তার নাম আনোয়ার হোসেন খোকন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। সেই সঙ্গে বলে বেড়ান তিনিই নাকি যুক্তরাষ্ট্রসহ বহির্বিশ্ব বিএনপির মা-বাপ। ইতোমধ্যেই তিনি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কবর রচনা করেন। খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে দুর্বল করেন। মূল বিএনপির কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে বাধ্য করেন। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করে কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না? তাহলে যারা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে বিএনপি করেছেন, তাদের অবস্থা কী? ক্ষোভের কারণে বিএনপির অনেক পরীক্ষিত নেতাকর্মী দলীয় কর্মসূচিতে নেই। তারপরও তিনি থেমে নেই। সব সময় তার অযাচিত হস্তক্ষেপ। এবারো তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনকে কেন্দ্র করে গত ২০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক আসেন। তাকে স্বাগত জানাতে জেএফকে এয়ারপোর্টে পঙ্গপালের মতো নেতাকর্মীরা ছুটে যায়। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, খোকনের অশীর্বাদ ছাড়া দল করা যাবে না! খোকনের হাতের পরশ পেতে কেন্দ্রীয় নেতা থেকে পাতিনেতা পর্যন্ত ছুটে গিয়েছেন এয়ারপোর্টে। বিএনপির অনেক বড় নেতার কপালেও এমন অভ্যর্থনা মেলে না।
আনোয়ার হোসেন খোকন তো যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি খেয়েই ক্ষান্ত হননি। তার কারণেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে অপদস্ত হতে হয়েছে জেএফকে আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে। জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের গায়ে ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছে, এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারাকে শুনতে হয়েছে অকথ্য গালিগালাজ। অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির আবু তাহেরকে তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা সুন্দরভাবে স্বাগত জানিয়ে গাড়িতে তুলে দেয়। এ ঘটনাটি ঘটে গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকালে। প্রধান উপদেষ্টা ডা. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক আসেন। তিনি বিশেষ পথে চলে গেলেও সমস্যায় পড়েন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আখতার হোসেন ও তাসনিম জারা।
জেএফকে এয়ারপোর্টে আগে থেকেই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী। আনোয়ার হোসেন খোকনের নেতৃত্বে বিএনপি টার্মিনাল এইটে স্লোগান দিচ্ছিল। ঠিক সে সময় টার্মিনাল ফোর দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, হুমায়ুন কবীর, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ আবু তাহের, আখতার হোসেন, তাসনিম জারা বের হচ্ছিলেন। আগে থেকেই টার্মিনাল ফোরে অবস্থান নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। কী কারণে আনোয়ার হোসেন খোকন নেতাকর্মীদের নিয়ে টার্মিনাল এইটে অবস্থান করছিলেন, তা কারো বোধগম্য নয়। তারা নাকি মহাসচিবকে স্বাগত জানাতে গিয়েছিল। মহাসচিব নামবেন টার্মিনাল ফোরে, তারা কেন টার্মিনাল এইটে? জামায়াতে ইসলামির লোকজন তো টার্মিনাল ফোরেই অবস্থান করছিলেন। আবার আওয়ামী লীগের একটি অংশও টার্মিনাল ফোরে। তাহলে বিএনপি কেন টার্মিনাল এইটে? এটা কি আনোয়ার হোসেন খোকনের কোনো কূটচাল! টার্মিনাল এইটে সবাই খোকনের পদলেহনে ব্যস্ত। খোকনের নির্দেশ অমান্য করার সৎসাহস কারো নেই। যে কারণে সবাই খোকন বন্দনায় ব্যস্ত টার্মিনাল এইটে। যথাসময়েই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, হুমায়ুন কবীর, আখতার হোসেন, তাসনিম জারা ও সৈয়দ আবদুল্লাহ আবু তাহের বের হলেন। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা সৈয়দ আবদুল্লাহ আবু তাহেরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, হুমায়ুন কবীর, আখতার হোসেন, তাসনিম জারাকে অভ্যর্থনা দেওয়ার নাম করে এয়ারপোর্টে গেলেও খোকনের চক্রান্তে কেউই টার্মিনাল ফোরে যাননি। বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী এয়ারপোর্টে গেলেও তাদের বিশেষ চালে আটকে রাখা হয় টার্মিনাল এইটে। টার্মিনাল ফোরে ছিলেন বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের দুজন লোক। তাদের সঙ্গেই বের হন তারা। আর যা হওয়ার তা-ই হলো-অপদস্ত হলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, হুমায়ুন কবীর চারিদিকে দলীয় নেতাকর্মী খোঁজার চেষ্টা করলেও কাউকে পাননি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আখতার হোসেনকে রাজাকার, রাজাকার বলে স্লোগান দিতে থাকে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তাসনিম জারাও রক্ষা পাননি, তাকে অকথ্য গাল দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের এক নেতা আখতার হোসেনকে পেছন থেকে ডিম মারেন। যা তার পিঠে গিয়ে লাগে। একপর্যায়ে তারা কোনোভাবে গাড়িতে ওঠে। গাড়ির সামনে আওয়ামী লীগর দুই পাতিনেতা শুয়ে পড়ে। এয়ারপোর্ট পুলিশ থাকলেও তা তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, তারা চেষ্টা করছিলেন। একপর্যায়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদ সেখানে উপস্থিত হন। তিনি পুলিশের সহযোগিতায় রাস্তা ক্লিয়ার করেন এবং পরে তাদের গাড়ি চলে যায়।
এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির অনেক নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, আনোয়ার হোসেন খোকনের কারণেই আমরা আমাদের নেতার সম্মান রক্ষা করতে পারিনি। আনোয়ার হোসেন খোকন আমাদের টার্মিটাল এইটে আটকে রেখেছে। আনোয়ার হোসেন খোকন না থাকলে আমরা টার্মিনাল ফোরেও থাকতাম। মূলত তার সিদ্ধান্তের কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অপদস্ত হতে হলো, গালি খেতে হলো। এই লজ্জা রাখি কোথায়? অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, এ সময় আনোয়ার হোসেন খোকন কেন নিউইয়র্কে অবস্থান করছে? এখানে তার কাজ কী? বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির চারজন সদস্য রয়েছেন। যখন আনোয়ার হোসেন খোকন ছিল না, তখন কী আন্দোলন হয়নি? কেউ কেউ বলেছেন, আনোয়ার হোসেন খোকন কী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অপদস্ত করার মিশন নিয়ে এসেছেন? আবার কেউ কেউ বলেছেন, স্টেট এবং মহানগরের কমিটির পাশাপাশি আজকে যদি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির শক্তিশালী কমিটি থাকতো, তাহলে এই লজ্জার দৃশ্য অবলোকন করতে হতো না। কথায় বলে না অতি চালাকের মার্গে দড়ি। আসলে আনোয়ার হোসেন খোকন নিজেকে অতি চালাক মনে করে। সে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নয়ছয় বুঝিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে হজম করে ফেলেছে, এখন টার্গেট করেছে বিএনপি। তার মতো অযোগ্য, ক্ষমতালোভী লোক দলে থাকলে আজ হোক কাল হোক সে দলের বারোটা বাজবেই। এখনো সময় আছে আনোয়ার হোসেন খোকনের হাত থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে রক্ষা করুন। তা না হলে ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
অন্যদিকে গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতৃবৃন্দ। আনোয়ার হোসেন খোকনের নেতৃত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজার কনফারেন্স রুমে। বৈঠকের বিষয়বস্তু ছিল জেএফকে এয়ারপোর্টে কোন নামে ব্যানার ব্যবহার করা হবে। এখন পর্যন্ত আনোয়ার হোসেন খোকন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নামে কোনো ব্যানার ব্যবহার করা যাবে না, করলে সাবেক যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ব্যবহার করা যাবে। এ নিয়ে তার সঙ্গে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। কেউ কেউ হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। শেষ পর্যন্ত অনেকেই বৈঠক থেকে চলে যান আনোয়ার হোসেন খোকনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।