২০ মে ২০১২, সোমবার, ০৬:০০:৪০ পূর্বাহ্ন


পরমাণু অস্ত্রের হুমকি থেকে বিশ্বকে মুক্ত রাখার আহ্বান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৮-২০২২
পরমাণু অস্ত্রের হুমকি থেকে বিশ্বকে মুক্ত  রাখার আহ্বান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেন


“আমরা আশা করি পারমানবিক বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) এর দশম পর্যালোচনা সম্মেলন থেকে এমন সিদ্ধান্ত বের হয়ে আসবে যা বিশ্বকে পারমানবিক অস্ত্রের হুমকি থেকে মুক্ত করতে চুক্তিটির সার্র্বজনীনতা এবং বাস্তবায়নকে আরও সহজতর করবে” গত ১ আগস্ট জাতিসংঘ সদর দফতরের সাধারণ পরিষদ হলে অনুষ্ঠিত দশম এনপিটি পর্যালোচনা সম্মেলনে একথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, এমপি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ঐতিহাসিক প্রথম ভাষণে বিশ্বকে পারমানবিক যুদ্ধের কবল থেকে মুক্তির যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তা উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, “এই আহ্বানকে ভিত্তি করেই পারমাণবিক অস্ত্রের সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পূর্ণ এবং অটল প্রতিশ্রæতির ভিত্তি তৈরি হয়েছে যা আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও বটে”।

মানবতার নিরাপত্তাকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে মুষ্টিমেয় কয়েকটি রাষ্ট্র স্থায়ীভাবে যে পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ রেখেছে তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ড. মোমেন এনপিটি এর তিনটি স্তম্ভ-পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, এর বিস্তার রোধ এবং পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যকর বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। এক্ষেত্রে, তিনি চুক্তির ধারা-৪ এর বৈষম্যহীন বাস্তবায়নের উপর জোর দেন, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্বাস্থ্যসেবা এবং কৃষিসহ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তির বিকাশ, গবেষণা, উৎপাদন এবং ব্যবহার করার জন্য সকল রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পারমাণবিক প্রযুক্তির গবেষণায় বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং মানবজাতির স্বার্থে এর শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের সম্ভাবনা অন্বেষণের আহ্বান জানান।

কোভিড অতিমারির মধ্যেও পারমাণবিক অস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০২১ সালে ৮২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি রাষ্ট্রগুলিকে ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক অস্ত্রে অর্থহীন বিনিয়োগ বন্ধ করে স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, এসডিজি, শান্তি এবং স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য ব্যয় করার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ ১৯৭৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এনপিটি-তে যোগদান করে। এছাড়া ২০১৯ সালে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি (টিপিএনডবিøউ) অনুমোদনকারী প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে বৈঠক:

এনপিটি রিভিউ কনফারেন্স যোগদানের পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিব এর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বৈঠকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সংক্রান্ত আলোচনাকালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা পূনর্ব্যক্ত করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। আরও বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী নিয়োগ প্রদানের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব জানান যে অচিরেই আফ্রিকার বিভিন্ন শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশ থেকে আরও শান্তিরক্ষী ও অস্ত্র সরঞ্জাম নেওয়া হবে।

এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ  সদরদপ্তরের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক উচ্চ পদে আরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশী কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য মহাসচিবের নিকট অনুরোধ জানান। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান এবং অব্যাহতভাবে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কৃতজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন জাতিসংঘ মহাসচিব। ইউক্রেন যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গঠিত গেøাবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপে যোগ দিতে সম্মত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক:

জাতিসংঘ মহাসচিব ছাড়াও  এনপিটি কনফারেন্সে যোগদান উপলক্ষে জাতিসংঘে আগত বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ¯েøাভেনিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী তানজা ফাজন, হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজিজারতো, আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী সান্তিয়াগোক্যাফিরো। এসকল বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।


শেয়ার করুন