০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:১৯:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকট বাড়ছে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১০-২০২২
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকট বাড়ছে


বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নানা কারণে যখন টালমাটাল, তখন বাংলদেশের বাণিজ্য ঘাটতি অর্থনীতিবিদদের গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমছে। ডলার সংকটে বিশ্ব অগ্নিমূল্যের বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জ্বালানির সংকটে ভুগছে শিল্পখাত। বিশেষ করে রফতানিমুখী শিল্পগুলো সংকটে থাকায় রফতানি বাণিজ্যে সংকট দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়ার স্বভাবনা দৃশ্যমান।

শিল্পের কাঁচামাল বা ক্যাপিটাল যন্ত্রপাতি আমদানি বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিক কারণেই রফতানি বৃদ্ধির কথা। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। আমদানি বাড়লেও সেই মাত্রায় রফতানি বাড়ছে না। কারণ হিসাবে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে বলে অনেকেই মনে করছেন। অনেকের ধারণা আমদানি রফতানি উভয় ক্ষেত্রেই অর্থ পাচার হচ্ছে সিন্ডিকেট যোগাযোগে।




অর্থনীতিবিদরা নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেও ঘাটতির মূল কারণ নিরূপণ করতে গোলকধাঁধায় পড়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের আমদানি খরচের বিরাট অংশ খরচ হয় জ্বালানি, ভোগ্য এবং বিলাসী পণ্য আমদানিতে। জ্বালানির একটি অংশ ব্যবহার করা হয় ভোগে। বাংলাদেশের মতো স্বল্পআয়ের দেশে সরকারি কর্মকর্তারা বিলাসী যানবাহন ব্যবহার করেন, বিপুল পরিমাণ তরল জ্বালানি ব্যবহার করা হয় যানবাহনের জ্বালানি আমদানিতে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহানগরের যান জোটের কারণে জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার শুধু জ্বালানির অপচয় বাড়ানো, বা মূল্যবান শ্রমঘণ্টা নষ্ট করে না। একইসঙ্গে পরিবেশদূষণেও বিশাল ভূমিকা রাখে।




সবাই বলে মহানগরগুলোতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সংখ্যা বাড়িয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমানো উচিত। মানুষকে অযান্ত্রিক যান ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা উচিত। সরকার সরকারি কর্মচারীদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সেই ক্ষেত্রেই কীভাবে জ্বালানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করবে? অর্থনৈতিক সংকট থাকলেও দেশে পাঁচ তারকা হোটেলের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে বিলাসীপণ্য বা ভোগ্যপণ্যের সব কিছুই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু সেই মাত্রায় পর্যটনখাতে বিদেশি মুদ্রা যায় কিন্তু বাড়ছে না।




অনেকে বলেন আমদানিতে নানাভাবে নানা কৌশলে মুদ্রাপাচার হচ্ছে। বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পের ব্যাপক প্রসার আর ম্যান উন্নয়ন হলেও বাজারে কিন্তু ভারতীয় পোশাক-আশাকে সয়লাব। জনগণকে দেশীয় বস্ত্র অধিকহারে ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকার একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শিল্পখাতের যন্ত্রপাতি আর জ্বালানি আমদানিতে খরচ হচ্ছে ৫৭ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা। ভোগ্যপণ্য ১২ শতাংশ, জ্বালানি ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য  খাতে ১৮ শতাংশ। শিল্পের ক্ষেত্রে এই বিপুল ব্যয় কিন্তু রফতানি বাণিজ্যে আয় বৃদ্ধি করার কথা। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। গত ৬ বছরে ঘাটতি বেড়ে এখন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। দেশে বিদ্যমান জ্বালানি সংকটের কারণে শিল্পগুলো কিন্তু মহাসংকটে। ভুল কৌশল, বাস্তবায়নে অদক্ষতা আর সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দেশীয় জ্বালানি আহরণ আর উত্তোলন চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে পারেনি।




মূল্যবান কয়লাসম্পদ মাটির নিচে, জলে-স্থলে গ্যাস অনুসন্ধানে গতি সীমিত। করোনা আর যুদ্ধ বিশ্ববাজারে জ্বালানি মূল্যে আগুন ধরেছে। বাংলাদেশের জ্বালানিখাত ক্রমাগত আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ বাড়ছে। সরকার প্রধান উপায় না থেকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি স্থগিত করেছেন। ডলার সংকটে বিকল্প তরল জ্বালানি আমদানি করাও সংকটে। শিল্পগুলো না পারছে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারছে গ্যাসনির্ভর টেক্সটাইলে খাতসহ অন্যান্য খাতের উৎপাদন ধারা বজায় রাখতে। এমতাবস্থায় বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডারগুলো যথাসময়ে পূরণ করা সম্ভব না হলে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। একবার বড় বড় ক্রেতা ফিরে গেলে সংকটে পর্বে বৈদেশিক বাণিজ্য।




পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৯২৫ কোটি ডলার। আমদানি হয়েছে ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৩২৫ কোটি ডলার। ঘাটতি ৬৭.৫২ শতাংশ, অর্থাৎ ১০০ ডলার মূল্যের আমদানি হলে রফতানি হয়েছে মাত্র ৩২ ডলার। আমদানি রফতানির এই বিপুল ভারসাম্যহীনতা কোনোভাবেই বাংলাদেশকে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নতির পথে নিয়ে যাবে না। দেখতে হবে কীভাবে আমদানি খাতের জালিয়াতি রোধ করা যায়। আরো দেখতে হবে রফতানি আয়ের পুরোটা দেশে আসছে কিনা? সেই সঙ্গে দেশীয় জ্বালানি আহরণ আর উন্নয়ন করে দেশীয় জ্বালানির অবদান বাড়াতে হবে বহুগুণ। বাহুল্য খরচ পরিহার, ভোগ্যপণ্য আমদানি সীমিত করতে হবে।



মনে রাখতে হবে ২০২৫ থেকে মেগা প্রকল্পগুলোর সুদসহ ঋণ পরিশোধ শুরু হবে। করোনার অভিঘাতে এমনিতেই অনেক প্রান্তিক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। ‘নুন আন্তে পান্তা’ ফুরানো মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক সংঘাত অস্থিরতা বাড়লে নেতিবাজক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। আমদানি রফতানি ঘাটতি নিরসনে যা কিছু করার দ্রুত করা এখন অত্যাবশ্যক।

শেয়ার করুন