মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকান পার্টির। ক্যালিফোর্নিয়ার ২৭তম কংগ্রেসে আসনে জয়ের মধ্য নিম্নকক্ষে এখন তাদের আসন ২১৮। এর মধ্য দিয়ে কংগ্রেস বিভক্ত হয়ে পড়লো। কারণ প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা জয়ী হলেও উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রয়ে গেছে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটদের হাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোট হয় ৮ নভেম্বর। রিপাবলিকানদের আশা ছিল, এই নির্বাচনে ‘লাল ঢেউ’ হবে। কংগ্রেসের দু’কক্ষেই তারা ভালো ব্যবধানে জয়ী হবে। কিন্তু তাদের প্রত্যাশামতো সেই ঢেউ আসেনি। সিনেটের নিয়ন্ত্রণ তো পেলোই না, উল্টো প্রতিনিধি পরিষদে তারা জয়ী হলেও ডেমোক্রেটদের সঙ্গে তাদের আসন ব্যবধান খুব বেশি নয়। প্রতিনিধি পরিষদে মোট আসন ৪৩৫টি। এ পর্যন্ত ৪২৯টি আসনের ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২১৮টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছে রিপাবলিকান পার্টি। আর ডেমোক্রেটিক পার্টি পেয়েছে ২১১টি আসন। আগামী জানুয়ারিতে নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে রিপাবলিকানরা।
প্রতিনিধি পরিষদে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার পর এই কক্ষের রিপাবলিকান পার্টির নেতা ও ভবিষ্যৎ স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নতুন পথে হাঁটতে প্রস্তুত। এ কাজটি করার জন্য প্রস্তুত প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান পার্টির নেতারা।
ব্যবধান অল্প হলেও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের বিভিন্ন বিল আটকে দেয়ার সুযোগ পাবে রিপাবলিকান পার্টি। এ ছাড়া ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বাইডেনের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে তাঁর প্রশাসন ও পরিবারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তদন্তের সুযোগ পাবে বিরোধী শিবির।
এর আগে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ছিল ডেমোক্রেটদের হাতে। সেই সময় প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুবার অভিশংসনের প্রস্তাব এনেছিলেন ডেমোক্রেটরা। ধারণা করা হচ্ছে, বাইডেনের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিতে তদন্ত শুরু করবে রিপাবলিকান পার্টি। বাইডেন প্রশাসন, তাঁর ছেলে হান্টার বাইডেনের চীন ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে ব্যবসার বিষয়ে তদন্ত হতে পারে পরিষদে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার ও সামরিক বাহিনীর তহবিলসহ প্রতিনিধি পরিষদে বাইডেনের যেকোনো অ্যাজেন্ডাও আটকে দেয়ার সুযোগ পাবে রিপাবলিকান পার্টি। আবার আন্তর্জাতিক ইস্যু যেমন ইউক্রেনে সহায়তা কমানোর মতো পদক্ষেপও নিতে পারবে দলটি। তবে এমন পদক্ষেপ নিতে হলে প্রতিনিধি পরিষদের সব রিপাবলিকান নেতাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ হারানোয় বাইডেনের ক্ষমতা খানিকটা হলেও কমে আসবে। তবে এরপরও গত ১৬ নভেস্বর রিপাবলিকান পার্টিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। কেভিন ম্যাকার্থিকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে কোনো ইস্যুতে আমি বিরোধীদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ চান আমরা তাঁদের জন্য কাজ করি।’ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকান পার্টির হাতে চলে যাওয়ার পর বিবৃতি দিয়েছেন এই কক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তিনি বলেন, বাইডেনের যে কোনো অ্যাজেন্ডা পাস করতে পরিষদের ডেমোক্রেটরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবেন।
যে কারণে বিভক্ত ভোটার
এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০২০ সালের আগের অবস্থায় ফিরে গেল কংগ্রেস। মূলত দুটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে এবার ভোটাররা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে জ্বালানির। বাসাভাড়া বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির এই সুযোগটা মধ্যবর্তী নির্বাচনে নিয়েছে রিপাবলিকান পার্টি। এসব ইস্যুতে ডেমোক্রেটদের আক্রমণ করেছে দলটি। উল্টো দিকে ডেমোক্রেটরা সুযোগ পেয়েছেন গর্ভপাত আইন ইস্যুতে। গর্ভপাতের অধিকার দেয়া প্রায় পাঁচ দশকের একটি পুরোনো আইন গত জুনে বাতিল করে দেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। এরপর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এ ইস্যুতে দোদুল্যমান ভোটাররা ডেমোক্রেট শিবিরে ভিড়েছেন।
এডিসন রিসার্চের মতামত জরিপ অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের এক-তৃতীয়াংশ ভোটারের মধ্যে এবার প্রধান ইস্যু ছিল মূল্যস্ফীতি। আর এক-চতুর্থাংশ ভোটার এবার ভোট দিয়েছেন গর্ভপাত আইনের ইস্যু মাথায় রেখে। আর ৬১ শতাংশ ভোটার এই আইন বাতিলের বিরোধিতা করেছেন।
