প্রবাসে বাংলাদেশিদের মাদার সংগঠন হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনী পালে হাওয়া লেগেছে। বাংলাদেশ সোসাইটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী অক্টোবর মাসে নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরি কমিটির সভায় অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনিকে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সোসাইটির বর্তমান কার্যকরি কমিটি বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছেন। প্রথম সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয় জ্যাকজন হাইটস থেকে। গত ১২ এবং ১৩ মে বিকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন রেস্টুরেন্টের সামনে চেয়ার টেবিল সাজিয়ে সদস্য সংগ্রহ করা হয়। সদস্য সংগ্রহ অভিযানের প্রথম দিনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুর রব মিয়া, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সাবেক সভাপতি এম আজিজ, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ওয়াসি চৌধুরী, বারী হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট ও রংপুর সমিতির সভাপতি আসেফ বারী টুটুল, বাংলাদেশ সোসাইটির সহ-সভাপতি ফারুক চৌধুরী, সহ-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ নওশাদ হোসেন, বাংলাদেশ সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম ভূইয়া, বাংলাদেশ সোসাইটির প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরি সদস্য সাদী মিন্টু, আকতার হামিদ, চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাকসুদুল হক চৌধুরী, রূপসী চাঁদপৃুর ফাউন্ডেশনের সাবেক সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন রাজু প্রমুখ।
বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া জানান, আগামী অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন এবং ৩০ জনের মধ্যে সদস্য নিবন্ধনের শেষ সময়। যে কারণে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাসকারী এলাকাগুলোতে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছি। প্রথমে জ্যাকসন হাইটস, ওজনপার্কে মতিন রেস্টুরেন্টের সামনে ১৮ মে, জ্যামাইকায় স্টার কাবাবের সামনে ১৯ মে, ব্রঙ্কসে নীরব রেস্টুরেন্টের সামনে ২৭ মে, ব্রুকলিনে রাঁধুনী রেস্টুরেন্টের সামনে ২ জুন। প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। কোষাধ্যক্ষ নওশাদ হোসেন জানিয়েছেন, তারা সদস্য অভিযানে সাড়া পাচ্ছেন। মানুষ নিজ উদ্যোগেই এবার সোসাইটির সদস্য হচ্ছেন।
এদিকে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্যানেল গঠন এবং প্রার্থী বাছাইর কার্যক্রম চলছে। বর্তমান যে কমিটি রয়েছেন। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক গঠনতান্ত্রিক নিয়মের কারণে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে পারছেন না। তিনি অন্য পদে নির্বাচন করতে পারেন। বর্তমান সভাপতি আব্দুর রব মিয়া আবারো সভাপতি পদে প্রার্থী হতে পারেন। যদিও তিনি নানা কারণে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন না। কমিউনিটির স্বার্থে এবং সবার সহযোগিতায় তিনি আবারও সভাপতি পদে নির্বাচন করতে পারেন। সভাপতি প্রার্থী আরো যার নাম শোনা যাচ্ছে তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিম। শেষ পর্যন্ত সভাপতি পদে আরো চমক থাকতে পারে। সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে হিসাবনিকাশ চলছে। কোন প্যানেলে কে সাধারণ সম্পাদক হবেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী এবং তরুণ ব্যবসায়ী নাঈম টুটুল। নতুন কয়েকজন ব্যবসায়ীর নামও শোনা যাচ্ছে। অনেকেই বলেছেন, এখনো সময় আছে, জুন মাসের শেষ সপ্তাহে চূড়ান্ত খেলা শুরু হবে। কারণ যারা প্রার্থী হবেন তারা অবশ্যই প্রত্যাশা অনুযায়ী ভোটার জমা দেবেন। গত কয়েক বছর ধরেই এই নিয়মেই বাংলাদেশ সোসাইটির ভোটার করা হচ্ছে। যারা নির্বাচনী প্যানেল গঠন করেন সেসব কারিগরই প্রার্থীদের চয়েজ দিয়ে থাকেন এবং বলে দেন কী পরিমাণ সদস্য করতে হবে। যদি সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী যারা হবেন তারাই বেশির ভাগ ভোটার করে থাকেন। তবে গত আলোচিত নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে নিজের গাঁটের অর্থ খরচ করে বেশি ভোটার বানিয়ে কোনো লাভ নেই। যদিও এটা শুধু গত নির্বাচনেই ঘটেছে। সাধারণত দেখা যায়, যারা বেশি ভোট বানান বা জমা দেন তারাই চূড়ান্ত বিবেচনায় জয় লাভ করেন। কিন্তু গত নির্বাচনে সেটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যারা বেশি ভোটার বানিয়েছিলেন তাদের ধারণা ছিল তারা অবশ্যই জয়লাভ করবেন। তাদের মনের এবং শরীরের ভাষায় বলে দিচ্ছিলো তারা ওভার কনফিডেন্ট ছিলেন। জয় তাদের নিশ্চিত। কিন্তু ভোট বলে কথা, যোগ্য প্রার্থী বলে কথা। শেষ পর্যন্ত যোগ্য প্যানেলই বা প্রার্থীরাই জয়লাভ করেছেন। এটা অবশ্য এবার শিক্ষনীয় হতে পারে। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এবার বাংলাদেশ সোসাইটির সদস্যসংখ্যা বেশি না-ও হতে পারে। গত টার্মে যেভাবে প্রায় ২৭ হাজারের বেশি ভোটার করা হয়েছিল এবার তা কোনোভাবেই হবে না। তবে এটা নিশ্চিত নির্বাচনে দুটি প্যানেল হচ্ছে এবং প্রার্থিতায় নতুন চমকও অপেক্ষা করছে কমিউনিটির জন্য। ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসবে, চমকও লোকজন দেখতে পারবে।