০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৩৯:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


দেশকে মোশাররফ করিম
প্রশংসা ভালো লাগে, কিন্তু উপাধিতে অস্বস্তি হয়
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১০-২০২৫
প্রশংসা ভালো লাগে, কিন্তু উপাধিতে অস্বস্তি হয় মোশাররফ করিম


জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম শুধু অভিনয়ের জন্যই নয়, নিজের সরল ও স্পষ্টভাষী মানসিকতার জন্যও প্রশংসিত। দর্শকরা ভালোবেসে তাঁর নামের আগে নানা উপাধি জুড়ে দিলেও, তাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না তিনি। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইনসাফ’ সিনেমা, অভিনয়ের প্রতি তাঁর টান, ক্লান্তি, ও পেশাদার জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির 

প্রশ্ন: ইদানীং অনেকেই আপনার নামের আগে ‘কিংবদন্তি’ শব্দটি জুড়ে দেন। এ নিয়ে আপনার মতামত কী?

মোশাররফ করিম: আমি একটা কাজ করলাম, দেখার পর সবাই যদি ভালো লাগার কথা বলেন, সেটাই আমার জন্য অনেক। বেশি প্রশংসা করে পদবি বা খেতাব দিয়ে দেওয়াটা আমার কাছে অতটা জরুরি মনে হয় না। এটা আমাকে অস্বস্তি দেয়। আমার নামের সঙ্গে নানা কিছু জুড়ে দেওয়া হয়, আমি তো লাগাই না, অন্যরা জুড়ে দেন। এর কোনো প্রয়োজন নেই। অভিনয়টা হচ্ছে কি না, কারও কাছে ভালো লাগছে কি না- এটাই বড় বিষয়।

প্রশ্ন: ‘ইনসাফ’ সিনেমার নির্মাতা তো আপনার নামের আগে ‘কিংবদন্তি’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। আপনি কি বিষয়টি জানতেন?

মোশাররফ করিম: হ্যাঁ, আমি জানি। তবে এটা আমার পছন্দ ছিল না। সেটা আমি সরাসরি বলিনি তখন, কিন্তু সত্যি বলতে এ ধরনের খেতাব আমার অস্বস্তির কারণ হয়। আমি চাই না আমার কাজকে নিয়ে বাড়তি কোনো শব্দ জুড়ে দেওয়া হোক। মানুষ যদি আমার কাজ দেখে মুগ্ধ হয়, প্রশংসা করে-সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি। একজন অভিনেতা হিসেবে আমি সব সময় চাই, আমার চরিত্রের ভেতর দিয়ে মানুষ কিছু অনুভব করুক, সংযোগ তৈরি করুক। ‘কিংবদন্তি’ শব্দটা এমন এক ধরনের দূরত্ব তৈরি করে দেয়, যেখানে আমি নিজেকে আর সাধারণ মানুষের মাঝে রাখতে পারি না।

প্রশ্ন: ‘ইনসাফ’ সিনেমায় আপনার চরিত্র ও অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

মোশাররফ করিম: এতে আমি এক প্রতিবাদী চিকিৎসকের চরিত্রে অভিনয় করেছি। এই সিনেমায় প্রথমবার পর্দায় অ্যাকশন করতে দেখা গেছে আমাকে। এটা একদম নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। সন্তুষ্টির জায়গা আছে, কিন্তু খুব খুলে অভিনয় করার সুযোগ ছিল না। আমার মনে হয়েছে মারামারির অংশটা আমি খুব ভালো করতে পারিনি, তবে চেষ্টা করেছি। সেই সময় আমার পায়ে একটা অপারেশন হয়েছিল। তবুও এমন দৃশ্যে অভিনয় করেছি। আসলে আমি কখনো এমন অ্যাকশন দৃশ্য করিনি। তবে ফাইট ডিরেক্টররা খুব আন্তরিক ছিলেন, তারা আমাকে ধাপে ধাপে গাইড করেছেন। আমি চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব বাস্তবধর্মী করে তুলতে। সিনেমাটি দেখে দর্শক যদি সংযোগ অনুভব করেন, সেটাই বড় কথা।

প্রশ্ন: নাটক, ওটিটি ও সিনেমা- সব মাধ্যমেই তো আপনি নিয়মিত কাজ করছেন। ক্লান্তি অনুভব করেন না?

মোশাররফ করিম: হ্যাঁ, অনেক সময় টানা কাজ করার পর মনে হয়, আর ভালো লাগছে না। তখন ভাবি অভিনয় ছেড়ে দেব, আর করব না। বড় একটা বিরতি নেব। কিন্তু দেখা যায়, ১৫-২০ দিন কাজ না করলে বিষণ্ন লাগে। কোথাও ঘুরতে গিয়েও ভালো লাগে না। কিন্তু যখন অভিনয়ে ফিরে আসি, নাটক নিয়ে আলোচনা করি, রিহার্সেল করি, অভিনয়টা ভালোভাবে করার চেষ্টা করি- এই বিষয়গুলোই আমাকে রিলিফ দেয়, বিষণ্নতা কেটে যায়। মনে হয়, আমি আবার বেঁচে উঠলাম। অভিনয়ের মধ্যে একটা জীবনের ছোঁয়া আছে, একটা গভীর আবেগ আছে- যেটা আমাকে বারবার টেনে আনে।

প্রশ্ন: আপনি বরাবরই বাস্তবধর্মী চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করেছেন। চরিত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনার মানদণ্ড কী?

মোশাররফ করিম: আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চরিত্রটি কতটা জীবন্ত এবং মানবিক। আমি এমন চরিত্রে কাজ করতে চাই, যেটা দর্শকের নিজের জীবনের সঙ্গে মিলে যায়। একজন দর্শক যদি আমাকে পর্দায় দেখে বলে, ‘এই লোকটা তো আমার মতোই’, তাহলে আমি সফল। স্ক্রিপ্ট পড়ার সময় আমি দেখি, চরিত্রের ভেতরে কতটা স্তর আছে, তার ভেতরে দ্বন্দ্ব আছে কি না, অনুভব আছে কি না। শুধু মুখস্থ ডায়লগ বলে গেলেই অভিনয় হয় না। একটা চরিত্রের চাহিদা বুঝে নিজের ভেতর থেকে তাকে বের করে আনতে হয়। আর আমি সবসময় চেষ্টা করি যেন অভিনয়টা ‘অ্যাক্টিং’ না লাগে- প্রকৃত মনে হয়।

প্রশ্ন: তরুণ অভিনয়শিল্পীদের জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে?

মোশাররফ করিম: আমি সবসময় বলি, অভিনয় শিখতে হয়, অনুশীলন করতে হয়, এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ধৈর্য রাখা। অনেকেই খুব দ্রুত সাফল্য পেতে চায়, কিন্তু অভিনয় এমন একটা জায়গা, যেখানে সময় দিতে হয়, শেখার মনোভাব থাকতে হয়। শুধু জনপ্রিয়তা নয়, নিজেকে একজন শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে মেলে ধরতে হলে নিজের ভেতর একটা গভীরতা লাগবে, যা সময়ের সঙ্গে তৈরি হয়। আর সবসময় মানুষের পর্যবেক্ষণ করুন। মানুষের অভিব্যক্তি, কথা বলার ধরন, হাসি-কান্না-এসবই একজন অভিনেতার শ্রেষ্ঠ পাঠশালা।

শেয়ার করুন