২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:৩১:৫৭ অপরাহ্ন


জামায়াত-আ.লীগ নির্বাচনী আঁতাতে ভারতে না
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৮-২০২৩
জামায়াত-আ.লীগ নির্বাচনী আঁতাতে ভারতে না


বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসাবে দেশে বিদেশে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে আরেকটি একতরফা নির্বাচনী আঁতাতে বিরুদ্ধে না বলেছে ভারত। কোনোভাবেই, কোনো ফরমেটে জমায়াতের সাথে আঁতাতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী এবং এমনকি মাঠের বিরোধী দলের জন্য যে ক্ষতিকর হবে এমন সর্তক বার্তা দিয়েছে দেশটি। এমন খবর পাওয়া গেছে, বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সূত্র থেকে। সম্প্রতি ভারত থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকের খবর বিশ্লেষণ করেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে। 

জানা গেছে, বাংলাদেশে আরো একটি একতরফা নির্বাচন করে ফেলতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সবদলকে বিশেষ করে বাংলাদেশে সক্রিয় মাঠের বিরোধী দলকে বিএনপিকে নিয়েই একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকারের ওপর দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাপ রয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার সমঝোতার মাধ্যমে বা আসন ভাগাভাগির নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি’কে কোনোভাবেই রাজি করাতে পারছে না। এমন অবস্থায় বিএনপিকে বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীনরা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিরোধীকারী জামায়াতকে নিয়ে একটি একতরফা নির্বাচনের ছক কষেই ফেলেছিল। কুমিল্লার একটি আসনের জামায়াতের এক নেতার মনোনয়নটি পুরোপুরি কনফার্ম করে তাকেসহ দলটিকে ১০ টি আসন দেয়া হবে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিশ্চিত করে। বিনিময়ে আরো অনেক কিছু সেই সমঝোতার প্যাকেজে ছিলো। এমনও শোনা যায়, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ বেশ কয়েকজন জামায়াতী আর্দশে বিশ্বাসী আলেমের মুক্তির ব্যাপারটিও এই সমঝোতার প্যাকেজে ছিল। রাজনৈতিক মাঠে সমঝোতার এমন নমুনাও পাওয়া যাচ্ছিন খুব দ্রুত। হঠাৎ করেই রাজধানীতে ১০ বছর পর পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে সমাবেশ করেছে এই  জামায়াতে ইসলামী। রাজনৈতিক সূত্রটি নিশ্চিত করে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সমাবেশের মাধ্যমেই সমঝোতার প্রক্রিয়াটি দৃশ্যমান হয়। তবে এই সমাবেশের অনুমতি পেতে নানান ধরনের নাটক দেখতে হয়েছে  দেশবাসীকে।  দেখা গেছে, প্রথমে সমাবেশ করার অনুমতি চাইতে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা পুলিশের নানান ধরনের হয়রানি বা আটকের শিকার হয়েছেন। আবার এ-ও দেখা গেছে সেখান থেকে ছাড়াও পেয়েছেন। আবার ছাড়া পেয়েই জামায়াতে ইসলামীর নেতারা ১০ জুনের সমাবেশ করার ডাক দিয়ে তা সফলও করে ফেলেতে দেখা গেছে। সমঝোতা প্যাকেজে অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামীর দলটি একের পর এক রাজধানীসহ সারাদেশে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে মাঠের প্রায় অর্ধশতাধিক দল নিয়ে একদফার আন্দোলন চাঙ্গা করে যাওয়া বিএনপি পড়ে যায় বেকায়দায়। কারো কারো আঙ্গুল উঠে তখন বিএনপি’র দিকেই। তারা মনে করে বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর সাথে গোপনে সমঝোতা করেছে। কিন্তু মাঠে জামায়াতে ইসলামী দেখাতে শুরু করে তাদের ব্যাপারে বর্তমানে প্রভাবশালী খেলোয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাথে আছে। অবশ্য এটাও সত্য যে জামায়াতে ইসলামীর সাথে মার্কিনীদের একটা যোগাযোগ লক্ষ্য করা গেছে। জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে মার্কিনীদের দুর্বলতা ফুটে উঠেছে সম্প্রতি প্রকাশিত মানবাধিকার কমিশন রির্পোটেও। এই রিপোর্টের এক জায়গায় বলা হয়েছে, সরকার যেনো বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামীকে সাংবিধানিক রাজনৈতিক অধিকারের দেয়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার প্রতিবেদনে জামায়াত ও দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর নিপীড়নের প্রসঙ্গ আসে। দেশটির ঢাকার দূতাবাস জামায়াত নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের আসন্ন অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টিও রাজনীতিতে চলে আসে। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে জামায়াত বিষয়ে নমনীয়তা দেখা যায়। এতদিন তাঁরা দলটিকে নিষিদ্ধের কথা বললেও জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার পক্ষে নানা যুক্তি দেন। আসল সত্য লুকাতে জামায়াতে ইসলামীর সাথে সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মার্কিন ভিসা নীতি বিষয়টি সরাসরি না বললেও এই কারণকেই আকারে ইঙ্গিতে তুলে ধরতে চেষ্ট করে। মার্কিন ভিসানীতির কারণেই জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে নমনীয়তা দেখাচ্ছে বলে প্রচার করা হয়। কারো কারো মতে, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করতে এর পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক কূটকৈৗশলের অংশ হিসাবে জামায়াতে ইসলামীকে কাছে টেনে নিয়ে একটি সমঝোতার প্যাকেজ তৈরি করে ফেলে। ক্ষমতাসীদের মধ্যে এটা বদ্ধমূল হয়ে যায় যে জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে নির্বাচন করে ফেললে আমেরিকার সন্তুষ্টি মিলবে। চারিদেক বলা যাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়ে গেছে। পাওয়া যাবে মার্কিনীসহ পশ্চিমাদের কাছে গণতন্ত্রের সার্টিফিকেট। আর প্রতিবেশী দেশ ভারততো আছেই সাথে। কিন্তু জানা গেছে, এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ ভারত যে কি-না বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে সে দেশটি বিগড়ে যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমন কার্যকলাপে। তারা সাফ জানিয়ে দেয় যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে বিএনপি’ ঠেকাতে গিয়ে এখানে কট্টর মৌলবাদি দলটিকেই কাছে টেনে প্রশয় দিচ্ছে, যা খোদ বাংলাদেশ নয় পুরো উপমহাদেশেই একসময়ে শান্তি বিনষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ জামায়াতের সাথে পাকিস্তান এবং চীনের ভালো দহরম মহরম আছে যা ভারতীয়রা ভালোই বোঝে।

প্রকাশিত খবরেও এমন সত্যতা পাওয়া গেলো..

সম্প্রতি ভারত থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে । এতে বলা হয় যে আওয়ামী লীগকে তার সকল চীন ও ইসলামপন্থী নেতাদের ত্যাগ করে অসাম্প্রদায়ায়িক এবং জনপ্রিয় প্রার্থীদেরকে বেছে নিতে হবে। এর পাশাপাশি এতে আরো বলা হয় বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের বিষয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপক ঐকমত্য হয়েছে। প্রকাশিত রিপোর্টে আরো বলা হয় শেখ হাসিনা এখনও ভারতের প্রিয় ও আস্থাভাজন রয়েছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ঢাকার একজন কৌশলগত বিশেষজ্ঞ মনে করেন, “গত কয়েক বছরে বিভিন্ন কৌশলগত কারণে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এবং নয়াদিল্লি এখন সেসব উদ্বেগের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে এগিয়ে যেতে দেবে এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। রাজনৈতিক ও বিচক্ষণ কূটনীতিকদের মতে পত্রিকাটিতে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আপাতত ভারতের প্রিয় ও আস্থাভাজনের জায়গায় নেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কেননা প্রকাশিত রিপোর্টেই বলা হয়, “গত কয়েক বছরে বিভিন্ন কৌশলগত কারণে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এবং নয়াদিল্লি এখন সেসব উদ্বেগের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে এগিয়ে যেতে দেবে এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। প্রশ্ন হচ্ছে বিষয়গুলি আসলে কি? ভারতের রাজনৈতিক সূত্রগুলো মনে করে, বাংলাদেশে খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার আগামীতে অনুষ্ঠিততব্য ২০২৪ সালের নির্বাচনে নিজের মতো ছক একে তা সম্পন্ন  করতে চায়। এই ছকে রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদি শক্তি জামায়াতসহ একই মতাদর্শে বিশ্বাসীরা। এমন আভাসও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা গেছে। এব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত প্রগতিশীল উদার গণতন্ত্রমনা দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ বুদ্ধিজীবীরা না প্রকাশ করে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই এমন মতকে প্রাধান্য দেয়নি। দীর্গদিন ধরে ধরে সম্পৃক্ত প্রগতিশীল উদার গণতন্ত্রমনা দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশে বিভিন্ন সভা সেমিনারে প্রকাশেই বলতে থাকে যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন জামায়াতের মতো মৌলবাদি শক্তির সাথে হাত মিলিয়েছে, দিচ্ছে প্রশয়। সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মারা যাওয়ার পর খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি বড়ো বড় অংশ যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে যা কি-না এমন সত্যকে স্পস্ট করে দেয় যে খোদ আওয়ামী লীগে এখন জামায়াতার মতাদর্শে বিশ্বাসীরা জেকে বসেছে। 

সমঝোতার পরও হার্ডলাইনে কেনো আওয়ামী লীগ

মাঠে জামায়াতের সাথে একপ্রকার সমঝোতা হয়েই গিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। সেভাবেই জামায়াত রাজধানীতে সমাবেশ করার সুযোগও পায়। কিন্তু বাদ সাথে ভারত। যা সম্প্রতি প্রকাশিত খবরটি ভালোভাবে চোখ বুলালে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের বিষয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপক ঐকমত্য হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে কি সেই ঐকমত্য। ধারণা করা যায় ভারত যেভাবেই হোক জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালি খেলোয়াড় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ম্যানেজ করে ফেলেছে। যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর যা-ই করুক না কেনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী দল জামায়াতকে যেনো কোনোভাবই ছাড় না দেয়। বোঝানো হয় এই জামায়াতেরও পেছনে আসে চীন ও পাকিস্তান। ধারণা করা হয় এসব যুক্তি দেখিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত বলা চায় কনভিন্স করে ফেলেছে। আর  এই কারণে জুনে জামায়াত রাজপথ ছেড়ে দিলেও জুলাইয়ে কিংবা আগস্টেও ছাড় দেয়নি, যা এখনো বলবৎ আছে। ধারণা করা হয় আওয়ামী লীগ-জামায়াত নির্বাচনী আঁতাত ভেঙ্গে দেয়ার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশটি শক্ত ভূমিকা রেখেছে।

শেয়ার করুন