০৩ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:৩৫:৩৫ অপরাহ্ন


পুলকের মৃত্যু রহস্য এখনো খোলেনি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১১-২০২২
পুলকের মৃত্যু রহস্য এখনো খোলেনি বাবা-মায়ের সাথে সাদমান রহমান পুলক


এই পৃথিবীতে বাবার কাঁধে সবচেয়ে ভারী বস্তু হচ্ছে সন্তানের লাশ। এই কেমন কথা বাবা-মাকে রেখেই সন্তান চলে যাবে। মৃত্যুর ওপর মানুষের হাত নেই। প্রতিটি মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী ছেড়ে সবাইকে চলে যেতে হবে। কিন্তু অনেক মৃত্যু আছে, যা সহজে মেনে নেয়া যায়। আমেরিকার মতো উন্নত বিশ্বে বাবা-মায়েদের একমাত্র স্বপ্ন থাকে সন্তানের উন্নত জীবন। এর জন্য যে কোনো বাবা-মা যে কোনো ত্যাগ শিকার করতেও রাজি। করেও যাচ্ছেন। অনেক বাবা-মা আছেন, যারা অনেক অর্থ-বিত্তের মালিক, তারপরও সন্তানের কথা চিন্তা করে তারা আমেরিকায় থাকেন এবং কঠোর পরিশ্রম করেন। কিন্তু তাদের সব কষ্টই বৃথা হয় যখন কলিজার টুকরো সন্তান তাদের ছেড়ে চলে যান। যে কারণে প্রতিটি অভিভাবকের উচিত সন্তানের খোঁজখবর নেয়া এবং তাদের আরো বেশি সময় দেয়া। অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, অর্থের পেছনে না দৌড়ে সন্তানের পেছনে দৌড়ানোর। ছোটবেলা থেকেই যদি সন্তানকে সঠিক পথে রাখা না যায়, শেষ সময়ে এসে তাদের আর ফেরানো সম্ভব নয়। তরুণ সন্তানকে হারানোর বেদনা কোনো অভিভাবকের পক্ষেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তাদের হৃদয়ের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে যায়।

কমিউনিটির অত্যন্ত পরিচিত মুখ শিল্পী হাফিজুর রহমানের বড় ছেলে সাদমান রহমান পুলক (২৮) আর নেই (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। জানা গেছে, গত রোববার বিকেলে সাদমান রহমান পুলকের লাশ পুলিশ তার জ্যামাইকাস্থ বাসা থেকে উদ্ধার করে এবং অচেতন অবস্থায় তার বান্ধবীকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শিল্পী হাফিজুর রহমান একসময় পরিবার-পরিজন নিয়ে নিউইয়র্কে থাকতেন। কয়েক বছর আগে তিনি বাফেলোতে বাড়ি ক্রয় করে সেখানে চলে যান। কিন্তু পুলকে সেখানে স্থায়ীভাবে নিতে পারেননি। অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু কিছুদিন বাফেলো থাকার পর পুলক নিউইয়র্কে চলে আসেন এবং জ্যামাইকার ১৭৯ স্ট্রিটের একটি অ্যাপটমেন্ট বিল্ডিংয়ের ৬তলায় ভাড়া থাকতেন। মৃত্যুর দুদিন আগে থেকেই পুলকের বাবা-মা তাকে ফোন করছেন, তার বন্ধুরাও ফোন করছেন কিন্তু সব সময়ই তার ফোন বন্ধ পাচ্ছেন। যে কারণে বাবা-মার মনের মধ্যে এক ধরনের ভয় ঢুকে যায়। একটি সূত্র জানায়, যে অ্যাপার্টমেন্টে পুলক থাকতেন, সেই অ্যাপার্টমেন্টের চাবি ছিলো তার কয়েকজন বন্ধুর কাছে। দুদিন ধরে ফোনে না পেয়ে পুলকের বন্ধুর কেউ একজন সেই অ্যাপার্টমেন্টে যান এবং পরিস্থিতি দেখে সাথে সাথেই ৯১১ কল করেন। কল করার সাথে পুলিশ এবং অ্যাম্বুলেন্স আসে। পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকতেই দেখতে পায় সাদমান রহমান পুলক পড়ে রয়েছে। পরে পরীক্ষা করে জানানো হয় তার মৃত্যু হয়েছে। অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় তার বান্ধবীকে। সাথে সাথেই বন্ধবীকে স্থানীয় হাসাপতালে নেয়া হয়। সেই হাসপাতালেই তাকে জিজ্ঞাবাদ করা হয় এবং ছেড়ে দেয়া হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ এখনো সাদমানের মৃত্যুর কারণ জানায়নি। অন্যদিকে সাদমানের মৃত্যু নিয়ে কমিউনিটি নানা ধরনের কথাবার্তা চলছে। তবে এটি পরিষ্কার হবে মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়ার পর। রিপোর্ট না পাওয়ায় সাদমানের মৃত্যুর রহস্য এখনো উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। এই মৃত্যু নিয়ে এখনো রহস্য রয়েছে। রয়েছে নানা প্রশ্ন।

এদিকে ছেলের মৃত্যুর খরব পেয়ে বাফেলো থেকে ছুটে আসেন শিল্পী হাফিজুর রহমান, তার স্ত্রী এবং আত্মীয়স্বজন। তারা প্রথমে চেষ্টা করেছিলেন বিমান আসতে কিন্তু বিমানের কোনো টিকেট না পেয়ে তারা গাড়ি করে নিউইয়র্ক আসেন এবং সন্তানের লাশ গ্রহণ করেন।

অন্যদিকে সাদমান রহমান পুলকের প্রথম নামাজে জানাজা গত ২০ নভেম্বর জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বক্তারা তাদের সন্তানের দিকে নজর দেয়া আহ্বান জানান। জানাজায় বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সাদমানের বন্ধু-বন্ধবরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। জানাজা শেষে তারা সাদমানকে বিশেষ সম্মান জানান। তবে এটি বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যতিক্রমী মনে হয়েছে, যা নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে কমিউনিটিতে। জানা গেছে, সাদমান রহমান দ্বিতীয় জানাজা গত মঙ্গলবার বাদ জোহর বাফেলো জাকারিয়া মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে এবং জানাজা শেষে তাকে বাফেলো মুসলিম গোরস্তানে দাফন করা হবে।

শেয়ার করুন