ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশপাশে ছাত্রদলের উপর ছাত্রলীগের হামলাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। আজ পল্টনস্থ বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন,‘আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সশস্ত্র সহিংস আক্রমণে ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মী গুরুতর জখম হয়।
শহীদ মিনারের সামনে বেলা ১১-৩০ টা থেকে দফায় দফায় ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। গুরুতর আহত ছাত্রদল নেতাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখনও তারা শঙ্কামুক্ত নন। ছাত্রলীগের হামলায় রেহাই পায়নি ছাত্রদল নেত্রীরাও। রড, হকিস্টিক, রামদা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মেয়েদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হায়েনার মতো।’
বিএনপির এ শীর্ষ নেতা অভিযোগ করে বলেন,‘দুই জন ছাত্রদল নেতাকে ঢাবি’র শহিদুল্লাহ হলের নির্জন কক্ষে উঠিয়ে নিয়ে এসে আবরার স্টাইলে শারীরিক নির্যাতন চালায়। তাদের রক্ত শুকাতে না শুকাতেই আজ সকালে আবারো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদলের মিছিলে আক্রমণ চালায়। ছাত্রদল নেতারা হাইকোর্ট চত্তরে আশ্রয় নিতে গেলে সেখানেও ছাত্রদল ও আইনজীবীদের ওপর রক্তাক্ত হামলা চালায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এ সময় তাদের আক্রমণে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে ছাত্রদলের মিছিলে গুলিবর্ষণ করছে। বেশ কয়েকজন ছাত্রদল নেতাকে ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠা স্টাইলে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। তাদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি সাধারণ আইনজীবীরাও। ছাত্রলীগের হামলায় আজ সুপ্রীম কোর্টও রক্তাক্ত হয়েছে। ছাত্রলীগের এই আচরণ সর্ম্পূর্ণরুপে মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্নমহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে তৈরী করেছেন গণতন্ত্র ও বিএনপি’র বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধে লিপ্ত থাকার জন্য। অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য জনগণকে শেখ হাসিনার প্রয়োজন নেই। তাঁর খুবই প্রয়োজন সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। আর এই প্রয়োজন মেটাতেই ছাত্রলীগ-যুবলীগকে এখন অস্ত্র দিয়ে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বাহবা কুড়ানোর জন্য তারা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে বিরোধী দলের রক্ত নিংড়িয়ে নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর এই খুনী বাহিনী বাংলাদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
তারা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে শ্রমিক বিশ^জিত, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু বকর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমর ফারুক, জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের যুবায়েরসহ বিরোধী ও নিজ দলের অসংখ্য ছাত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত অর্থাৎ গত ১৩ বছরে অর্ধ শতাধিক মেধাবী শিক্ষার্থীকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ।
ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গোলাগুলিতে নিহত হয় শিশু রাব্বী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়গুলো সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এরা শুধুমাত্র ছাত্র-ছাত্রী-শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের জীবনই কেড়ে নেয়নি, সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষকে নানাভাবে হয়রানী, হুমকি ও ভয়ভীতির শিকারে পরিণত করেছে।’
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ৪৭ জনের এক তালিকা দেন, যারা ওই হামলায় আহত হয়েছেন।
তিনি বলেণ,‘ছাত্রলীগ কর্তৃক আজ ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা ও তাদেরকে গুরুতর আহত করার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।’
রিজভী আরো বলেণ, ‘এছাড়াও বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কটুক্তির প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিএনপি’র প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। হামলায় নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন এবং বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।’