২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০১:৩৮:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বাংলাদেশের অর্থ পাচারকারী ভারতে আটক
পিকের আটকে দিল্লির মেসেজ কি?
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৫-২০২২
পিকের আটকে দিল্লির মেসেজ কি? ভারতীয় নিরাপত্বাকর্মীদের কব্জায় বাংলাদেশের পিকে/ছবি সংগৃহীত


বহুল আলোচিত রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পিকে হালদারকে) ভারত থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পিকে হালদারের সঙ্গে তার আইনজীবী সুকুমারকেও গ্রেফতার করেছে ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিককে জানিয়েছে, তারা ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে পিকে হালদারসহ ৩ জন বাংলাদেশি।অবৈধ ক্যাসিনো মালিকদের সম্পদের তদন্ত শুরুর পরে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে দুদক মামলা দায়ের করে।

কে এই পিকে হালদার?

পিকে হালদার ২০০৮ সালে আইআইডিএফসির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে তিনি এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন। তাকে গ্রেফতার করতে রেড অ্যালার্ট ঘোষণা করে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল। ২০১৯ সালে দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় পিকে হালদার তার কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচনায় স্থান পায়।

তিনি এবং তার সহযোগীরা ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান- পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াাল সার্ভিস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স এবং রিলায়েন্সে ফাইন্যান্স থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এই ৪টি প্রতিষ্ঠান তখন থেকে ভয়াবহ সংকটে আছে এবং এদের মধ্যে পিএলএফএস এখন লিকুইডেশনের প্রক্রিয়ায় আছে। দেশের গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে এই ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা দেয়া তহবিল পুনরুদ্ধার করতে বেশ কয়েকটি ব্যাংক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

সর্বশেষ তথ্য 

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পিকে হালদার) গ্রেফতারের তথ্য আদালতকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। গত সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষ এসংক্রান্ত রুল শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন। গত ১৬ মে সোমবার সকালে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আমাদের মেসেজ ক্লিয়ার। দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অপরাধের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, সে যেই হোক। আমরা এ ব্যাপারে সিরিয়াস।’

অন্যদিকে খবরে জানা গেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ভারতে পালানো প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারকে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশনের (ইন্টারপোল) সহযোগিতা চায় দুদক। এছাড়া তাকে ফেরাতে দুদকের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হবে। ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তাও নেয়া হবে।দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান এ কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। পিকে হালদার ও তার পাচার করা সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে ১৬ মেদুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে বৈঠক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৈঠক শেষে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সাঈদ মাহবুব এ সব তথ্য জানান।

পিকে হালদারকে গ্রেফতার,কি মেসেজ দিচ্ছে ভারত

রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পিকে হালদারকে) ভারত থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ভারতের মাটিতেই। কিন্তু রাজনৈতিক মহলে প্রশ্নসহ নানান বিষয়ে আলোচিত হচ্ছে পিকে হালদার কেনো ভারতের মাটিতেই গ্রেফতার হলো। দেশের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, তারা পিকে হালদারকে ভারতের মাটিতে গ্রেফতারের বিষয়টি অন্যভাবে দেখেন। তাদের মতে, প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ভারতে পালানো প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের ঘটনা দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নানান ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক মহল পিকে হালদারের ভারতে পালিয়ে যাওয়া ও তাকে সে দেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে বলে ঘটনাটি নেতিবাচকভাবে প্রচার পায়।

যদিওপিকে হালদার ও তার সহযোগীদের কানাডায় অর্থপাচারের তথ্য জানা গেলেও ভারতে এতো সম্পদ পাচারের তথ্য এতোদিন কারো জানা ছিল না। তাই বাংলাদেশে অনেকের মধ্যে এমন মন্তব্য ছিল যে বাংলাদেশের শাসকদের দুর্বলতায় একটি গোষ্ঠী দেশের সম্পত্তি সুকৌশলে ভারতে পাচার করছে। অন্যদিকে কেউ কেউ ধারণা করছে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিকূল থাকলে সরকার সমর্থক একটি অংশ ভারতে আশ্রয় নিয়ে বহাল তবিয়তে থাকবে। এমন মন্তব্যও বলতে শোনা যায় ভারত আসলে বাংলাদেশের অর্থলোপাট দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়স্থল। এমন প্রচারণা বর্তমান বিশ্বে ভারতের জন্য খুবই নেতিবাচক হয়ে দাঁড়ায়, যা ভারতের বর্তমান শাসকদের মধ্যে নাড়া দেয়। এসন অভিযোগ আসে ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে গণতন্ত্র চায় না। 

অনেকে মনে করে থাকেন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে প্রতিবেশি দেশ ভারতের ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণের এমন নেতিবাচক মনোভাবকে রুখে দিতেই দেশটি এমন পদক্ষেপ নিয়েছে, পিকে হালদারকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে অতি সম্প্রতি আরো একটি ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, ভারতেররাজনীতি একটি দলের দিকেই। কেউ কেউ মনে করে থাকেন ভারতের শাসকগোষ্ঠী প্রতিবেশী কোনো দেশের জনগণ নয় বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যাপারেই আসক্ত।

 রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, পিকে হালদারের মতো ব্যক্তির ভারতের মাটিতে গ্রেফতারের ঘটনা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অনেক রেখাপাত করেছে। তারই প্রতিফলন দেখা যায় বিএনপির মতো দলের বক্তব্যে। পিকে হালদারের গ্রেফতারের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেছেন, পিকে হালদার হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। তাকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা ভালো কথা। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, এরকম কতজন হালদার রয়েছেন? 

আমরা কিছুদিন আগে দেখেছি, এরকম হাজার হাজার কোটি টাকা তারা দেশ থেকে লুট করে পাচার করে দিচ্ছে। তার বক্তব্যেই ফুটে উঠেছে ভারতের উদ্যোগটি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে পিকে হালদারের মতো ব্যক্তিদের ভারত থেকে গ্রেফতারের ঘটনায় একটি মেসেজ- সেটা হচ্ছে তা হলো দুর্নীতিবাজরা কোনোভাবেই উন্নত অনেক দেশের মতো সেখানেও স্থান পাবে না। আরেকটি মেসেজ দেয়া হলো তা হলো ভারত কোনো শাসকের না জনগণের বন্ধু হয়ে থাকতে চায়।


শেয়ার করুন