২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১০:১৯:০৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


আজব দেশে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৩-২০২৪
আজব দেশে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ


ক্রমশ এক আজব দেশে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ! সরকার সমর্থিত সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ক্ষণে ক্ষণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশছোঁয়া। মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগুন না ব্যবহার করে মিষ্টিকুমড়ার বড়া তৈরি করতে, এক মন্ত্রী বলেন, খেজুর না খেয়ে বরই দিয়ে ইফতার করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন, পরে শুনবেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদন নেই। সনদ ভুয়া। বাসে উঠলেন, দুর্ঘটনার পর জানবেন ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই, গাড়ির ফিটনেস সনদ নেই। লঞ্চে চাপলেন, ডুবে যাওয়ার পর শুনবেন, লঞ্চের ফিটনেস নেই, নকশা জাল। ভবনে থাকবেন, অফিস করবেন, দুর্ঘটনার পর জানবেন ভবনটির অনুমোদন নেই..। হাসপাতালে ভর্তি হবেন পরে শুনবেন হাসপাতালটি অনুমোদনহীন, ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা নেবেন, পরে শুনবেন সার্টিফিকেট জাল। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কাউকে আমন্ত্রণ জানাবেন পরে শুনবেন আমন্ত্রিত অতিথি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। পরিবার-পরিজন নিয়ে খেতে রেস্টুরেন্টে যাবেন, পরে শুবেন আবাসিক ভবনে অনুমোদনবিহীন ব্যবসা চলছিল, অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। তাহলে দেশে এতো সংস্থা জনগণের টাকায় কেন প্রতিপালিত হচ্ছে? সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ ও সচিব আমলারা কি করছেন? 

এমন একটা দেশ সৃষ্টির জন্য ৩০ লাখ আত্মাহুতি দেয়নি। আসছে আসছে বলে রমজান মাস শুরু। মুসলিম প্রধান দেশে অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ রোজা পালন করবেন। খেজুর মুসলানদের রোজার সময়ে অপরিহার্য খাবার। সরকারের উচিত বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মূল্য সহনীয় রাখা। অথচ মন্ত্রী উপদেশ দিচ্ছেন খেজুরের পরিবর্তে বরই দিয়ে ইফতার করতে। মনে আছে প্রধানমন্ত্রী একসময় পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজু না খেয়ে কুমড়ার পাকোড়া খেতে উপদেশ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের কৃষক সমাজ কিন্তু প্রতিটি কৃষিপণ্য বাম্পার ফলন করছে। বাজারে কিন্তু সরবরাহ সংকট নেই। কিন্তু একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীরা অবৈধভাবে মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। এমন না যে সরকার এদের চিনে না। কিন্তু কেন সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না? ওরা কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী? 

দেশে রাজউক, সিটি কাউন্সিল, ফায়ার ব্রিগেড, পরিবেশ মন্ত্রণালয় আছে তার পরও কীভাবে অনুমোদনবিহীন অসংখ্য বহুতল ভবন থাকে বাংলাদেশে? কীভাবে আবাসিক বভনে অবৈধভাবে অনিরাপদভাবে হোটেল-রেস্টুরেন্ট দিব্বি নাকের ডগায় মাশরুমের মতো গড়ে ওঠে? তিতাস গ্যাসের বিতরণ এলাকায় অজস্র অবৈধ সংযোগ অথচ ১৫ বছর বর্তমান সরকারের শাসন আমলে প্রধানমন্ত্রীর দুইজন উপদেষ্টা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, একজন এখনো বহাল তবিয়তে। গ্যাস বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগজনিত কারণে আগুনে পুড়ে রোজার সময় মসজিদে মারা গেল মুসল্লি। কারো কি বিচার হয়েছে? দুনিয়ার ভদ্র দেশে এই ধরনের ঘটনায় মন্ত্রী-সচিবরা পদত্যাগ করে। বাংলাদেশ তবে কি ভদ্র দেশের পর্যায়ে পড়ে না? কীভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অগোচরে অসংখ্য অনুমোদনবিহীন হাসপাতাল ক্লিনিক গড়ে উঠতে পারে? এবং এর অধিকাংশ খোদ রাজধানী ও মফস্বল শহরগুলোতেই। দেশে পুলিশ, বিজেবি, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা কত কিছু আছে। শুধু দুর্ঘটনা ঘটলেই ওদের অস্তিত্ব অনুভব করা যায়। দেশে চালু থাকা কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি অনুমোদন আছে? কি ধরনের উচ্চশিক্ষা দেওয়া হচ্ছে এগুলোতে? খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, কানাডা ঘোষণা করে একটা বড় তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তারা ভর্তির যোগ্যতার অনুমোদন দেবে না। 

নগর মহানগরগুলোর সড়কে হাজার হাজার অনুমোদনহীন যানবাহন চলছে, চালকদের লাইসেন্স নেই, যানবাহনের ফিটনেস নেই। একবার সংশ্লিষ্ট এক বড় কর্মকর্তা বলেছিলেন, পরিবহন সেক্টরের মালিক নিয়ন্ত্রকদের হাত অনেক লম্বা। কি করে কর্তৃপক্ষ? দেশে এখন গ্যাস-সংকটের কারণে এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু ব্যবহার বিধি, নিরাপদ সংরক্ষণের নিয়ম না জানায় প্রতিনিয়ত প্রাণহানি ঘটছে। এই বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির দায়িত্ব কার? ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবাধ লুটপাটের কথা নাই বা বললাম। লুটেরাদের সবাই চেনে। ওরা দূর আকাশের তারা। ধরাছোঁয়ার বাইরে। 

দেশটা কি এভাবেই চলবে? বেইলী রোডের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পর নানা কর্তৃপক্ষ তৎপরতা দেখাচ্ছে। এগুলো নিয়মিত করা হলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো। স্বাস্থ্য মন্ত্রীর উদ্যোগে অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। আশা করি সুফল মিলবে। সুধীজন বলছেন, মাটির নিচে শতছিন্ন গ্যাস পাইপ লাইন নিয়ে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির পর ঢাকা মহানগরী, হাজারো অনিরাপদ হোটেল রেস্টুরেন্টের কারণে অনেক ভবন এখন লাইভ বোমা। সড়কে যানবাহনগুলো যমদূত। মুক্তি কোথায়? সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রী ও সাংসদদের কি লজ্জা হয় না?

শেয়ার করুন