২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:১২:৩০ পূর্বাহ্ন


সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতৃবৃন্দ
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন মৃত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১১-২০২৩
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন মৃত বক্তব্য রাখছেন অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনি


বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন মৃত। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, ঘোষিত তফসিল বাতিল ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করে সংবদ সম্মেলন করেছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। গত ২০ নভেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনির সভাপতিত্বে এবং সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলামের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভুইয়া মিল্টন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, আব্দুস সবুর, গিয়াস উদ্দিন, মোশাররফ হোসেন সবুজ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পাদক মাকসুদুল হক চৌধুরী, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর খান হারুণ, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খোরশেদ আলম, যুক্তরাষ্ট্র জাসাসের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর সরওয়ার্দী, ফারুক চৌধুরী, সালেহ চৌধুরী, শরিফ লস্কর, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সেলিম, শফিকুর রহমান দুলাল, খলকুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সরুজ্জামান, শাহাদাত হোসেন রাজু, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি মোস্তাক আহমেদ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনি ও মিজানুর রহমান ভুইয়া মিল্টন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন জ্যাকসন হাইটস মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ মোজাম্মেল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে আনোয়ার হোসেন।

লিখিত বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন বলেন, আপনার জানেন দেশ এক ভয়ংকর ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। ’৭১ সালের মতো ভয় আর শঙ্কার দুঃসময়ে দেশের জনগণ নিপাতিত। চারিদিকে শুধু অধিকারবঞ্চিত মানুষের করুণ আর্তনাদ, হাহাকার আর বেদনা। এক ব্যক্তি এক দলের দুঃশাসনে বাংলাদেশের মানুষ এক বন্দিশিবিরে আটকে আছে। মৌলিক মানবাধিকার বর্তমানে এক উদ্বেগজনক পর্যায়ে। বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের পছন্দের সরকার গঠন ও পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক রীতিকে পদদলিত করছে। জনগণকে দমন করে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ এখন সর্বগ্রাসীরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনকে চিরবিদায়ে চলছে নানা সর্বনাশা আয়োজন। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তোলা মাত্র রক্ত ঝরানো হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষের। বাংলাদেশ গণতন্ত্রকামী জনগোষ্ঠী এখন শেখ হাসিনার বুলেটের টার্গেট। মূলত বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন মৃত।

তিনি বলেন, আবারও একতরফা নির্বাচনের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের শর্ত রক্ষা না করে শেখ হাসিনার ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আজকে যে ধারাবাহিক আন্দোলন এবং এই আন্দোলন করতে গিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মীদের যে আত্মদান ও তাদের যে রক্তদান এটাকে উপক্ষো করে নির্বাচন কমিশন এক তরফা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে। দেশের সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ, আন্তর্জাতিক সহযোগী সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের পরামর্শ অগ্রায্য করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, গণতন্ত্রকামী অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশের জনগণ এই তফসিল ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে ভোটারবিহীন এক তরফা নির্বাচনে দারুণ উল্লসিত শেখ হাসিনা ও আওয়ামী সরকার। কারণ এই পদ্ধতিতে জেনতেনোভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার অদম্য ইচ্ছা।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সাহস ও ধৈর্য্য সহকারে দেশজুড়ে গণআন্দোলনে সক্রিয়। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে অবৈধ এই সরকারকে পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা গণতন্ত্রকামী মানুষের একমাত্র দাবি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার একমাত্র আশ্রয়স্থল বিএনপির চেয়ারপারসন, আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে বন্দি রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একের পর এক মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের এবং বিরোদী দলের হাজার হাজার নেতা কর্মিকে হয়রানি ও গ্রেফতার করে অন্যায়ভাবে কারাগারে রাখা হয়েছে। তার একমাত্র কারণ হলো গায়ের জোরে একতরফা প্রহসনের নির্বাচন করতে চায় সরকার। আর এই জন্যই দ্বাদশ সংসদের তলপিবাহক নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরিকল্পিত একতরফা তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গত ১৭ নভেম্বর, শুক্রবার বিএনপি আয়োজিত একটি সফল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের পর নিউইর্য়কস্থ বাংলাদেশ কনসুলেটে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর কনসাল জেনারেলের কাছে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষে দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছি। তার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি একত্মতা প্রকাশ করছি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য গণবিরোধী সরকারের পদত্যাগের জোর দাবি জানাচ্ছি। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানাচ্ছি।

আমাদের দাবিসমূহ হচ্ছে : 

১. গুরুতর অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। 

২. একটি নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর করে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফার দাবিতে বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামীর দেশ নায়ক তারেক রহমানের সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দেশে প্রত্যাবর্তনের সব ব্যবস্থা করতে হবে। 

৩. কাল্পনিক ও মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতারকৃত বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি এবং বিএনপিসহ বিরোধীদলের সদস্যদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। 

৪. একটি অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যে ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল বাতিল করতে হবে। 

৫. সংসদ ভেঙে দিতে হবে। 

৬. অবিলম্বে সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানি মিথ্যা মামলা বাড়ি ঘরে বিনা কারণে তল্লাশি বন্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মিজানুর রহমান মিল্টন ভূইয়া, অ্যাডভোকেট জামাল আহমে জনি ও আনোয়ার হোসেন।

শেয়ার করুন