৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:১৭:১০ অপরাহ্ন


বলেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ
এত্তো উন্নয়ন হলে দেশে গণঅভ্যুত্থানের প্রয়োজন হলো কেনো?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১১-২০২৪
এত্তো উন্নয়ন হলে দেশে গণঅভ্যুত্থানের প্রয়োজন হলো কেনো?


অধ্যাপক  আনু মুহাম্মদ বলেছেন,গত ১০ বছরের অনির্বাচিত সরকারের সময়কে বিভিন্ন মিডিয়া কিংবা ওয়ার্ল্ডব্যাংক, আইএমএফ-এর মতো সংস্থারা যেভাবে "অলৌকিক উন্নয়ন" এর সময় হিসেবে চিহ্নিত করেছিল তাতে তো গণঅভ্যুত্থান হওয়ার কথা ছিল না, তাহলে কেন দেশে গণঅভ্যুত্থানের প্রয়োজন হলো! কী ফাঁক ছিল সেই উন্নয়নে? গত ১০ বছরের সর্বজনকথা পড়লে সেই ফাঁকগুলো চেনা যাবে, এর পেছনের বিশ্লেষণ বোঝা যাবে। সর্বজনকথা-র এই বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনৈতিক লড়াইকে আরো শক্তিশালী করার জন্য তিনি লেখক, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের Symptoms ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের আহবান জানান।    

শুক্রবার বিকাল ৩:৩০টায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চতুর্থ তলার ৪০১ নং কক্ষে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ বিশ্লেষণমূলক জার্নাল সর্বজনকথার দশম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে লেখক-পাঠক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক আনু মুহাম্মদ, নির্বাহী সম্পাদক কল্লোল মোস্তফা, প্রকাশক মোশাহিদা সুলতানা, এবং সম্পাদনা পরিষদের সদস্য তানজীমুদ্দিন খান, সামিনা লুতফা, মাহা মির্জা, মাহতাবউদ্দিন খান।


সম্পাদক আনু মুহাম্মদ তার আলোচনায়  আরও
বলেন, টানা ১০ বছর ধরে সময়মতো এবং নিয়মিত সর্বজনকথা বের করা একটা বড় অর্জন, যা সম্ভব হয়েছে এর পেছনে কাজ করা একনিষ্ঠ কর্মীদল, লেখক, পাঠকসহ শুভানুধ্যায়ীদের সম্মিলিত অবদানে। তিনি বলেন, সর্বজনকথা শুধু একটি পত্রিকা নয়, বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থেই একটি সর্বজনের এবং সর্বপ্রাণের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একটি রাজনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তিক প্রয়াস।


 মতবিনিময় সভায় সর্বজনকথার ১০ বছরের লেখা ও কার্যক্রম নিয়ে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশান উপস্থাপন করা হয়। সর্বজনকথার ১০ বছরের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন সর্বজনকথা সম্পাদক আনু মুহাম্মদ। সর্বজনকথার লেখক পাঠক শুভানুধ্যায়ীগণ উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ গ্রহণ করে সর্বজনকথা সম্পর্কে তাদের মতামত, পরমার্শ, সমালোচনা ব্যক্ত করেন। শেষ পর্বে গান পরিবেশন করেন গায়ক মুসা কলিম মুকুল।

সভায় সর্বজনকথার লেখক-পাঠকদের মধ্যে থেকে মতামত দিয়েছেন-  ....লেখকদের মধ্যে নিজেদের স্মৃতি ও পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোঃ আনোয়ার হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা, ডাঃ হারুন অর রশিদ, নেসার আহমেদ, আলমগীর খান অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌসহ আরো অনেকে। এছাড়া পাঠক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বজনকথার গবেষণা কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সুজিত চৌধুরী, আবদুল্লাহ মাহফুজ অভি, নাফিসা নাওয়ার নিঝুম, ইশতিয়াক মাহমুদ শাওন, ওয়ালিদ আশরাফ, বিপাসহ আরো অনেকে  সর্বজন কথা নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন তুলে ধরেন।     


                                 
চলচ্চিত্র নির্মাতা মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, "আমাদের দেশে বাংলা ভাষায় চলচ্চিত্র নিয়ে লেখার পরিসর খুবই সীমিত। যা দুয়েকটা পত্রিকা আছে তাড়াও একটি নির্দিষ্ট ধারার লেখা ছাপা হয়। সর্বজনকথা-ই একমাত্র যারা চলচ্চিত্র নিয়ে আমার ভিন্নধারা লেখা ছাপতে আগ্রহী দেখিয়েছিল।"  আরেকজন লেখক ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা বলেন, "সর্বজনকথা-র বিষয়ভিত্তিক সূচিতে আমার লেখাটি "রাষ্ট্র" অংশে দেখে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। এ যাবৎ সবখানেই দেখেছি ধর্ষণ নিয়ে কোন লেখা হলেই সেটিকে শুধু নারীর বিষয় হিসেবে দেখা হয় কিন্তু সর্বজনকথা যে সেটি শুধু নারীর বিষয় হিসেবে না রেখে রাষ্ট্রের মতো বড় পরিসরে নিয়ে এসেছে এটি গুরুত্বপূর্ণ।" সর্বজনকথা-র গবেষণা কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী নাফিসা নাওয়ার নিঝুম বলেন, "মাগুরার মতো মফস্বল শহরের ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী হিসেবে গবেষণার প্রতি আগ্রহ থাকলেও নিয়মতান্ত্রিক ভাবে শেখার কোন সুযোগ ছিল না। সবর্জনকথার কর্মশালাটি অনলাইনে করতে পারব দেখে সাথে সাথেই এনরোল করি। প্রথমদিকে বেশ কঠিন লাগলেও নিজে নিজে প্রোপোজাল লেখার সময় অনেকটাই বুঝতে পারি। এরপর জানতে পারি যে তিনটি প্রোপোজাল সিলেক্ট হয়েছে এর মধ্যে আমারটাও আছে। আমাকে শেখার এই সুযোগ দেওয়ার জন্য সর্বজনকথা-র প্রতি কৃতজ্ঞতা।"             
মতামত সভায় উপস্থিত প্রায় সবাই মনে করেন যে কোন বিজ্ঞাপন ছাড়া এমন একটি বুদ্ধিবৃত্তিক পত্রিকা টানা ১০ বছর চালানো একটি কষ্টসাধ্য জার্নি যা সর্বজনকথা সফল ভাবেই পার করেছে। অনির্বাচিত সরকারের প্রায় নিষিদ্ধ এই সময়ে এরকম একটি রাজনৈতিক লড়াই খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এর পরিসর আরো বাড়ানো উচিৎ। এসময় ধরণ, ভাষা, প্রচার নিয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনা ও পরামর্শও উঠে আসে। সর্বজনকথা টিম মনে করে এই আলোচনা তাদের ভবিষ্যৎ পথচলাকে আরো শাণিত করবে। যেহেতু সর্বজনকথা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিকে পরিচালিত হয় তাই পাঠক, শুভানুধ্যায়ীদেরও তাদের নিজ নিজ দক্ষতা সর্বজনকথা-র জন্য কাজে লাগানোর আহবান জানান আয়োজকেরা। এছাড়া সর্বজনকথার পক্ষ থেকে নতুন লেখকদের তাদের সাথে যুক্ত হওয়ার আহবান জানানো হয়।

শেয়ার করুন