২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১১:১৫:২৯ অপরাহ্ন


পুলিশ এক বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করেছে
ইফতারে বেগুনী খাওয়া হলো না সাজুর, মেয়ে লাইফ সাপোর্টে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০২-২০২৪
ইফতারে বেগুনী খাওয়া হলো না সাজুর, মেয়ে লাইফ সাপোর্টে জাহাঙ্গীর আলী সাজু এবং দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি


পুরো নাম জাহাঙ্গীর আলী সাজু। সাজু ভাই নামেই সবাই কমবেশি চেনেন। সিলেটের পৌর বিপণীর কাঁচঘরের স্বত্বাধিকারী হওয়ায় অনেক মানুষের সাথে সাজুর পরিচয়। দেশে ব্যবসা থাকা সত্ত্বেও স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এসেছিলেন সন্তানদের উন্নত জীবনের আশায়। কিন্তু তার সেই আশা পূরণ হবার আগেই এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন ৫৪ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আলী সাজু। তার সাথে আরো একজন শ্বেতাঙ্গ মহিলা ঘটনাস্থলে মারা যান। জীবন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সাজুর আদরের কন্যাসন্তান ২১ বছর বয়সী মমো জাহাঙ্গীর। ছেলে তামিম জাহাঙ্গীরও আহত হয়েছে। প্রথমিক চিকিৎসা শেষে বাবার লাশের দেখাশোনার করার কারণে বাইরে রয়েছেন। বাবার লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর পর আবারো চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাবেন।

ঘটনাটি ঘটে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রোববার বিকেল ৪টার সময় মিশিগানের ওয়ারেন সিটিতে। মিশিগান থেকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাজির আহমেদ জানান, জাহাঙ্গীর আলী সাজুর সাথে আমার পরিচয় ১৯৯৪ সাল থেকে। আমি উনার বিয়েতেও গিয়েছিলাম। আমার বন্ধু নুরুল আহসানের (হিরু) বোনের সাথেই সাজুর বয়ে হয়। সেই থেকে আমাদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কথা প্রসঙ্গে জানালেন, কিছুদিন আগেও সাজু আমার ঘর থেকে স্বপরিবারে বেরিয়ে গেলেন। বলছিলেন এখানে তার ভাল লাগছে না। দেশে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আরো কত কি! বাচ্চাদের লেখাপড়া শেষ হলেই চলে যাবেন। কিন্তু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস। সাজু বাংলাদেশে যাচ্ছেন ঠিক, তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে। তিনি বলেন, তার বাসায় যাবার পর আমাকে জানানো হয়, জাহাঙ্গীর আলী সাজু শবেবরাতের রোজা রেখেছিলেন। ইফতারের সময় বেগুনী খেতে চেয়েছিলেন। যে কারণে স্ত্রীকে বেগুন কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু সাজুর ইফতারও করা হলো না, বেগুনীও খাওয়া হলো না। তার আগেই তিনি চলে গেলেন পরপারে।

নাজির আহমেদ জানান, তিন মেয়ে, স্ত্রী আর এক ছেলের সংসার ছিল সাজুর। তিনি মিশিগানের ওয়ারেনে বাড়ি ক্রয় করেছিলেন। ঘটনার দিন বড় মেয়ে মমো আর ছেলে তামিমকে নিয়ে হেমটরামিক শহরে যাচ্ছিলেন ২০২৪ এর ট্যাক্স ফাইল করবেন বলে। যাওয়ার পথে কফি সপে কফি নিতে গেলে ঘটে দুর্ঘটনা! বিপরীত থেকে আসা একটি প্রাইভেটকারের ধাক্কায় সাজুর গাড়িটা কিছুক্ষণ শুণ্যে ভাসছিল। শুণ্য থেকে গাড়িটি পড়ে একজন শেতাঙ্গ মহিলা পথচারীর উপর। ঘটনাস্থলে মহিলারও মৃত্যু ঘটে। গাড়ি চালাচ্ছিলেন সাজুর ছেলে তামিম। সাজু ছিলেন সামনের সিটে। ধাক্কাটা লাগে সাজুর পাশে। প্রচন্ড ধাক্কায় সাজুর গাড়ি চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই সাজু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন (ইন্নালিল্লাহে.. রাজেউন)। পিছনের সিটে বসা ছিলেন সাজুর বড় মেয়ে মমো। কথা প্রসঙ্গে জালালেন এই মেয়েকে নিয়ে কিছুদিন আগে দেশে গিয়েছিলেন এবং বিয়ে দিয়ে এসেছেন। দুঘর্টনায় মমো মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। তাকে বমন্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে সে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তার শরীরের বেশিরভাগ হাড় ভেঙ্গে গেছে। এত জোরে অপর গাড়িটি আঘাত করেছে যে, সে পিছনের সিট থেকে গ্লাস ভেঙ্গে প্রায় কয়েক ফুট বাইরে গিয়ে আঁছড়ে পড়ে। আর একমাত্র ছেলের অবস্থা এখন অনেকটা আশংকামুক্ত। যদিও তার শরীরেরও বেশ কিছু হাড় ভেঙ্গেছে।

জানা গেছে, ধাক্কা মারা গাড়িটি চালাচ্ছিলেন আরেক বাংলাদেশী। যতদূত জানা গেছে, দুটো গাড়ির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছিলো। একটি গাড়ি সাজুর গাড়িকে ওভারটেক করে এবং অপর গাড়িটে সাজুর গাড়িকে ধাক্কা দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঐ বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করেছে। যে রাস্তায় ৩৫ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালানোর কথা সেখানে প্রায় ১০০ মাইল বেগে গাড়ি চালাচ্ছিলো ঐ বাংলাদেশী।

এ দিকে জাহাঙ্গীর আলী সাজুর নামাজে জানাজা ২৭ ফেব্রুয়ারি বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হয় এবং তার লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার লাশ পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হবে। তার বাড়ি সিলেট সদরের আম্বার খানার বড়বাজারে। এদিকে সাজুর এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে মিশিগানে বাংলাদেশী কম্যুনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে।

শেয়ার করুন