২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ৬:৩৩:১৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


দখল-দূষণে ভাগাড়ে পরিণত ঢাকার চারপাশের নদী
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২৪
দখল-দূষণে ভাগাড়ে পরিণত ঢাকার চারপাশের নদী শুকিয়ে যাওয়া নদী


শিশুকাল থেকেই শুনেছি বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকা শহর। শুধু ঢাকা কেন দুনিয়ার অধিকাংশ নগর মহানগরী কোনো না কোনো নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। কৈশোরে ঢাকা এসে দেখেছি তিলোত্তমা ঢাকা নগরের চারপাশে নয়নাভিরাম বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদী। যৌবন পেরিয়ে পৌঢ়ত্বে পৌঁছে দেখেছি পরিকল্পিত নগরায়ণ না হওয়ায় দখল এবং দূষণে মহানগরীর প্রাণ নদীগুলো বিষাক্ত, গন্ধময় ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে শিল্পকারখানা এবং মিউনিসিপাল বর্জ্য নদীর জলে মিশে নদীগুলো এখন জলজ প্রাণীর জীবন ধারণের অনুপযুক্ত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া প্রবাস জীবনে মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, সিডনি, এডিলেডে দেখেছি পাশে থাকা নদীগুলো কি যত্নে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে। 

কীভাবে নদীগুলো নদীভিত্তিক নগরায়ণ করেছে। দেশে ফিরে ঢাকার জীর্ণশীর্ণ, দূষিত নদীগুলো দেখে কষ্ট পাই। ইদানীং ১২০০ কোটি টাকা ব্যায়ে নদীর তীর রক্ষার একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নদীগুলোর পাড় বরাবর ওয়াকওয়ে পাশে সবুজ বৃক্ষরাজি স্থাপন করে হয়তো শোভাবর্ধন করা যাবে। কিন্তু সমন্বিতভাবে নদীগুলোতে শিল্প এবং মিউনিসিপাল বর্জ্য নিষ্কাশন অবিলম্বে বন্ধ করা না গেলে মৃতপ্রায় নদীগুলো একসময় স্মৃতি হয়ে যাবে।

নদীগুলো রক্ষায় সরকার প্রধান আন্তরিক, পরিবেশবিদ, বুদ্ধিজীবীরা সোচ্চার। আছে বেশ কিছু সংস্থা, এনজিও। বাংলাদেশের উন্নয়নসহযোগীরা নানা সময় নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। এমন না সমস্যা চিহ্নিত হয়নি। কিন্তু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দায়িত্ব প্রাপ্ত বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং সাধারণভাবে জনসচেতনতার অভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মহানগরীতে নানা স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে শিল্পকারখানা। বাংলাদেশের পরিবেশ আইনে শিল্প বর্জ্য ইটিপিতে পরিশোধন ছাড়া নিষ্কাশন নিষিদ্ধ থাকলেও সেই বিধি মানছে না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। মিউনিসিপাল বর্জ্য নিষ্কাশন বিষয়েও কারো কোনো দায়বদ্ধতা নেই। 

এমনিতেই ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ জনগোষ্ঠীর চাপে পিষ্ট ঢাকা মহানগরী সেখানে নদীদূষণ, জলাশয়দূষণ মানুষ দূরের জলজ প্রাণীগুলোর বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। ঢাকার মাঝে বয়ে চলা খালগুলোর অধিকাংশ মরে গাছে। অন্যগুলো দূষণের কবলে মৃতপ্রায়। অথচ নদী, খালগুলো হতে পারতো ঢাকার যোগাযোগের সবচেয়ে সেরা মাধ্যম। নদীর জল বিশুদ্ধ করে পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করা যেতো। সেই সম্ভাবনাগুলো এখন সুদূরপরাহত। 

দেখলাম ইদানীং চৌকশ পরিবেশমন্ত্রী বেশকিছু উদ্যোগের কথা বলছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি কাউন্সিল জেগে উঠছে। বায়ুদূষণ, যানজট, জলজট মুক্ত করার প্রক্রিয়ায় নদী জলাশয়গুলো রক্ষা ও দূষণ মুক্ত করার জন্য এখন প্রয়োজন সুসমন্বিত কার্যক্রম, জনগণ সম্পৃক্ত কার্যকরি বাস্তবায়ন ব্যবস্থা। 

আপনারা যারা টেমস নদী, রাইন, ভলগা, ব্রিসবেন নদী, ইয়ারা নদী, মিসিসিপি দেখেছেন, তাদের কাছে নদী নগরায়ণে কি ভূমিকা রাখে বুঝিয়ে বলতে হবে না। আশা করি সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রয়াসে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু যৌবন ফিরে পাবে। নদীগুলো দখলমুক্ত হবে। দূষণের সব উৎস নিয়ন্ত্রণে আসবে। আবারও ঢাকার নদীগুলো ঢাকা মহানগরীকে বসবাসের জন্য ইতিমধ্যে অন্যতম নিকৃষ্ট শহরের কলঙ্ক তিলক থেকে মুক্তিতে অবদান রাখবে।

শেয়ার করুন