০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:২৬:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


চীনের ২০টি ‘জে-১০সি’ যুদ্ধবিমান কিনতে চায় বাংলাদেশ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১০-২০২৫
চীনের ২০টি ‘জে-১০সি’ যুদ্ধবিমান কিনতে চায় বাংলাদেশ


বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়ন ও জাতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার চিন্তা বহু দিনের। কিন্তু সামর্থে কুলিয়ে ওঠা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। এর আগেও ফ্রান্সের রাফায়েলসহ বিভিন্ন স্থানে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। অবশেষে আবারও সরব বাংলাদেশ। এবং আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে ২০২৭ সালের মধ্যে চীনের তৈরি ২০টি ‘জে-১০সি’ যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এতে খরচ হবে প্রায় ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা)। এই চুক্তিতে বিমান কেনা ছাড়াও প্রশিক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

সরকারি নথি পর্যালোচনা করে সংবাদমাধ্যম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এক প্রতিবেদনে বলেছে, এই ক্রয় ২০২৫-২৬ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরের মধ্যে সরাসরি সরকারের সঙ্গে সরকারের (জিটুজি) চুক্তির ভিত্তিতে সম্পন্ন হতে পারে। পরিশোধের অর্থ ১০ অর্থবছরে, অর্থাৎ ২০৩৫-৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে।

চীনের সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস এবং প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংবাদ ও বিশ্লেষণভিত্তিক ওয়েবসাইট দ্য ওয়্যার জোনের তথ্য অনুযায়ী, চীনের তৈরি ‘জে-১০সি’ যুদ্ধবিমান ‘ভিগোরাস ড্রাগন’ নামেও পরিচিত। এটি মাল্টিরোল কমবেট এয়ারক্র্যাফট (এমআরসিএ)। চতুর্থ প্রজন্মের এই যুদ্ধবিমানের বহুমাত্রিক অভিযানের সামর্থ্য রয়েছে।

সম্প্রতি এ যুদ্ধবিমান আলোচনায় আসে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সময়। পাকিস্তান তখন দাবি করেছিল যে, তারা চীনের তৈরি ‘জে-১০সি’ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতীয় ‘রাফাল’ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও ভারত সরকার তখন এ দাবি অস্বীকার করেছিল।

প্রধান উপদেষ্টার দফতর সূত্রের বরাতে জানানো হয়, প্রতিটি বিমানের প্রাথমিক মূল্য নির্ধারণ করেছে ৬০ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ পুরো বহরের জন্য খরচ হবে মোট ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার (১৪ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা)। প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও পরিবহন খাতে আরো ৮২০ মিলিয়ন ডলার (১০ হাজার কোটি ৮৬ লাখ টাকা) খরচ হবে। পাশাপাশি বীমা, ভ্যাট, এজেন্সি কমিশন, স্থাপনা নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে এর মোট ব্যয় দাঁড়াবে ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থ পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে ২০৩৫-৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে।

গত ২৬ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সফরে চীনে যান। এই সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস চীন সফরে মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। চীন এই প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

এরপর এপ্রিল মাসে সরকার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানকে প্রধান করে ১১ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে। এই কমিটিকে যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে আলোচনা ও চুক্তি চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টার দফতর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।

যুদ্ধবিমান ক্রয়ে কমিটির ভূমিকা

বিমান বাহিনী প্রধানের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি খসড়া চুক্তি পর্যালোচনা করবে এবং এ বিমানগুলো চীনা সরকার বা তাদের মনোনীত সংস্থা থেকে সরকার-টু-সরকার ভিত্তিতে কেনা উপযুক্ত কি না, তা মূল্যায়ন করবে। চুক্তিতে রক্ষণাবেক্ষণ, সংরক্ষণ ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়াও এই কমিটি চীনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে বিমানের চূড়ান্ত মূল্য, অর্থপ্রদানের শর্ত, খসড়া চুক্তি প্রস্তুতসহ স্বাক্ষরের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।

তবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এএনএম মুনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিমান বাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই নতুন যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা করে আসছে, তবে বিষয়টি এখনো মূল্যায়নের পর্যায়ে রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বে একধরনের নতুন ভূরাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হয়েছে, তাই কোনও দেশের কাছ থেকে যুদ্ধবিমান কেনার আগে ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা জরুরি। বিশেষ করে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে, সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। তবে আমাদের যুদ্ধবিমানের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না।’

এ সময় কেন ‘জে-১০’ সিরিজ গুরুত্বপূর্ণ

‘জে-১০’ সিরিজের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে চীনের বাইই অ্যারোবেটিক টিম। ২০০৯ সালে তাদের প্রদর্শনী বিমানের তালিকায় ‘জে-১০এ’ ও ‘জে-১০এস’ যুক্ত করে। এরপর ২০২৩ সালে এর উন্নত সংস্করণ ‘জে-১০সি’তে আপগ্রেড করে। এই বিমানটির সর্বোচ্চ গতি ২ দশমিক ২ মাক (শব্দের গতির ২.২ গুণ), যা ঘণ্টায় প্রায় ২ হাজার ৪১৫ কিলোমিটার। এটি ১,৮৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত কমব্যাট রেডিয়াসে (অভিযান সীমা) অপারেশন চালাতে পারে।

সুপারসনিক গতিতে উড্ডয়ন সক্ষম ‘জে-১০সি’ শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান শনাক্ত করতে অত্যন্ত দক্ষ। আকাশ থেকে আকাশে ও আকাশ থেকে ভূমিতে হামলার সক্ষমতা রয়েছে। এটি ২০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এটি অন্যান্য যুদ্ধবিমান এবং ড্রোনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে অভিযানে যুক্ত হতে পারে। যুদ্ধবিমানটি প্রযুক্তি, গতি এবং শত্রুর নজর এড়িয়ে আক্রমণ পরিচালনা এবং নজরদারিতে সক্ষম।

এদিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বর্তমান চিত্রে দেখা গেছে ওয়ারপাওয়ারবাংলাদেশ ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে এখন মোট ২১২টি বিমান রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি যুদ্ধবিমান। এই ৪৪টি যুদ্ধবিমানের মধ্যে ৩৬টিই চীনা তৈরি ‘এফ-৭’। এছাড়াও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে পুরোনো ও আধুনিক উভয় ধরণের হেলিকপ্টার রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মূল যুদ্ধবিমান এখনো পুরোনো ‘এফ-৭’, আর তুলনামূলক আধুনিক বহুমুখী রাশিয়ান ‘মিগ-২৯বি’-এর ৮টি বিমান। এছাড়া রাশিয়ান ‘ইয়াক-১৩০’ হালকা আক্রমণ বিমান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

শেয়ার করুন