৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:১৫:৫৯ পূর্বাহ্ন


দেশকে শাবনাজ
দাম্পত্য জীবনে শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস, বোঝাপড়া জরুরি
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-১২-২০২২
দাম্পত্য জীবনে শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস, বোঝাপড়া জরুরি শাবনাজ


অভিনয়ে নেই দুই দশকের বেশি সময় ধরে। তবুও সব সময় গণমাধ্যমের সংস্পর্শে থাকেন শাবনাজ। পুরনো কাজগুলো নিয়ে দর্শক আগ্রহের কারণেই এমনটি হয়। কিন্তু দীর্ঘ চারমাস দেশে না থাকায় সেই যোগাযোগে কিছুটা ভাটা পরেছিল। এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে। স্বাক্ষাতকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: দীর্ঘ চারমাস আপনি সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছিলেন এর কারণ কী?

শাবনাজ: আসলে টানা চারমাস দেশে না থাকায় এমনটি হয়েছে। নাঈমসহ আমাদের পরিবারের চারজনই ভারতে ছিলাম। গত আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতটা সময় টানা আগে কখনো বিদেশে থাকা হয়নি আমাদের। 

প্রশ্ন: এবার ভারত যাওয়ার কারণ কি ছিল? 

শাবনাজ: দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে শান্তি পাচ্ছিলাম না। একে তো করোনা। অন্যদিকে গত বছর মনটাও ভালো ছিল না। এর কারণ ছিল নাঈমের অসুস্থতা। গত বছর নভেম্বরে নাঈমের স্পাইনালে বাইপাস সার্জারি করা হয়, তখন থেকেই মানসিকভাবে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। পরে ঠিকমতো নাঈমের চিকিৎসা হলো। এর পর থেকে একটু চাপমুক্ত সময় পার করতে চাচ্ছিলাম। এ কারণেই যাওয়া। 

প্রশ্ন: নাঈম ভাইয়ের শরীর এখন কেমন?

শাবনাজ: আল্লাহর রহমতে এখন ও ভালো আছে। এবার ভারতে যাওয়ার আগেই ভেবেছিলাম, নাঈমকে সেখানে পুরো চেকআপ করার। নাঈম এই সময় চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে ছিলেন। তাঁর সবকিছু এখন নরমাল আছে। ডাক্তার আমাদের বলে দিয়েছেন, আপাতত নাঈমকে নিয়ে চিন্তা নেই। তাঁর সব ঠিক আছে। 

প্রশ্ন: ভারতে কোথায় ঘুরেছেন? 

শাবনাজ: তাজমহল, জয়পুরের অনেক জায়গায় ঘুরেছি। দুই মেয়ে ছিল আমাদের সঙ্গে। করোনার পর থেকে তারাও তেমন ঘোরার সুযোগ পায়নি। তাদের নিয়ে ঘোরার ইচ্ছা ছিল অনেক দিনের, কিন্তু হয়ে উঠছিল না। সব মিলিয়ে একটু সময় নিয়ে ভারতে থেকেছি। 

প্রশ্ন: সিনেমা পাড়ায় ঘর ভাঙার খবর পাওয়া যায় হরহামেশাই। আপনার এই জায়গায় ব্যতিক্রম। এর মূলমন্ত্র কী?

শাবনাজ: আমাদের দাম্পত্য জীবন আর দশটা সাধারণ মানুষের দাম্পত্য জীবনের মতোই। আমার মনে হয়, দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস, বোঝাপড়া থাকাটা খুব জরুরি। কম-বেশি ঝামেলা বেশিরভাগ সংসারেই থাকে। আমার হয়তো ইলিশ মাছ খেতে ভালো লাগে আর নাঈমের হয়তো রুই মাছ খেতে ভালো লাগে। আমি ইলিশ মাছ খেয়ে যাব আর নাঈম রুই মাছ খেতে পারবে না-এটা হতে পারে না। দুইজনকেই ‘সাক্রিফাইস’ করতে হয়। জীবনে চলার পথে নানা ধরনের খুঁটিনাটি ঝগড়া হবে, মনোমালিন্য হবে। সেই মনোমালিন্য থেকে সম্পর্কে বিচ্ছেদ টানা যাবে না। সংসারের বন্ধন অটুট রাখার জন্য আরেকটি নিয়ামক হলো-সন্তান। বাচ্চার ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে অনেক সংসার টিকে থাকে। সন্তান জন্মের পর বাবা-মার যাবতীয় ফোকাস বাচ্চার উপর চলে যায়। তখন চিন্তা থাকে, কীভাবে তাকে লালন-পালন করব, কীভাবে তাকে শিক্ষা দেব, সুন্দর পরিবেশে মানুষ করবে। এই চিন্তার মাঝে সংসারের বড় বড় ঝামেলাগুলো হারিয়ে যায়।

প্রশ্ন: বিয়ের কয়েক বছর পর দু’জন অভিনয় ছাড়লেন কেন?

শাবনাজ: বিয়ের পর পরই আমাদের দুই মেয়ের জন্ম হয়। বড় মেয়ে নামিরা নাঈম আর ছোট মেয়ে মাহদিয়া নাঈম। দুইজনকে মানুষ করতে গিয়েই আমরা আর সিনেমা করিনি। ওদেরকে ঘিরেই আমাদের পৃথিবীটা গুছিয়ে এনেছিলাম। ওদের জন্য নাঈমও অনেক স্যাক্রিফাইস করেছে। বাচ্চা দুটিকে মানুষ করতে গিয়ে কখন যে চলে যাচ্ছে টেরই পাইনি।

প্রশ্ন: এখনকার চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী

শাবনাজ: আমাদের সিনিয়ররা যখন কাজ করতেন তখনও বলা হতো, ভালো ছবি হয় না। ক্রাইসিসটা সবসময় ছিল। প্রত্যাশাও সবসময়ই ছিল। আজ গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি ভালো করছে বলেই সেখানকার মালিক-শ্রমিকরা চাচ্ছে আরও ভালো করতে। তেমনি চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিও এখন পরিবর্তন হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে। মানুষের রুচিতেও পরিবর্তন এসেছে। আমরা এখন দেশে বসে বলিউড-হলিউডের ছবি দেখি। পুরো আকাশ খোলা; ইন্টারনেটও চলে এসেছে। আমাদের সময়ে বিদেশি চলচ্চিত্রের সঙ্গে দেশিয় চলচ্চিত্রের তুলনা ছিল না। এখন বাইরের চলচ্চিত্রের সঙ্গে তুলনা চলছে। ফলে দর্শকদের রুচি ও প্রত্যাশা পাল্টে গেছে। তাছাড়া আমাদের প্রেক্ষাগৃহের সংকট আছে। দেশে হয়তো ভালো ক্যামেরা আসেনি। আর ক্যামেরা এলেও ব্যবহার করার মতো দক্ষ ক্যামেরাম্যান তৈরি হয়নি।

শেয়ার করুন