২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০২:৫০:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


‘ওরা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করতে চায়’
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৭-২০২৩
‘ওরা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করতে চায়’


‘একতরফা’ নির্বাচন করতেই সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ(আরপিও) সংশোধনী করেছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তার প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। শনিবার সকালে রাজধানীর তোপখানা রোডে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এই দাবি জানান।

 

তিনি বলেন, ‘‘ ক্ষমতাসীন সরকার যখন আর একটি একটি সাজানো একতরফা নির্বাচনের পায়তারা করছে তখন ভোট বাতিলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমানো যে পুরোপুরি দুরভিসন্ধি তাও স্পষ্ট বোঝা যায়। এই সংশোধনী কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়, দেশবাসীর কাছেও গ্রহনযোগ্য নয়। আমরা অবিলম্বে এই সংশোধনী প্রত্যাহার করে নেবার আহ্বান জানাই। তানা হলে এই সংশোধনী প্রত্যাহারসহ অবাধ গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থি যাবতীয় ধারা ও ততপরতা বাতিলে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগনের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি আদায় করব।”

 

সাইফুল হক বলেন, ‘‘ সরকারি দল আরেকটা একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পায়তারার কে র‌্যেণ আগামী সংসদ নির্বাচন নানা দিক থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ।আরপিও‘র এই সংশোধনী এই ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দায়িত্ব দিয়েছে আরপিও‘র এই সংশোধনী তারও সংশোধনী তারও পরিপন্থি। এই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে সরকার নির্বাচন কমিশনকে হাত-পা বেঁধে ফেলে দিলো। সরকারের এই ততপরতা নির্বাচন কেন্দ্র করে সরকারি দলের স্বেচ্ছাচারিতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ব আরো বাড়ি তুলবে। আমরা মনে করি, এই সংশোধনী বিল পাস করে এখন নির্বাচন কমিশনকে প্রকারান্তরে ঠুটো জগন্নাথে পরিণত করা হলো।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ আরপিও‘র ধারা অনুযায়ী আগে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাতদিন আগে যাবতীয় বকেয়া বিল পরিশোধের বাধ্যবাধকতা ছিলো। এখন ক্ষুদ্রঋণ, টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুত, পানির বকেয়া বিল একদিন আগে জমা দিলেও চলবে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনে ঋণখেলাপী ও বিলখেলাপীদের দৌরাত্ম আরো বেড়ে যাবে তা বুঝা যাচ্ছে।”

 

‘ওরা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করতে চায়’

 

জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, ‘‘ এখানে নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা ছিলো সেটাকে সম্পূর্ণরূপে দলীয়করণ করা হয়েছে। মানে সরকার ভোট ডাকাতি করার জন্য যে সুযোগটা নেওয়া দরকার আমার মনে হয়…. আপনারা লক্ষ্য করেছেন কিনা গাইবান্ধার উপ-নির্বাচন বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই সরকার এই সংশোধনীটা পাস করেছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে, তারা যদি হেরে যায় কোথাও তাহলে নির্বাচন কমিশন এটাকে মেনে নেবে । অতএব সেটা যাতে না করতে পারে, আগামী দিনেও এই সরকার যাতে ভোট যুচ্চুরি, ভোট জালিয়াতি, ভোট ডাকাতি করতে পারে সেটার জন্য এই সংশোধনী এনেছে। ওরা(সরকার) নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করতে চায়, তারা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।”

 

তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হতে পারে এটা কোনো পাগলেও বিশ্বাস করতে পারে না। অতএব জনগন ওদেরকে নির্বাচন করতে দেবে না, আমরা দেবো না।”

 

‘‘ আমরা শুধু একা বলছি না, জনগন বলছে। এখন ওদের(সরকার) মাথা খারাপ হয়ে গেছে। টেলিভিশনে দেখলাম সেদিন সংসদে বলছে, বাকশালের সময় নাকী বিএনপি গঠিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালে কি বিএনপির জন্ম হয়েছিলো? বিশেষ ক্ষমতা আইন ৫ মিনিটে করেছে … তখন কি বিএনপির জন্ম হয়েছিলো? পাগল না হলে এই ধরনের উল্টা-পাল্টা কথা বলতে পারে না।”

 

‘বংশবদ করেও সরকার আস্থা পাচ্ছে না’

 

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ এমনিতেই যে নির্বাচন কমিশন আছে এই সরকারের দাসের মতোই… যা বলে তাই করে। আবার এবার যে পরিবর্তনটা করা হলো সেটার সাজেশন একভাবে এই ইসিই দিয়েছে। তারমানে যা বলে তাই তো করতো… তার ওপরে সংশোধনী আনতে হবে কেনো? তার মানে এই সরকার তারই বংশবদ দাস অনুগত দাস নির্বাচন কমিশনের ওপরে ভরসা করতে পারছে না।”

 

‘‘ মানে এখন পরিস্থিতিটা এমন হয়েছে যে, পুরো প্রশাসন যেটা পুলিশ বলেন, সিভিল বলেন, যেকোনো ধরনের বিভাগ বলেন কাকে যে সরকার বিশ্বাস করবে তাই বুঝতে পারছে না। একটা যে ব্যাপক গণমাধ্যমের টেউ দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে সেটা…আন্দোলনে তো পুরো প্রশাসন বদলে যায়… তার মধ্যে আন্তর্জাতিক চাপ, তার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি…। ফলে এই সরকার খুবই দূর্বল সরকার, প্রতিনিয়ত তারা ভয়ভীতির মধ্যে আছে। আমরা সরকারকে বলতে চাই, এসব সংশোধনী করে কিছু হবে না… তোমাদেরকে যেতেই হবে।”

 

‘দিনে ভোট কারচুপির বুদ্ধি’

 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি আরপিও‘র সংশোধনীর সমালোচনা করে বলেন, ‘‘ এখন তারা (ইসি) কি করতে পারবেন? যে কেন্দ্রটাতে তারা ভোট জালিয়াতি দেখছেন সেই কেন্দ্রটাকে তারা বাতিল করতে পারবেন, পুরো নির্বাচন বাতিল করতে পারবেন না। এখন ধরুণ ১০০ থেকে ১৪০ কেন্দ্র হয় একেকটি আসনে। এখন ইসি ১৪০টি কেন্দ্রের বুথ পরীক্ষা করতে পারবে? খেয়াল করে দেখেন ১৮০ গুন ৩০০ … এটা কি সম্ভব? যে জনবল তাদের আছে তা দিয়ে সম্ভব নয়।”

 

‘‘ তারা কতিপয় কেন্দ্র দেখে মূল ট্রেন্ডটাকে বিচার করতে পারবেন। তারা যেটা চিন্তা করছেন যে, ১৪০টি কেন্দ্রে মধ্যে ১০ টি কেন্দ্র/৫টি কেন্দ্র ওখানে যদি জালিয়াতি, চুরি, ভোট ডাকাতি ধরা পড়ে যায় তাহলে ওই কেন্দ্র গুলো বাতিল হবে বাকি সমস্ত কেন্দ্র গুলোতে যে ভোট ডাকাতি করলেন সেটা জায়েজ হয়ে গেলো। এই সুন্দর ব্যবস্থাটা করলেন। এর মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করে তারা জয়লাভ করলেন। এর মাধ্যমে সারাদেশের মানুষ ও দুনিয়াকে দেখাবেন যে তারা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করেছেন। এই যে বুদ্ধি তারা বের করলেন.. নির্বাচন কমিশনের লোকেরাই বলেন আর সরকারের লোকেরাই বলেন অথবা বিভিন্ন রকম তাদের পরামর্শদাতারাই বলেন তাদের জন্য বুদ্ধি বের করে দিয়েছেন কিভাবে দিনে ভোট ডাকাতি করা যায়।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ এই ভোট ডাকাতদের এই সমস্ত আরপিও বাংলাদেশের মানুষ ছুড়ে ফেলে দেবে… এটাই বাংলাদেশের মানুষকে পরিস্কার শপথ নিতে হবে। কারণ এই ধরনের ষড়যন্ত্র জনগনের অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য এবং যারা এর সাথে জড়িত প্র্রত্যেককে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।”

 

সংবাদ সম্মেলনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রচার ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের দিদারুল ভুঁইয়া, ইমরান ইমন, ছাত্র ফেডারেশনের সৈকত আরিফ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

 


শেয়ার করুন