যে কেউই আলাদা গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে রাখবে পূর্বের যে কোনো বৈঠকের চেয়ে এটা সম্ভবত আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

সবশেষ

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার দুই দিনের সফর শেষে গত ১৭ অক্টোবর রাতে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। সফরের শেষদিন বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্টের অবস্থান জানিয়ছেন তিনি। আফরিন আখতার যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানিয়ে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখবে যুক্তরাষ্ট্রে। একই সঙ্গে দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের শান্তিপূর্ণ উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্র জোর দিচ্ছে। এর আগেও অনেক মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ (উজরা জেয়া, ডোনাল্ড লু) ব্যক্তিবর্গ সফর করে গেছেন। 

এছাড়াও বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন ভিসানীতির। এমনি ভিসানীতির প্রয়োগের কথাও। এর আগে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থা র‌্যাবের ওপর মানবাধিকার প্রশ্নে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা। ফলে এমন প্রেক্ষাপটে নির্বচনের ঠিক আগ মুহূর্তে দিল্লি সফরে যুক্তরাষ্ট্রের দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব পররাষ্ট্রমন্ত্রী জে ব্লিঙ্কেন ও দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সফরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠবে না এটা ভাববার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না।

শেয়ার করুন